• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১, ২০১৯, ০৯:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১, ২০১৯, ১০:১২ পিএম

‘জামিনে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান খালেদা জিয়া’

‘জামিনে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান খালেদা জিয়া’

জামিনে মুক্তি পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার কেবিনে সাক্ষাৎ করে বাইরে এসে এ কথা জানিয়েছেন দলটির সংসদ সদস্য মো. হারুন অর রশীদ। 

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও চলমান সংসদের সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ও মো. আমিনুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে দেখে আসার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ

বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপি দলীয় তিন এমপি সাক্ষাৎ করে  আসার পর সাংবাদিকদের কাছে নেত্রীর শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে হারুনুর রশীদ বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) যে সমস্ত অসুখ-বিসুখ রয়েছে এগুলোর জন্য উনার অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার। বিদেশে তার চিকিৎসা দরকার। উনি যেসব অসুখে জর্জরিত সেগুলোর জন্য দরকার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ও দরকার বিশেষায়িত হাসপাতাল। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, বাস্তবিকই উনার জামিন পাওয়ার যে নৈতিক অধিকার এই জামিনের অধিকার থেকে তাকে যেন বঞ্চিত করা না হয়। 

খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান কি না- প্রশ্ন করা হলে এমপি হারুন বলেন, উনি চিকিৎসার সুযোগ পেলে তো অবশ্যই বিদেশ যাবেন। উনি আজকে জামিন পেলে কালকেই বিদেশ যাবেন এবং উনি যদি আজকে জামিন পান,  প্রথম অগ্রাধিকার হবে উনার চিকিৎসা।

হারুণ আরও বলেন, তাহলে কালকেই দেখা যাবে যে, উনি চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবেন। যেরকম তার শারীরিক কন্ডিশন তার চিকিৎসা বাংলাদেশে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেই …।  ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) অসুস্থ হয়েছিলেন, তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কেন এই চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এটা সারাদেশের মানুষ জানতে চায়।

বিকাল সাড়ে ৪টায় একাদশ সংসদের তিন সংসদ সদস্য ব্রাক্ষণবাড়ীয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের হারুনুর রশীদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের আমিনুল ইসলাম বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে ৬ তলায় যান যেখানে একটি কেবিনে খালেদা জিয়া রয়েছেন। তারা সেখানে দলীয় প্রধানের কাছে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। 

হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা বিএনপির তিন জন এমপি আজকে আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য হাসপাতালে  এসেছিলাম। খুব বেদনাদায়ক, খু্বই পীড়াদায়ক এবং কষ্টদায়ক- এটি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। উনার এই বয়সে ! আমি মনে করি যে, এটা সরকারের একটা  চরম জুলুমের বহিঃপ্রকাশ। যা  ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

তিনি বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) চরম অসুস্থ।  উনার হাত দিয়ে নিজের খাওয়াটাও নিজে খেতে পারেন না, নিজের কাপড়ও নিজে পরতে পারেন না। এই অবস্থায় উনাকে বন্দি রাখা- এটা কত বড় অমানবিক। উনি শুধু দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। আমাদের চোখে আমরা পানি ধরে রাখতে পারি নাই।

অশ্রুসজল কণ্ঠে হারুন বলেন, উনি হাত সোজা করতে পারেন না, উনার হাত কাঁপে। পোষাকটাও উনার সঙ্গে যারা আছে তাদের পরিয়ে দিতে হয়, নিজের পরিমাণ মতো খাওয়াটাও নিজে খেতে পারেন না। এরকম একটা অবস্থা। আমি বলব যে, এটা তার প্রতি জুলুম করা হচ্ছে। শুধু সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলছি, আজকে এই জুলুম থেকে তাকে যেন আল্লাহ পাক মুক্ত করেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
 
হারুণ আরও বলেন, আমি সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করব যে, বাংলাদেশে ক্যাসিনোর অভিযানের মধ্য দিয়ে আজকে যে চিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, আজকে আমাদের সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রীকে সামান্য ২ কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে জামিন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। এটি কত বড় অন্যায় জুলুম।’

হারুণ গণমাধ্যমের কাছে যখন এসব কথা বলছিলেন তখন তার সঙ্গে থাকা অপর দুই সংসদ সদস্যর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।

সাংগঠনিক বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, উনি সংগঠনের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। যেহেতু উনার শারীরিক যে অবস্থা ...। উনাকে আমরা বলেছি যে, গত এক মাসে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশগুলো হয়েছে সরকারের বাধা-বিপত্তির পরেও। উনি শুধু বললেন, তোমরা সবাইকে নিয়ে দেখে-শুনে একসঙ্গে থাকো। 

সংসদে যোগদান নিয়ে দলের ভেতরে বিভক্তি থাকলেও আপনারা আপনাদের নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি সামনে রেখেই সংসদে গেছেন- এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি বা কোনো বার্তা নিয়ে আপনারা এসেছেন কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘না, আমরা সংসদে যোগদান করার পরে সংসদে আমরা যে কজন কথা বলার চেষ্টা করেছি তার মধ্যে নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি অন্যতম ছিলে। আমি দলনেতা হিসেবে এরইমধ্যে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দুএক জায়গায় কথাও বলেছি, তার মুক্তির দাবিও জানিয়েছি। এই ব্যাপারে উনারা ‘দেখা যাক’, ‘এটা আইনি ব্যাপার’ এসব বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।’

সরকারের তরফ থেকে প্যারেলের কোনো প্রস্তাবনা আছে কি না প্রশ্ন করা হলে হারুণ বলেন,  না। এই ধরনের কোনো প্রস্তাবনা নেই। প্যারেলের বিষয়টা আসবে কেন? উনি তো জামিন পাওয়ার যোগ্য।

একাদশ নির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশীদ ও আমিনুল ইসলামসহ ৬ জন নির্বাচিত হয়ে সংসদে যোগ দেন দলের সিদ্ধান্তে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় প্রধানের সঙ্গে এই এই প্রথম সাক্ষাৎ করলেন এসব এমপি। তিন সংসদ সদস্য তাদের দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে  ফুলের তোড়া ও ফলমূলের একটি ঝুড়ি নিয়ে যান।

টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন