• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০১৮, ০২:১০ পিএম

’৭১ এ ড. কামালের ভূমিকা

’৭১ এ ড. কামালের ভূমিকা

 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চ লাইটের পরিকল্পনার ছক রচনার জন্য পাকিস্তানি জেনারেলরা সিলেটের এক চা বাগানে  যে বৈঠক করেছিলেন, সেখানে ড. কামালকে দেখা গেছে বলে উল্লেখ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাসিরউদ্দিন ‘যুদ্ধ যুদ্ধে স্বাধীনতা’ নামক মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা তার গ্রন্থে।  এ ছাড়া পাকিস্তান বাহিনীর স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ এর প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল আবু বকর ওসমান মিঠ্ঠা তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আনলাইকলি বিগিনিংস’ এ লিখেছেন, ড. কামালের অনুরোধে তিনি ড. কামালকে ২৮ মার্চ সেনাবাহিনীর ডিভিশনাল সদর দফতরের মেসে প্রহরিসহ নিরাপদে অবস্থান প্রদান করেন। 

আরো আছে।  তিনি ব্যারিস্টার আমিরের গাড়ি থেকে কেটে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থের ১৯ ভলিউমে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়েছে যে, ব্যারিস্টার আমির এবং শহীদ তাজুদ্দিন ড. কামালকে নিয়ে ২৫ মার্চ রাতে গাড়িতে করে পশ্চিম বাংলার উদ্দেশে কুষ্টিয়ার পথে ঢাকা থেকে রওয়ানা হন। যাত্রা শুরুর পরপরই ড. কামাল তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অজুহাতে গাড়ি থেকে নেমে যান এবং শিগগির ফিরে আসবেন বলে যান। ব্যারিস্টার আমির এবং শহীদ তাজুদ্দিন এরপর গাড়ির ভেতরেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু কামাল সাহেব আর ফেরেননি। তাই অবশেষে তারা দু’জনই কুষ্টিয়ার পথে এগোতে থাকেন। এরপর আর ড. কামালের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। 
পরবর্তীতে তিনি অবশ্য বঙ্গবন্ধুর সাথে পাকিস্তান থেকে ফিরে এলে জানা গেল, তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে  পাকিস্তানেই ছিলেন, যে দেশে তার শশুরবাড়ি।  কিন্তু তিনি কীভাবে পাকিস্তান গেলেন, কোথায় ছিলেন, এ প্রশ্নগুলো অন্ধকারেই থেকে গেল। তবে এ প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়া গেছে পাকিস্তান স্পেশাল সার্ভিসের যাকে স্থপতি বলা হয় সেই মেজর জেনারেল আবু বকর ওসমান মিঠ্ঠার লিখিত বইটিতে। 
১৯৭১ এর ২৫ মার্চ গণহত্যার কালরাতের কয়েকদিন পূর্বে জেনারেল ইয়াহিয়া মেজর জেনারেল মিঠ্্ঠাকে ১২ দিনের জন্য বাংলাদেশে পাঠিয়েছিলেন বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য। 

ড. কামাল সম্পর্কে তিনি যা লিখেছেন তা হল, তার বাংলাদেশ ভ্রমনের শেষ দিকে ড. কামালের ভগ্নিপতি আমান(যিনি মেজর মোহাম্মদ কামালের চাচা বা মামা) তাকে ডিনারে আমন্ত্রণ করেন। সেই ডিনারে ড. কামাল, রেহমান সোবহান এবং টুল্লু নামক এক ব্যবসায়ি উপস্থিত ছিলেন। ড. কামাল এবং রেহমান সোবহান জানতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্দেশ পেলে অ্যাকশনে যাবে কি না।  জেনারেল মিঠ্ঠার উত্তর ছিল, সেই পরিস্থিতিতে সৈন্যদের সামনে কোনো বিকল্প থাকবে না। জেনারেলর মিঠ্ঠা আরেক জায়গায় লিখেছেন যে, ১৯৭১ এর ২৮ মার্চ তিনি ড. কামালের ভগ্নিপতি আমানের কাছ থেকে একটি বার্তা পান। যে বার্তায় তিনি বলেছেন যে তিনি(আমান) তার স্ত্রীর ভ্রাতা ড. কামালের কাছ থেকে এই মর্মে বার্তা পেয়েছেন যে ড. কামাল অন্যদের মত ভারতে চলে যাননি। তিনি চাচ্ছেন তাকে যেন নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়। কারণ ড, কামাল তার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। তিনি ভাবছেন অন্যরা তাকে খুন করবে। সেদিনই মিঠঠা  ড. কামালকে ডিভিশনাল সদর দপ্তরের মেস-এ গার্ডের পাহারাসহ নিরাপদে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং পরদিন তাকে পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

জেনালের মিঠ্ঠা আরো লিখেছেন যে ড. কামাল এবং রেহমান সোবহান কারোরই রক্ত ঝরেনি। বরং ড. কামাল তাদের ভয়েই শঙ্কিত ছিলেন, যাদের তিনি শত্রু মনে করেছেন।  শেখ মুজিবুর রহমান যখন খুন হন,  তখন কামাল এবং সোবহান উভয়েই অতীতের অনুশীলনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন। কামাল যুক্তরাজ্যে এবং সোবহান যুক্তরাষ্ট্রে গা ঢাকা দেন।

মেজর জেনারেল মিঠ্ঠা উল্লেখ করেছেন, ড. কামালের ভগ্নিপতি আমান তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আমান ছিলেন মেজর মাহমুদ কামালের চাচা বা মামা, সেই সুবাদেই  আমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল্ যদিও মিঠ্ঠা এই মেজর মাহমুদ কামাল পাকিস্তানি ছিলেন কিনা এ কথা লিখেননি, কিন্তু মিঠ্ঠার লেখার আবহ থেকে বোঝা যায় তিনি পাকিস্তানিই ছিলেন।
 
এখানে আরো একটি কথা উল্লেখ করা দরকার।  সেটি হল, ড. কামালের স্ত্রী পাকিস্তানি, অর্থাৎ তার শশুরবাড়ি পাকিস্তানে। বহু বছর বাংলা ভাষায় অনুশীলন নেওয়ার পরও ড. কামাল  ভালো করে বাংলা পড়তে বা লিখতে পারেন না। সোজা কথায় তাকে বাঙালি বলা যায় কি? 

 


লেখক: সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি