• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৩, ২০১৯, ০৮:৪৫ এএম

বড় বন্যার আশঙ্কা

বড় বন্যার আশঙ্কা
নদীর পার্শ্ববর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। ছবিটি হবিগঞ্জ থেকে তোলা।

...........................................

● বন্যার্তদের পাশে থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর 

● তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট স্কুল মাদ্রাসা বীজতলা

● বিপৎসীমার ওপর ১২ পয়েন্টে নদ-নদীর পানি

● দুর্গতরা আশ্রয় নিচ্ছেন উঁচু সড়ক ও বাঁধে

● সব রকম প্রস্তুতি মোকাবেলায় প্রস্তুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়

● রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু

...........................................

অব্যাহত প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সারা দেশে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে বড় বন্যার। ডুবে গেছে শত শত ঘর-বাড়ি ও আবাদি জমি। ভেসে গেছে আমন ধানের বীজতলা। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সাহায্যের হাত নিয়ে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খোলা হয়েছে মনিটরিং ও কন্ট্রোল রুম।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দেশের সকল নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ১৬ জুলাই তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল অব্যাহত থাকে তাহলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

দৈনিক জাগরণ-এর সংবাদদাতারা জানান, গবাদি পশু নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু সড়ক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে চরম অমানবিক পরিস্থিতে পড়েছেন দুর্গতরা। 

বেড়েছে সুরমা, ধরলা ও তিস্তার পানি।লালমনিরহাট জেলার প্রায় সবকটি নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত। বিপদসীমা ছুঁইছুঁই ধরলার পানিও। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি ১৯টি ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। 

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বুধবার (১০ জুলাই) থেকে পানিবন্দি ২৫ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ। ১২টি আশ্রয় শিবিরে উঠেছে তিন শতাধিক পরিবার। বিচ্ছিন্ন দীঘিনালার সাথে রাঙামাটির লংগদুর সড়ক যোগাযোগ।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চরম অবনতি হয়েছে বান্দরবানের পরিস্থিতি। পাহাড় ধসে সাত উপজেলার অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোও বন্ধ রয়েছে।

সুনামগঞ্জে গত পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সুরমা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। আকস্মিক এই বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে প্রায় তিনশ’ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৬টি পয়েন্ট দিয়ে পাড় উপচানো পানি সুনামগঞ্জ শহরে ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলো। কুড়িগ্রামেও বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী চরের নিম্নাঞ্চল।

দ্রুত গতিতে পানি বাড়ার পাশাপাশি তীব্র রূপ নিয়েছে নদ-নদীর ভাঙন। বন্যা মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ এবং পর্যাপ্ত ত্রাণের দাবি জানিয়েছেন দুর্গতরা।

বিপৎসীমার ওপর ১২ পয়েন্টে নদ-নদীর পানি
দেশের ৯৩টি নদ-নদীর পানি ১২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ৯৩টি নদ-নদীর পানি ৭৭টি পয়েন্টে বৃদ্ধি ও ১৪টি পয়েন্টে হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের সিকিম, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশসমূহের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

শুক্রবার (১২ জুলাই) নদ-নদীর পরিস্থিতি সম্পর্কে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পানি পরিস্থিতি একটি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে এবং একটি পয়েন্টের কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। 

দেশের সকল প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্ট, চিলমারি ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্ট, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্ট এবং তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্ট বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী ও সাঙ্গুসহ প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও লালমনিরহাট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

দুর্গতের পাশে থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে।   শুক্রবার (১২ জুলাই) গণভবনে উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যেই তিনি বন্যাপরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন, বন্যাকবলিত জেলাগুলোর সঙ্গে তিনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের একযোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, অতীতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে একযোগে কাজ করার রেকর্ড রয়েছে। এবারও এর ব্যত্যয় হবে না। দলের পক্ষ থেকে সেভাবেই নির্দেশনা রয়েছে।

প্রস্তুত মন্ত্রণালয় 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৬টি নদী এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যাকবলিত জেলাসমূহে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১২ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বন্যা মোকাবেলায় পূর্ব-প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমম্বয় কমিটির বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এসব কথা জানান।

এনামুর রহমান জানান, দেশের ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৬২৮টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারমধ্যে ২৬টি পয়েন্ট অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এরইমধ্যে ৫২১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলায় দুই হাজার প্যাকেট উন্নতমানের শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় মেডিকেল টিম কাজ করছে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। 

