• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৯:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯, ০৯:০২ পিএম

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রদবদলের পরদিনই জবিতে চাঁদাবাজি

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রদবদলের পরদিনই জবিতে চাঁদাবাজি

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষপদে রদবদলের এক দিন পরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামনের ফাঁকা জায়গার (টিএসসি নামে পরিচিত) দোকান থেকে চাঁদাবাজি করছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল-রাসেলের নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার টিএসসির দোকানীদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। এসময় চাঁদার টাকা কম দেয়ায় খিচুড়ির পাতিল ছিনতাই ও দোকানীদের পিটিয়ে আহত করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছিল। দোকান বসানোর সময় প্রতি দোকান থেকে ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম (অফেরতযোগ্য) নেয়া হয়েছে বলে জানান দোকানীরা।

জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি রদবদলের রাতে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন এবং পরদিন মিষ্টি খাওয়ার নাম করে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলামের একান্ত আস্থাভাজন কর্মী অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের মাসুম বিল্লাহ, ৭ম ব্যাচের আলমগীর মুন্সী, বাংলা বিভাগ ৭ম ব্যাচের সাইফ আহমেদ লিখন, ম্যানেজমেন্ট ১০ম ব্যাচের সামিউল তাছাহাব শিশির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের একনিষ্ঠ কর্মী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৭ম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইংরেজি বিভাগ ৯ম ব্যাচের কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১২-১৫ জন গিয়ে দোকানীদের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দোকানীরা চাঁদা কম দেয়ায় এসময় তাদের মারধর করে। এক খিচুড়ি দোকানীর পাতিল ছিনতাই করে নিয়ে আসে। এরপর তারা ক্যাশ থেকে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়। এর প্রতিবাদে দোকানীরা ধর্মঘট ডেকেছেন। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানী বলেন, রোববার সন্ধ্যায় মাছুম, মামুন, আলমগীর, লিখন, শিশির, কামরুলসহ ১২-১৫ জন টিএসসিতে এসে প্রতি দোকান থেকে ২০ হাজার করে ও সিংগারা-চমুচার দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকা তাৎক্ষণিক চাঁদা দাবি করে। এসময় দোকানীরা এত টাকা দিতে পারবে না বলে জানালে দোকানদার ইমনকে পাইপ দিয়ে মারধর শুরু করে। তাকে বাঁচাতে এলে আরো দুই দোকানিকে মারধর করে তারা। এরপর দোকানের ক্যাশ হাতিয়ে সব দোকান থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও সিগারেটের প্যাকেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এক খিচুড়ির দোকানের ক্যাশে টাকা না থাকায় খিচুড়ির পাতিল ছিনতাই করে নিয়ে আসে। পাশের বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশের পাশাপাশি ৬ হাজার টাকা বিকাশ করে নিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিএসসিতে কমপক্ষে ৯টি চায়ের দোকান, খিচুরির দোকান ৪টি, ১টি সমুচা-সিংগাড়ার দোকান, ১টি শুকনো খাবারের দোকান, ১টি শরবতের দোকান ও ১টি বিকাশ-ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকান। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে মূল ফটকের পাশে সকাল থেকেই বসে বেশ কয়েকটি ঝালমুড়ি, চটপটি ও হালিমের দোকান। চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা হিসেবে মাসে ৪০ হাজার ৫শ, সমুচার দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ হিসেবে মাসে ১৫ হাজার, খিচুরির দোকান থেকে প্রতিদিন ৪০০ হিসেবে ৪৮ হাজার ও ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে মাসিক ৩ হাজার টাকা চাঁদা তুলে থাকে। এছাড়া মূল ফটকের সামনের দোকান থেকেও নেয়া হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলে আসছিল জবি ছাত্রলীগের নেতারা।

জবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথমে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর বলেন, টিএসসিতে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি এখন জেনেছি, খোঁজ নিয়ে দেখব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, র‌্যাব ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চাঁদাবাজদের একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করছি। খুব শিগগিরই আমরা এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তও নেব। এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা দরকার।

সূত্রাপুর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, টিএসসিতে চাঁদাবাজির বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। চাঁদাবাজির বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স রয়েছি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

এফসি

আরও পড়ুন