• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৫, ২০১৯, ০৯:৩৩ এএম

১৪ দলে থাকলেও নৌকায় আর চড়বে না ওয়ার্কার্স পার্টি!

১৪ দলে থাকলেও নৌকায় আর চড়বে না ওয়ার্কার্স  পার্টি!

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে থাকলেও অবশেষে তৃণমূলের চাপে নৌকা প্রতীকে ভোট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশেদ খান মেননের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। দলের দশম কংগ্রেসের তৃতীয় দিন সোমবার (৪ নভেম্বর) কাউন্সিলরদের চাপে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় দলটি। গত প্রায় মাস খানেক সময় ধরে সরকারের চলমান ক্যাসিনো-জুয়া ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে রাজনৈতিক মহলে বেশ বেকায়দায় পরে দলটি। কমিউনিস্ট আদর্শের দোহাই দিয়ে রাজনীতি, দলের নেতৃত্ব নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠন, এমনকী দলের নিজস্বতা পরিত্যাগ করে ক্ষমতাসীনদের দলীয় প্রতীকে ভোট করে তারা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে- এ অভিযোগ করে এরইমধ্যে পার্টি থেকে বের হয়ে গেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাসসহ চার পলিটব্যুরোর সদস্য। এ ছাড়াও, একই অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় কমিটির চার সদস্য দল ছেড়েছেন। তারা চলতি মাসের ২৯ তারিখে যশোরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল (জাতীয় কংগ্রেস) করারও ঘোষণা দিয়েছেন। 

নৌকা প্রতীক বর্জনের ঘোষণা দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব জানিয়েছে, তৃণমূল পর্যায়ে ওয়ার্কার্স পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও বিস্তৃত করার জন্যই মূলত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এদিকে, পার্টির বর্তমান সভাপতি রাশেদ খান মেনন তার পদে আবারও বহাল থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। 

ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণের বিকল্প শক্তির ভিত গড়ে তোলা, সংসদে প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করা এবং সেই লক্ষ্যে পার্টির নির্বাচনি প্রতীক হাতুড়ী নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ১০ম কংগ্রসের ৩য় দিনে। সোমবার (৪ নভেম্বর) দলীয় প্রেস ব্রিফিংয়ে পার্টির পলিটব্যুরোর অন্যতম সদস্য কমরেড নুর আহমদ বকুল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদকে প্রতিহত করতে ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ২০০৮ সালে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়। এর পর থেকেই এ জোট নানা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১১ বছর পাড়ি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, সংবিধানের চার মূলনীতি ফিরিয়ে আনা, বিশেষ করে ২০১৩ সালে হেফাজতের অভ্যুত্থানের অপেচেষ্টা এবং তিন মাসব্যাপী আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এ জোট অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই আগুন সন্ত্রাস সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করায় ১৪ দলীয় জোট এখনও ক্ষমতায়। ১৪ দলীয় জোটের এই রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিতা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাই ওয়াকার্স পার্টি এ জোটে আছে এবং থাকবে। 

পলিটব্যুরোর সদস্য বকুল আরও বলেন, ১৪ দলীয় জোট তৃণমূলে রাজনৈতিক শক্তি পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। মূলত কেন্দ্র ছাড়া ১৪ দলীয় জোট কার্যকর নয়। তাই তৃণমূলে এ জোটকে কার্যকর ও পার্টিকেই মূল ভিত্তি ধরে এবং সাংগঠনিক কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করতে আগামীতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক হাতুড়ী মার্কা নিয়ে ভোট করবে ওয়ার্কার্স পার্টি। কোনো নির্বাচনেই নৌকা মার্কায় ভোট করবে না ওয়ার্কার্স পার্টি।

সম্প্রতি সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্কার্স পার্টিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উপদেশ দিয়েছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নৌকা প্রতীক বর্জন করা- এটা ওয়ার্কার্স পার্টির একক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তাই আপনারা কারো বক্তব্য কাট-পেস্ট করে মিসকোট করবেন না।
   
ওয়ার্কার্স পার্টি কি ১৪ দলীয় জোট ছাড়ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই পলিটব্যুরোর সদস্য বলেন, জোট ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। ১০ম কংগ্রেসে সারাদেশের ৫৭টি জেলা থেকে আসা প্রতিনিধির সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তই পার্টির সিদ্ধান্ত। প্রতিনিধিদের প্রস্তাবেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত আসে।   

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড দীপঙ্কর সাহা দিপু, কমরেড মোস্তফা আলমগীর রতন ও পার্টি স্কুলের সদস্য কমরেড নাসিমুল আহসান দিপু।

দলীয় সূত্র জানায়, পুনরায় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হচ্ছেন রাশেদ খান মেনন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে আসছে পরিবর্তন। মেনন এখন পর্যন্ত চার মেয়াদে এ দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এবারের কংগ্রেসে পঞ্চম বারের মতো তিনি সভাপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। 

সূত্র আরও জানায়, মঙ্গলবার পার্টির ১০ম কংগ্রেসের শেষ দিনে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পদকের নাম ঘোষণা আসবে। বর্তমানে এ পদে আছেন ফজলে হোসেন বাদশা (এমপি)। দলের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক দৈনিক জাগরণকে বলেন, পার্টির সভাপতিসহ নেতৃত্ব নির্বাচন করবে কংগ্রেস। কে সভাপতি হবেন, কে সাধারণ সম্পাদক হবেন সেটা কংগ্রেসের দায়িত্ব। আমি সভাপতি প্রার্থী না। এটা নিয়ে আমি ভাবিও না। আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, সেটাও বলছি না। কংগ্রেস যাকে নির্বাচিত করবে তিনিই এ পদে অধিষ্ঠিত হবেন। 

উল্লেখ্য, গত শনিবার থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির চার দিনব্যাপী কংগ্রেস শুরু হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার কংগ্রেসের শেষ দিনে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলটির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হবে। 

ওয়ার্কার্স পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস আগে এবারের কংগ্রেসে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে দলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাকে পার্টির সভাপতি করার জন্য একটি অংশ দাঁড়িয়ে যায়। এ নিয়ে পার্টির মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনাও চলছিল। তবে আগামীকাল এ আলোচনার সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। 

এছাড়া পার্টির নেতৃত্বের একটি অংশ, বিশেষ করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস প্রাথমিক সদস্য পদ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে নুরুল হাসান, ইকবাল কবির জাহিদসহ কেন্দ্রীয় কমিটির মোট ৬ নেতা কংগ্রেস বর্জন করেছেন। তারা পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও কমিউনিস্ট আদর্শ থেকে বিচ্যুতির অভিযোগ তুলেছেন। তাদেরও দাবি ছিল- নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বর্জন করার। সম্প্রতি বিদ্রোহী এ নেতারা চলতি মাসে যশোরে আলাদা একটি সম্মেলনের ঘোষণা করেছেন। 

উল্লেখ্য, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসে একটি কমিটি উপস্থাপন করা হয়। এ কমিটিতে প্রত্যেকেই সদস্য থাকেন। এর বাইরে কেউ থাকলে ও নাম প্রস্তাব হলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়। আর কোনো প্রার্থী না থাকলে প্রস্তাবিত কমিটিই পাস হয়। পরে কমিটির সদস্যরা সভার মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর সদস্য নির্বাচন করেন।

রাশেদ খান মেনন ২০০০ সাল থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি পদে রয়েছেন। এবার সভাপতি হলে সব মিলিয়ে পঞ্চম বারের মতো তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে ১৯৯২ সালে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টি এক হওয়ার পর অমল সেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। তখন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মেনন। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদেই ছিলেন।  

টিএস/ এফসি

আরও পড়ুন