• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০১৯, ০৮:২৮ এএম

হুমকির মুখে মুন্সিগঞ্জের শহররক্ষা বাঁধ

হুমকির মুখে মুন্সিগঞ্জের শহররক্ষা বাঁধ
হুমকির মুখে মুন্সিগঞ্জের শহররক্ষা বাঁধ -ছবি : জাগরণ

 

বাঁধ বালুদস্যুদের তৎপরতার কারণে হুমকির মুখে মুন্সিগঞ্জের শহররক্ষা বাঁধ। ধলেশ্বরীর কবল থেকে মুন্সিগঞ্জ শহরকে রক্ষার লক্ষ্যে নির্মিত এই শহররক্ষা বাঁধ ঘেঁষে নদী তীরে বালুর ব্যবসাস্থল গড়ে তোলাসহ ড্রেজারে মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বালু সরবরাহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। এতে শহরের উপকন্ঠ মুক্তারপুরের বাগবাড়ী সংলগ্ন ৪০ থেকে ৫০ ফুট এলাকার ব্লক সেটিং বিনষ্ট হওয়াসহ শহররক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় তা ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে।

অন্যদিকে ড্রেজারে লোহার পাইপ স্থাপন করে অনাবরত বালু সরবরাহ করায় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর (মুক্তারপুর সেতু) ধলেশ্বরী তীর-সংলগ্ন পিলারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ওই স্থানে বালু ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া এবং লোহার পাইপ জব্দ করায় ওই চক্রটির বালুর ব্যবসা সাময়িক বন্ধ রয়েছে।


 
তবে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে একটি চক্র বর্তমানে ধলেশ্বরীর তীরে ড্রেজার ও মোটা লোহার পাইপ স্থাপন করে রেখেছে। প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বালুদস্যুরা যে কোনো সময় আবারও ড্রেজার সচল করে বালু ব্যবসা চালানোর পাঁয়তারা করছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধলেশ্বরী নদীর বাঁধ ঘেঁষে নয়াগাঁও পূর্বপাড়া চানতারা মসজিদ এলাকা এবং মুন্সিগঞ্জ লঞ্চঘাট সংলগ্ন বেড়িবাধ এলাকায় ভাসমান ড্রেজার স্থাপন করে বাঁধ ঘেঁষে বিশাল এলাকা দখলে নিয়ে বালু স্তূপ করে রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র।
 
একইভাবে মুক্তারপুর বাগবাড়ী এলাকা সংলগ্ন শহর রক্ষাবাঁধ ঘেঁষে ধলেশ্বরীর তীরে ভাসমান ড্রেজার রেখে অপর একটি চক্র নদী তীরে বিশাল গর্ত করে মজুদ করা বালু বিক্রি করায় সেখানে ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের শহর রক্ষাবাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অবৈধ এ বালু ব্যবসার কারণে বাগবাড়ী-সংলগ্ন বাঁধটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


 
অন্যদিকে মালিপাথর এলাকায় ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর (মুক্তারপুর সেতু) ধলেশ্বরীর তীর-সংলগ্ন পিলার ঘেঁষে একইভাবে ভাসমান ড্রেজার রেখে সড়কের ওপর দিয়ে মোটা লোহার পাইপ দিয়ে বালু বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে অপর একটি সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর পিলার সংলগ্ন এলাকায় ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ব্যবসা অব্যাহত রাখায় নদীর তলদেশের মাটি সরে গিয়ে সেতুর পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে গত বছরের জুলাই মাসের শুরুর দিকে শহর রক্ষাবাঁধে আকস্মিক ভাঙনে বøকসহ বাঁধের বিরাট অংশ ধলেশ্বরী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে কোনো রকমে শহর রক্ষাবাঁধ মেরামত করা হলেও নদী-সংলগ্ন মালিপাথর গ্রামবাসী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতি হতে পারে এমন স্থানে বালু ব্যবসায় সরকারি কোনো অনুমোদন নেই। বালুদস্যুদের এ অবৈধ ব্যবসা বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে সদরের হাটলক্ষীগঞ্জ, বাগবাড়ী ও মালিপাথর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীর শহর রক্ষাবাঁধ ঘেঁষে অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করে দেন। এ সময় ২টি আনলোড ড্রেজার জব্দ করা হয়।

মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বৃহস্পতিবার জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বালু ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপরও বালুদস্যুদের অবৈধ তৎপরতা প্রতিরোধে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাবেন। শহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন নদীর তীরে রাখা আনলোড ড্রেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অব্যাহত থাকবে।

এসএম/এএস