• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০১৯, ১০:০৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৩০, ২০১৯, ০৮:২৪ পিএম

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসুন সীমান্ত সড়ক শেরপুরে

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসুন সীমান্ত সড়ক শেরপুরে

আগে ছিল কাঁচা রাস্তা। যার উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাও ছিল কষ্টকর। বাইসাইকেল কিংবা যানবাহন চলার কথা ভাবাই যেত না। কিন্তু এখন সীমান্তবাসীর মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার। সবার মুখে এখন সরকারের গুনগান। কারন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হওয়ার ফলে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলেছে।

সরেজমিন দেখা যায়, শেরপুরের নালিতাবাড়ীসহ সুনামগঞ্জ-জামালপুরের বকশিগঞ্জ পর্যন্ত গোটা এলাকার মানুষ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আসছে সীমান্ত সড়কে ঘুরতে। দেখছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সব সময় চলছে যানবাহন। এতে সীমান্তবাসীরা খুব খুশি।

সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, এরমধ্যে পাহাড় খুঁড়ে নালিতাবাড়ী সীমান্ত সড়ক দিয়ে বকশিগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৮ ফিট প্রশস্থ এ সড়কটি নির্মাণ হওয়ার ফলে সীমান্তের সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। যা এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ থেকে ১৭১ কিলোমিটার মধ্যে শেরপুর জেলায় ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। অন্য জেলাতেও সীমান্ত এ সড়কটির নির্মাণ কাজ চলছে। পরে
এই সড়কটি সুনামগঞ্জ থেকে সিলেট পর্যন্ত এবং কামালপুর থেকে লালমনিরহাট বুড়িমারি স্থলবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ সড়কটি নির্মাণ হওয়ার ফলে পাহাড় আর বন-বনানী ছুঁয়ে ছুঁয়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য স্পর্শ করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের উচুঁ-নিচু টিলা মাড়িয়ে গাড়ি চলবে। এর মধ্যে দিয়ে দেশের পুর্ব-উত্তর সীমান্তের অমিত সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে যাবে।

স্থানীয়রা জানান, আগে  সুনামগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গে যেতে গেলে ঢাকা হয়ে যেতে হতো। এখন এ সড়ক নির্মাণ হওয়ার ফলে সহজেই উত্তরবঙ্গে যাওয়া যাবে। পাহাড়ের উঁচু নিচু টিলা কেটে বনের মাঝ দিয়ে সীমান্ত সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক এ সড়ক দিয়ে এখন অটোগাড়ি চলছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসছেন ভ্রমণকারীরা। সড়কের বাঁকে বাঁকে পাহাড়ের টিলায় বসে আড্ডা দেয় ছেলে-মেয়েরা। এই সড়কের পাশেই বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে নয়াবিল ইউনিয়নের চেরালী এলাকা দেখার জন্য পুর্ণাঙ্গ নাকুগাঁও নামে একটি স্থলবন্দর রয়েছে। নাকুগাঁও শুল্ক বন্দরটি বৃটিশ আমলে চালু ছিল। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর এ বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ৩৩ বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৯৭ সালে আবার তা চালু হয়। এখন পণ্য আমদানী-রফতানী কার্যক্রম ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ বন্দরটি চালু রয়েছে।

এ স্থলবন্দরকে ঘিরে ২৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নকলা থেকে নালিতাবাড়ী নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কের ২৯.৫ কি.মি দুই লেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ বন্দরে একটি ইমিগ্রেশন রয়েছে। এখান দিয়ে ভারত, ভুটানসহ নেপালে খুব সহজেই যাওয়া যায়। এখন গড়ে প্রতিদিন ২৫-৩০ জন ভ্রমণকারী এ বন্দর দিয়ে আসা যাওয়া করেন। তাছাড়া সড়কের পাশে নান্দনিক সৌন্দর্য্য ভরপুর মধুটিলা ইকোপার্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৯৯২ সালে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোঁড়াগাও ইউনিয়নের সমশ্চুরায় পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলাকে ঘিরে ৩৮০ একর ভূমিতে স্থাপিত হয় এই মধুটিলা ইকোপার্কটি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের গারো পাহাড়ের নান্দনিক দৃশ্য ফুটে ওঠে একমাত্র এই পার্কটিতেই। ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী পার্কটিতে বেড়াতে আসেন। ভ্রমণ প্রিয়দের প্রাকৃতিক বন-বনানি পার্কে বাড়তি আনন্দ দেয়। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ পার্কে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা থেকে ঘুরতে সাদিকুর রহমান শাকিল জানান, মানসিক বিনোদনের জন্য আমরা মাঝে মাঝে মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি সীমান্ত সড়কের উদ্দেশ্যে। সারা বিকাল ধরে এই সড়ক দিয়ে ঘুরি। প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মনটা ভালো হয়ে যায়।

নালিতাবাড়ীর অটোচালক মনির জানান, আমরা সীমান্ত এলাকার লোক। আগে এলাকায় কোনো কাজ ছিলো না। এই সড়কটি হওয়ায় অটো চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা পাই।

রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খোকা বলেন, এই সীমান্ত সড়ক হওয়ার ফলে হাজার হাজার অবহেলিত পাহাড়ী মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সীমান্তবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এখানে বেড়াতে আসছেন। আগামীতে সীমান্ত এলাকার দৃশ্যপট আরও পাল্টে যাবে।

এসসি/