জেলা প্রশাসকরা মাঠ পর্যায়ে ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি তদারকি করছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সহায়তা প্রস্তত রাখা হয়েছে। চাহিদা জানানো মাত্রই তা পৌঁছে দেয়া হবে। ডিসি, টিএনও ও জনপ্রতিনিধিরা খোঁজখবর রাখছেন।

কন্ট্রোল রুম চালু
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে (সচিবালয়স্থ ৬নং ভবনের ৫ম তলা) কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।  মন্ত্রণালয়ের ৪২৫ নম্বর কক্ষে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ০২৯৫৭০০২৮। এই কন্ট্রোল রুমে সারাদেশে বন্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। বন্যা সংক্রান্ত তথ্য দেয়ার জন্য সবাইকে কন্ট্রোল রুমের বর্ণিত নম্বরে ফোন করার অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র’ এর টোল ফ্রি ১০৯০ নম্বরে ফোন করার পর ৫ প্রেস করে বন্যার পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে।

দৈনিক জাগরণ-এর প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর—

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ৮ উপজেলার অন্তত ১৯৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬টি উপজেলার ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে। আরও শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। 

ছিলাই তাহিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাদিউজ্জামান জানান, পানি বাড়ার কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে একবারেই কম আসছে। স্কুল এক প্রকার বন্ধই বলা চলে। বড়দল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমার স্কুল একবারেই হাওরের মধ্যে। তাই বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আসছে না। পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ।

তাহিরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে যেসব বিদ্যালয় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে, সে সব বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ দায়িত্বশীল সব দফতরকে অবহিত করা হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে জেলার সদর উপজেলায় ২২টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ
উপজেলায় ৩টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ৫৯টি, তাহিরপুর উপজেলায় ৩০টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২৭টি, দোয়াবাজার উপজেলায় ১৮টি, ছাতক উপজেলায় ১০টি এবং জামালগঞ্জ উপজেলায় ৩০টি বিদ্যালয় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে। 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান জানান, বন্যা আরও অবনতি হলে অন্যান্য বিদ্যালয়েও বন্যা কবলিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৬টি উপজেলার অন্তত ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯টি, বিশ্বমম্ভরপুর উপজেলায় ১৭টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৪টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ২টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১০টি এবং তাহিরপুর উপজেলায় ৮টি বিদ্যালয় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। 

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা পরিস্থিত পর্যবেক্ষণ করছি। 

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সে.মি. ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাতে করে নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার অন্তত  ৩০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, মাছের ঘের, শাকসবজিসহ আমন বীজতলা।

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদি পাড়া, গারুহারা, ভগবতিপুর, কালির আলগা, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চরবাগার কুটি, চর গুজিমারী, বাবুর চর, গাবুরজানসহ ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার বিভিন্ন ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোর ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। 

যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদিয়া পাড়া গ্রামের কালাম আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হু হু করে বাড়ছে। তীরবর্তী ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার চরাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে পড়বে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানায়, গত ৩০ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৫৪
সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী সংবাদদাতা জানান, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার মুহুরি নদীর বেড়িবাঁধের ৯টি স্থানে ভাঙনে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এ ঘটনায় বন্যা দুর্গত মানুষরা গবাদিপশুসহ অনত্র আশ্রয় নিয়েছেন। প্লাবিত হয়েছে দুই উপজেলার অন্তত ২০ গ্রাম। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি। 

মুহুরি নদীর পরশুরাম অংশের চিথলিয়া ইউনিয়নের উত্তর শালধর গ্রামের মহসিন মেম্বার বাড়ি সংলগ্ন, দুর্গাপুর গ্রামের কালাম মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন স্থান, পৌর এলাকার কাপ্তান বাজার সংলগ্ন স্থান, উত্তর ধনিকুণ্ডা বদু মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন ও নোয়াপুর আলত মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

চিথলিয়া ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের বাসিন্দা নিলু মিয়া জানান, গত বছর একপাশ দিয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে এবার অন্যপাশ। এবার তারা আর ত্রাণ নেবেন না। এবার তাদের একমাত্রা দাবি বেড়িবাধের স্থায়ী সমাধান করা। 

উজান থেকে পানি না নামলে শনিবারের (১৩ জুলাই) মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেলুল কাদের। 

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে পর্যান্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব)  জহির উদ্দিন জানান, মুহুরি নদীর পানি বিপদ সীমার ২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানিও কমতে শুরু করবে।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, তিস্তা-ধরলাসহ সব নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে।

শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে তিস্তা ব্যারাজ দোয়ানী পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২২ সে. মি. উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। এতে তিস্তা নদী সংলগ্ন গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। 

নদী তীরবর্তী এলাকার পানিবন্দি মানুষজন পরিবার-পরিজন এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেখা দিয়েছে নানা পানিবাহিত রোগ।

কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজ তলাসহ অনেক ফসলি ক্ষেত তিস্তার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব কয়টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা, চরদহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার-পশ্চিম কাশিরাম, চর বৈইরাতী, নোহালী, শৈলমারী, ভোটমারী, হাজিরহাট, আমিনগঞ্জ, কাঞ্চনশ্বর ও রুদ্ধেশ্বর, আদিতমারী উপজেলার চণ্ডিমারী, দক্ষিণ বালাপাড়া, আরাজি শালপাড়া, চরগোর্দ্ধন ও সদর উপজেলার কালমাটি, খুনিয়াগাছা, রাজপুর, তিস্তা, তাজপুর, গোকুণ্ডা, মোগলহাট, বনগ্রামসহ নদীর তীরবর্তী প্রায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। 

স্থানীয় প্রশাসন ত্রাণ তৎপরতা শুরু করলেও বন্যার্তরা জানিয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র দোয়ানী ডালিয়ার নির্বাহী প্রকোশীলী রবিউল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।

উখিয়া (কক্সবাজার ) সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে আশ্রয়স্থল হারিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা। এরইমধ্যে দুই শিশুসহ তিনজন রোহিঙ্গা মারা গেছে। একই সময়ে উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এক ইমেইল বার্তায় জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম। 

আইওএম এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার তারেক মাহমুদ প্রেরিত প্রতিবেদনে জানান হয়, গত পাঁচ দিনের ভারি বর্ষণ এবং ঝড়ো হাওয়ায় উখিয়া-টেকনাফে  ভূমিধসে ১ হাজার ১৮৬টি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২১৬টি এবং ঝড়ো হাওয়ায় ১ হাজার ৮৪০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। এ কারণে কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ১৫ হাজার ৫৩৪ জন রোহিঙ্গা। ক্যাম্পগুলোতে ৩৯৭টি ভূমি ধসের ঘটনা ঘটেছে এবং ঝড়ো  হাওয়া বয়ে গেছে ৬১ বার।

আইওএম’র মুখপাত্র জর্জ ম্যাকলয়েড বলেছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় আইওএমের ক্যাম্পে থাকা টিমগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রায় ৫,০৭৯ টি প্লাস্টিক ট্রিপল বিতরণ করেছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত পালংখালী ইউনিয়নে একই সময়ে টানা বৃষ্টি, দমকা হাওয়া, ভূমি ধস, জলাবদ্ধতায় দুই হাজার পরিবারের প্রায় ১০ হাজার স্থানীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্থানীয় লোকজনের সামনে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন এনজিও নানা রকমের সহায়তা দিয়ে গেলেও তাদের ভাগ্যে কিছুই জুটছে না বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, করতোয়া ও ঘাঘটসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সেইসাথে নদী ভাঙনের তীব্রতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।

সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর ও নদী তীরবর্তী নিচু এলাকাসহ চরাঞ্চলগুলোতে পানি উঠতে শুরু করেছে। ফলে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত ও অস্থায়ী নৌঘাটগুলো তলিয়ে গেছে। সুন্দরগঞ্জের বেলকা, তারাপুর, হরিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের কিছু গ্রাম ভাঙনের কবলে পরে পানিতে বিলীন গেছে। গাইবান্ধা সদরের কামারজানি ও মোল্লারচর এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, গজারিয়া, উড়িয়া ও ফুলছড়ি সদরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে সেইসাথে ভেঙে যাছে নদীর পাড়। সাঘাটার ভরতখালি, হলদিয়া, ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাওয়ায় ওইসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া ফসলি ক্ষেত তলিয়ে গেছে অনেক এলাকায়।

নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে স্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে গত দু’সপ্তাহে নদী ভাঙনে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর ইউনিয়নের আবাদি জমি, রাস্তাসহ শতাধিক বাড়িঘর এবং দু’শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চণ্ডিপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি গ্রামের ঠাকুরডাঙ্গী গ্রামের রাস্তাটি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা জানান,  কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। তবে খোয়াই নদীর পানি এখনও বিপদ সীমার এক মিটার (১শ’ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ইতোমধ্যে কুশিয়ারা তীরের নিম্নাঞ্চলে বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতভর ও শুক্রবার (১২ জুলাই) সারাদিন ভারি বর্ষণ হওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পানি কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ওই নদীর পাশ্ববর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী বেশ কয়েকটি বাড়িঘরের বাসিন্দারা। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, অনেক স্থানে নদীর তীর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলার দিগলবাক, পার্কুল, আলীপুর, করিমপুর, ইনাতগঞ্জ, কসবা, নতুন কসবা, কাতিয়া, ফেসি, আটগর, মাধবপুর, কারনিছড়, জলালপুর, সৈয়দপুর, ফাইলগাঁও, পুরান আলাকন্দিসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এছাড়া বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলী, সাওদেশ্বরী, ধীতপুর ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর, বদলপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। রাতে বৃষ্টি হলে ওইসব এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে বালুর বস্তা ফেলে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

খোয়াই নদীর পানি এখনও বিপদসীমার এক মিটার (১শ’ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খোয়াই নদীর পানি প্রতিনিয়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাতে ভারতের আসাম-ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টি হলে খোয়াই নদীও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করার শঙ্কা করছেন তারা। তবে এখন পর্যন্ত মাধবপুরের সুনাই নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানেও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, কুশিয়ারা নদীর দুর্বল অংশগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মেরামত কাজ করছেন। খোয়াই নদীতে পানি বাড়লেও শঙ্কার কিছু নেই। কারণ নদীর বাঁধের প্রত্যেকটি দুর্বল ও গতবছরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় বাঁধ উপচে নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামে প্রবেশ করছে পানি। এরইমধ্যে উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক, কসবা, কুমারকাঁদা, ফাদুল্লা,রাধাপুর, জামারগাঁওসহ বেশকিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে। 

পশ্চিম পাহাড়পুর এলাকায় কুশিয়ারা ডাইকটি ঝুকিঁপূর্ণ। যে কোনও মুহূর্তে ওই ডাইক ভেঙে যেতে পারে। ওই ডাইক ভেঙে গেলে নবীগঞ্জের দীঘলবাক ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। পানি দিন দিন বৃদ্ধি হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন ওই এলাকার লোকজন। এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে কুশিয়ারা নদীর ঝুকিঁপূর্ণ ডাই মেরামত করে বন্যার হাত থেকে নবীগঞ্জবাসীকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানানো হয়েছে। 

দীঘলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ এওলা মিয়া জানান, পশ্চিম পাহাড়পুর এলাকায় কুশিয়ারা ডাইকটি ঝুকিঁপূর্ণ। যেকোনও মুহূর্তে ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন হাসান জানান, কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েকটি গ্রামে অল্প পানি প্রবেশ করেছে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে দীঘলবাক এলাকাসহ আশপাশ এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, সদর উপজেলার চররমনী মোহন এলাকায় সাড়ে তিনশ মিটার বেড়িবাঁধ নদীতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বাঁধ নির্মাণের এরইমধ্যে ৬৪ লাখ টাকা জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়েছে। নির্মাণ কাজ শুরু হলেও প্রবল জোয়ার ও বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। 

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রাহেলা বেগম জানান, এ পর্যন্ত চারবার তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙেছে। এখন তিনি বেড়িবাঁধে পাড়ে আশ্রয় নিলেও তার পাশ দিয়েই আবার ভাঙছে নদী।

একই এলাকার ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী ফাহিমা জানান, গত ১৫ দিন আগে মেঘনায় তার ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে পাশের এক বাড়িতে ঘরের চাল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙন অব্যাহত থাকলে এই বর্ষায় বিলীন হয়ে যাবে পূর্ব চররমনী মোহন গ্রাম।  

ইউপি মেম্বার খোরশেদ আলম জানান, বেড়ি বাঁধ ভাঙার কারণে নদীতে জোয়ার আসলেই এলাকা তলিয়ে যায়।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুছা জানান, বাধ নির্মাণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৬৪ লাখ টাকা বরাদ দেয়া হয়েছে।  দু’টি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কাজ করতে পারছে না।

সিলেট প্রতিনিধি জানান, এ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রধান দু’নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সব কটি নদ-নদীরই পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গ্রামে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

এসএমএম

আরও পড়ুন