• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০১৯, ০৯:৫০ এএম

দূষণ আর দখলে মরতে বসেছে ছোট যমুনা নদী

দূষণ আর দখলে মরতে বসেছে ছোট যমুনা নদী
দূষণ আর দখলে মরতে বসেছে নওগাঁর ছোট যমুনা নদী। ছবি- জাগরণ

 

নওগাঁ জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে ৬টি নদী। যার মধ্যে- ছোট যমুনা নদী, পূর্ণভবা নদী, ফক্কিন্নী নদী, তুলশীগঙ্গা নদী অন্যতম। এক সময় বছরের সব সময় এই নদীগুলো পানিতে থাকতো ভরা। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহন করার মাধ্যম বলতে এই নদীগুলোই ছিল একমাত্র পথ। জেলেরা সারা বছর এই নদীগুলো থেকে মাছ ধরে জীবন-যাপন করতো। আজ সেই দিনগুলো শুধুই অতীত। এই নদীগুলোর সবগুলোই বর্তমানে মৃত প্রায়। এক সময়ের খরস্রোতা এই নদীগুলো বর্তমানে দখল আর দূষণের শিকার হয়ে মরতে বসেছে। 

নওগাঁ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী ছোট যমুনা নদী। বর্তমানে এই নদী এখন মারাত্মক দূষণ আর দখলের শিকার হয়েছে। নদীর দুই পাশে দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে বড় বড় ভবন ও শিল্প কারখানা। দীর্ঘদিন যাবত নদীগুলো খনন না করার কারণে পলি জমে কমে গেছে নদীর নাব্যতা। তাই কোথাও কোথাও নদীর ভেতরের দুই পাশের পার কেটে সমতল করে চাষ করা হচ্ছে ফসল। আবার কোথাও অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালি যার কারণে নদীগুলো যৌবন হারিয়ে দ্রুত মরে যাচ্ছে। এই নদীটি এখন শহরবাসীর ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা এবং ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্র এই নদীটি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে তার রূপ হারিয়ে ফেলছে। এর হাত থেকে রক্ষা করে নদীটিকে রক্ষা করার আহবান জানিয়েছে শহরবাসী। 

শত শত বছর আগে যেখানে সাগর ও নদীর মোহনা রয়েছে সেখানেই গড়ে উঠেতো শহর। নওগাঁ শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটি এক সময়ে ছিল খরস্রোতা। ব্যবসা বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করতো এই ছোট যমুনা নদী। বড় বড় নৌকা ভিড়ত নদীতে। ধান পাটসহ নানা পণ্য এখান থেকে নদী পথে চলে যেত রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কৃষিক্ষেত্রেও ছিল অনবদ্য ভূমিকা। কিন্তু কালের প্রবাহে নদীটি তার রূপ হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুমে পানি থাকলেও খরা মৌসুমে প্রতি বছর নদীটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। বর্তমানে নদীর উভয় পাশে ফ্লাডওয়াল নির্মিত হওয়ায় শহরের নদীর উভয় পাশের বাসিন্দারা তাদের পরিত্যক্ত সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছে। পুরো নদীটি এখন যেন একটি বিশাল ডাস্টবিন। যার যখন মনে হয় তখন তাদের ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছে। এতে নদীটির পানি দূষণসহ পরিধি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে নদী দূষণের পরিমাণ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। 

শহরের পার-নওগাঁর বাসিন্দা মিলন সরকার বলেন, ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলা ক্ষতিকর জেনেও কেবলমাত্র শহরে কোন ডাস্টবিন না থাকায় ময়লা আবর্জনা ফেলার কোন জায়গা নেই বলেই তারা বাধ্য হয়ে তাদের ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছেন। নদী দূষণের ফলে নদী তীরবর্তী নাগরিকদের বসবাস করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই নদীটিকে রক্ষা করার দাবি শহরবাসীর।

নওগাঁ শহরের বাসিন্দা গৃহিণী মোছা. নুরজাহান আক্তার বলেন, আমি ছোটবেলায় এই নদীতে অনেক গোসল করেছি। এই নদীর পানি দিয়ে রান্না-বান্নার কাজও করেছি কিন্তু বর্তমানে নদীর পানির গন্ধে নদীর তীরে এসে বসার জো নেই। দূষণ আর দখলের কবলে এক সময়ের যৌবন দীপ্ত নদীটি বর্তমানে মরতে বসেছে। কারো নজর নেই নদীটির দিকে। আমাদের সবার উচিত আগামীর সুন্দর প্রজন্ম ও সুস্থ্ পৃথিবীর জন্য এই নদীগুলোকে বাঁচানোর জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া।  
 
নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি এ্যাড. ডিএম আব্দুল বারী বলেন, নদ আর নদীর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। কিন্তু শিল্প কারখানা ও জনসংখ্যার বিস্ফোরণের কারণে নদীগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে আবার অনেক নদী মানচিত্র থেকে এরইমধ্যই বিলীন হয়ে গেছে। তেমনই একটি নদী আমাদের এই ছোট যমুনা নদী । সুন্দর বাংলাদেশের জন্য এই নদীগুলোকে পুনরায় জীবিত করা আমাদের জন্য এক প্রকার ফরজ হয়ে গেছে। কারণ এই নদীগুলো যদি এক সময় হারিয়ে যায় প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশও তখন হারিয়ে যাবে। বন্যার কবলে পড়বে দেশের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলগুলো। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এই নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। কখনও কখনও এই নদীকে সার্বিকভাবে রক্ষার জন্য বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ভূমিকা রেখেছেন। তাদেরও দাবি দেশের অন্যান্য নদীর মতো নওগাঁর ঐতিহ্য ছোট যমুনা নদীটিকে দূষণ আর দখলের হাত থেকে রক্ষা করা হোক।
 
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, ছোট যমুনা নদীসহ নওগাঁর সবগুলো নদী রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ওয়াক ফর হেলদি লাইফ এ্যান্ড ক্লিন এনভায়রনমেন্ট নামের একটি উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। এর আগে আমরা তুলশীগঙ্গা নদীকে কচুরীপানা মুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে ফিরিয়ে এনেছি। পর্যায়ক্রমে আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
 
কেএসটি