• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০১৯, ১০:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২২, ২০১৯, ১০:০৪ পিএম

কৃষক লীগে যোগ্য নেতৃত্ব চান পদপ্রত্যাশীরা

কৃষক লীগে যোগ্য নেতৃত্ব চান পদপ্রত্যাশীরা

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলন আগামী ৬ নভেম্বর। প্রায় ৮ বছর পর হতে যাওয়া এই সম্মেলনকে ঘিরে বেশ সক্রিয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে বিগত কমিটিতে সংগঠনের যে ভঙ্গদশা ছিল, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তা থেকে বেরিয়ে এসে কৃষক লীগ শক্তিশালী হবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের আরও প্রত্যাশা, আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। যার মধ্য দিয়ে সত্যিকারে কৃষকের জন্য কাজ করবে কৃষক লীগ। এছাড়া স্বচ্ছ, সৎ ও  ক্লিন ইমেজের নেতারা নেতৃত্বে উঠে আসবে- এমনটাই আশা তাদের। 

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের মধ্যে কৃষক লীগ গুরুত্ববহ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে সংগঠনটির তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না। কৃষক লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। ১৯৭২ সালে কৃষকদের স্বার্থ ও দেখভালের জন্য এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা হয়। দলীয় দিবস পালন ভিত্তিক কিছু কর্মসূচি থাকলেও কৃষকদের পাশে থেকে জোরালো কোনো কর্মসূচি দিতে দেখা যায়নি এই সংগঠনটিকে।

কৃষক লীগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। ৩ বছরের কমিটি চলে প্রায় প্রায় ৮ বছর। শুধু কেন্দ্রীয় কমিটি নয়, জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোও বিভিন্ন কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে। এসব কারণে কৃষক লীগের কর্মকাণ্ডেও অনেকটা ঝিমুনি ভাব এসেছে। এজন্য সারা দেশে ধানের দাম কম হওয়ার পরও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই কৃষক লীগের। সাংগঠনিক গতিহীনতার জন্যই এমনটা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এক কেন্দ্রীয় নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, তবে আমরা সংগঠনের অনেক কাজ করেছি। বর্তমান কমিটির আমলে সংগঠন গতি পায়নি, এটা সত্য। বর্তমান কমিটির শীর্ষ ২ নেতৃত্বের কারণে কিছুটা এমন হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।  

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, কৃষক লীগে প্রায় ৩৫ জনের মতো আইনজীবী রয়েছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা আইনজীবী হওয়ার কারণেই সংগঠনে আইনজীবীদের একটি বলয় তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। 
 
কৃষক লীগ সূত্র জানায়, কৃষক লীগের বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা আগামী কমিটিতেও নেতৃত্বে আসতে চান। তবে সংগঠনকে সচল করতে না পারার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ জন্য তাদের বিদায় নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন ওমর ফারুক, যিনি বর্তমান কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছে। তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। এর আগে তিনি কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, কেন্দ্রীয় সদস্য ও কুমিল্লা জেলা কৃষক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া রয়েছে কৃষক লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি শরীফ আশরাফ হোসেনের নাম। তিনি এর আগেও সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশাও বেশ আলোচনায় রয়েছেন। তিনি এর আগে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম সংগঠনের সভাপতি পদপ্রার্থী বলে জানা গেছে। তিনি সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
  
জানা গেছে, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনে বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু। ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বিটু ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ওই সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন। সেসময় আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল। সেই বিএনপি-জামায়ত জোট সরকারের নির্যাতনের শিকারও হয়েছিলেন তিনি। রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে তিনি গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন বিটু। এর পর তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন এলাকার উন্নয়নে বেশ কাজ করেছেন। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবেই সংগঠনের সকলের কাছে পরিচিত তিনি। এ ছাড়াও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন বিটু। তার নিজ এলাকায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগসহ দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলে জনভিত্তি গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন এমন পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে আবুল হোসেন, সমীর চন্দ্র, কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট, কাজী জসিম, আতিকুল হক আতিক, আসাদুজ্জামান বিপ্লবের নাম শোনা যাচ্ছে। 

জানা গেছে, সমীর চন্দ্র এর আগে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কৃষি উপকরণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে কৃষক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট। তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিপ্লব ছিলেন কৃষক লীগের সহ-দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে। এছাড়া তিনি ময়মনসিংহ কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলে নির্বাচিত জিএস, আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন এর আগে কৃষক লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী জসিম উদ্দিন ছিলেন কৃষক লীগের পানি ও বিদ্যুৎ বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য। ছাত্রজীবনে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আগামী সম্মেলনে কেমন নেতৃত্ব চান জানতে চাইলে কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু বলেন, আমরা চাই, আমাদের নেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন নেতৃত্ব চান তেমন। স্বচ্ছ, সৎ ও যোগ্য কৃষক নেতা। যারা ক্লিন ইমেজের নেতা হবে। তবে আমাদের নেত্রী যাকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বানাবেন তাদের মাধ্যমেই আমরা সারা বাংলাদেশে কৃষকদের সংগঠিত করতে কাজ করে যাব।  

কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুইট বলেন, সম্মেলন হলে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসবে এমনটাই স্বাভাবিক। তা না হলে সম্মেলনের তো কোনো প্রয়োজন নেই। তবে আমাদের নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন সেটাই চূড়ান্ত। এ জন্য নেতৃত্বে কারা আসবেন এটা নেত্রীর একক সিদ্ধান্ত।  

এএইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন