• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, ০৭:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৩, ২০১৯, ০৭:৫০ পিএম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রচারণার অভাবে আলোর মুখ দেখেনি ডে-কেয়ার সেন্টার

প্রচারণার অভাবে আলোর মুখ দেখেনি ডে-কেয়ার সেন্টার

চারুকলার শিক্ষার্থী সোমা প্রতিদিন সকালে ভার্সিটির বাসে করে আসেন আদাবর থেকে। সঙ্গে থাকে দেড় বছর বয়সী একমাত্র পুত্রসন্তান তাসফিন। কয়েক মাস আগেও সন্তানকে কমনরুমে রেখে ক্লাস করতেন। ক্লাসের ফাঁকে এসে বাচ্চার দেখাশোনা করতেন। কিন্তু কমনরুমে তেমন পরিবেশ না থাকায় মাঝে মধ্যেই ক্লাস বাদ দিয়ে বাসাতেই বাচ্চাকে দেখাশোনা করতে হতো।

সংবাদমাধ্যমে জানতে পারেন জবির ডে-কেয়ার সেন্টারের কথা। তারপর খোঁজখবর নিয়ে বাচ্চাকে ভর্তি করেন ডে-কেয়ার সেন্টারে। এখন থেকে নির্বিঘ্নে ক্লাস করেন তিনি। ক্লাসের ফাঁকে এসে খানিক সময় নিয়ে তাসফিনকে খাইয়ে যান। ক্লাস শেষ করে ফের ভার্সিটির বাস ধরেন তিনি। এভাবেই ডে কেয়ার সেন্টার সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোমা।

তিনি বলেন, তার মতো আরও অনেক নারী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র জানার অভাবে কমনরুমে বাচ্চাদের রেখে ক্লাস করেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডে-কেয়ার সেন্টার নিয়ে প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবই দায়ী বলে মনে করেন তিনি।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেও জন্য গত ৭ মে ২০১৮ জবি ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ডে-কেয়ার সেন্টারটি উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তার কিছুদিন পরেই ডে-কেয়ার সেন্টারে শিক্ষার্থীদের সন্তান ভর্তিও ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীরা ছুটির দিন ব্যতীত অন্যান্য দিন তাদের সন্তানদের ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখতে পারে।

সেন্টারটিতে শিশুদের জন্য থাকা, খাওয়া, ঘুমানো, প্রাথমিক চিকিৎসা, খেলাধুলা, বিনোদন এবং প্রি-স্কুল সুবিধাসহ সব অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ১ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২ থেকে ৫ বছরের শিশুদের জন্য মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা সার্ভিস চার্জ দেয়ার সাপেক্ষে ডে-কেয়ার সেন্টারের সেবা গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের অভিভাবকদের ক্ষেত্রে মাসিক ৩ হাজার টাকা সার্ভিস চার্জ দিলে ডে-কেয়ার সেন্টারটির সেবা গ্রহণের সুযোগ আছে। ডে-কেয়ার সেন্টারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেন্টারটিতে ৩ জন স্টাফ বাচ্চাদের যত্নসহকারে দেখাশোনা করছেন। সেন্টারের ৮টি কক্ষে বাচ্চাদের খাওয়া, ঘুমানো, খেলাধুলা, বিনোদন এবং প্রি-স্কুলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

সেন্টারটির সুপারভাইজার শাকিলা জামান বলেন, সেন্টারে ২২ জন রেজিস্ট্রার্ড থাকলেও নিয়মিত ১০-১২জন অভিভাবক তাদের বাচ্চদের এখানে দিয়ে যান। বেশিরভাগ অভিভাবক কাজর ফাঁকে তাদের বাচ্চদের দেখতে আসেন। এতগুলো বাচ্চা দেখাশোনা করার জন্য মাত্র ৩ জন স্টাফ অপর্যাপ্ত এবং ছোট বাচ্চাদের দেখতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান তিনি। 

খেলনার অপর্যাপ্ততার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, একই ধরণের খেলনা একাধিক শিশু পছন্দ কওে বিধায় একজন খেলতে পারলেও অন্য জনকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখা যায়। তখন খুব সাবধানতার সঙ্গে পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে আনতে হয়। এছাড়াও গুটি কয়েক অভিভাবকের রূঢ় আচরণে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যান্য অভিবাবকরা বলেন, ডে-কেয়ার সেন্টারের স্টাফরা যথেষ্ট আন্তরিক। বাচ্চাদের খুবই যত্নসহকারে দেখাশোনা করেন তারা। বাচ্চাদের কোন সমস্যা দেখা দিলে স্টাফরা সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিয়ে তাদেরকে অবগত করেন। সেন্টারটি নিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরেছেন তারা। এর মধ্যে, স্টাফ সল্পতা, অপর্যাপ্ত খেলনার সরঞ্জাম, বাচ্চাদের বয়স ভিত্তিক পৃথকরুম সংকট এবং ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত বিছনা না থাকা অন্যতম। এছাড়াও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন সার্ভিস চার্জ বেশি বলে অভিযোগ করেন তারা।

এ সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডে-কেয়ার সেন্টারের আহ্বায়ক ড. আবদুস সামাদ বলেন, প্রথমদিকে নিজস্ব আয় দিয়ে সেন্টারটি চলার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কিছু আর্থিক অনুদান দিয়েছে যাতে করে সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠানটি চলতে পারে। আমরা ইউজিসি’র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি বাৎসরিক নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক বরাদ্দ পাওয়ার জন্য। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বানরের উৎপাত থেকে শিশুদের রক্ষার্থে নেট দিয়ে বিল্ডিংয়ের জানালা ঘিরে দেয়া হবে। শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খেলনার সরঞ্জামাদি ক্রয় প্রক্রীয়াধীন।

প্রচারণার ব্যাপারে তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে লিখিত নোটিশ দেয়া হবে। এছাড়া খুব শীঘ্রই পুরো ডে-কেয়ার সেন্টারটি সংস্কার করা হবে।

টিএফ