• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৯:২৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৯:২৫ এএম

ফিরে দেখা ৯০( দুই)

বহির্বিশ্বের সাথে সবধরনের যোগাযোগ বিছিন্ন 

বহির্বিশ্বের সাথে সবধরনের যোগাযোগ বিছিন্ন 

● কারফিউ  ভেঙে জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ

● ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের লাঠি মিছিল

● শহরজুড়ে শুধুই গুলির শব্দ

● সারা দেশে ৫০ জন নিহত

সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণআন্দোলন প্রতিহত করতে ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর (মঙ্গলবার) রাতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করায় বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের প্রায় সব ধরনের যোগাযোগই বিছিন্ন করা হয়। ফলে পরদিন বুধবার (২৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব থেকে বিছিন্ন হয়ে পরে। এ কারণে বিদেশি গণমাধ্যমগুলো এদিন বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কোনও সংবাদ প্রকাশ করতে পারেনি।

এদিকে জরুরি অবস্থা জারি করার আগেই ৩ জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে, তারা জনগণকে আহ্বান জানান, যদি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় তবে যেন তার পর দিন থেকেই জনগণ অদির্নিষ্টকালের জন্য হরতাল শুরু করে। এ কারণে এদিন (২৮ নভেম্বর) সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। অন্যদিকে জরুরি অবস্থা লঙ্ঘন করে এদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। এ বিক্ষোভ মিছিলে লাঠি হাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রী অংশ নেয়।বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনার চত্বরে দুটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন ভোরে বিক্ষুব্ধ জনতা মালিবাগে রেলপথ অবরোধ। লাইনে গাড়ি রেখে ড্রাইভার পালিয়ে যায়। সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, নর্থসাউথ রোড, রামপুরা, মালিবাগ, পল্টন এলাকায় কারফিউ ভঙ করে হাজার হাজার জনতার মিছিল করে। মালিবাগে গুলিতে ২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদে পতন না হওয়া পর্যন্ত ২৭ নভেম্বর থেকে সাংবাদিকরা ধর্মঘট পালন করার এদিন কোনও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি। সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের প্রতি বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ সমর্থন জানায়।

বাংলাদেশে ২৮ নভেম্বরের অবস্থা বিষয়ে ২৯ নভেম্বর ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়- ‘‘বাংলাদেশ বেতার বলেছে রাষ্ট্রপতি এরশাদ মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যাবেলায় জরুরি অবস্থা জারি করার পর বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। টেলিফোন ও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হবার আগে রাজধানী ঢাকা থেকে পাওয়া সর্বশেষ খবরে বলা হয়, সৈন্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে।

বাংলাদেশের প্রধান দুই বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন মঙ্গলবার দিবাশেষে (২৭ নভেম্বর দিন শেষে) দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা বলবৎ করার পর নিরাপত্তার বাহিনীর হাতে বিপুল সংখ্যক সরকারবিরোধী প্রতিবাদী প্রাণ হারিয়েছেন এবং অন্যান্য সহস্রাধিক লোক জখম হয়েছেন। ভয়েস অব আমেরিকার দক্ষিণ এশীয় সংবাদদাতা পিটার হাইম নতুন দিল্লি থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে লিখেছেন- ‘‘সরকারের আরোপিত অত্যন্ত কঠোর সেন্সরশিপ নিয়ম-কানুনের দরুন বাংলাদেশে ঠিক কি ঘটছে তা নিরুপণ করা প্রয়াস ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকা বিরোধীপক্ষীয় সূত্রসমূহ থেকে বলা হয়েছে গতকালের (২৮ নভেম্বর) বুধবারের প্রচণ্ড সংঘর্ষ ও হানাহানির পর আজ বৃস্পতিবারও (২৯ নভেম্বর) বিক্ষোভকারী প্রতিবাদী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত সংঘাত হয়েছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা তাদের খবরে রাজধানীর অধিবাসীদের যে সব উক্তি উদ্ধৃত করেছেন সে সব উক্তিতে বলা হয়েছে জন অধ্যুষিত একটি এলাকায়  গুলীর শোনা যায়। সৈন্যরা প্রতিবাদীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এখন দুই বিরোধী দলীয় নেত্রী আজ বৃস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) যে সব বিবৃতি জারি করেন তাতে আগের দিনের (২৮ নভেম্বর) সংঘাতে কিছু সংখ্যক লোকজনের হতাহতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাদেশে পৃথক পৃথক চারটি শহরে ৫০ জন প্রতিবাদী প্রাণ হারিয়েছেন আর জখম হয়েছেন এক হাজার লোক। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, আহত লোকের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি এবং সেই সঙ্গে অন্যান্য তিন হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) যখন কিনা প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেন তখন থেকে অত্যন্ত কড়া যে সব সেন্সরশিপ নিয়ম-কানুন বলবৎ করা হয় তাতে করে বাংলাদেশ থেকে খবরা-খবর সংগ্রহ করা খুবই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সব রকম খবরা-খবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবশ্য করণীয়ভাবে অনুমোদন করিয়ে নিতে হচ্ছে। আর তারা আবার দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও বিক্ষোভের উল্লেখ করছে এ রকম অংশগুলো কেটে বাদ দিয়ে দেন।  

জেডএইচ/এসএমএম

আরও পড়ুন