• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০১৯, ০৬:০৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৭, ২০১৯, ১২:১০ এএম

উপাচার্যের বাধ্যতামূলক ছুটির শর্তে সন্ধ্যায় খুলছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের বাধ্যতামূলক ছুটির শর্তে সন্ধ্যায় খুলছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল সার্কিট হাউসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি - ছবি : জাগরণ

উপাচার্যের বাধ্যতামূলক ছুটির শর্তে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলনের টানা ১২ দিন পরে কাল রোববার (৭ এপ্রিল) থেকে চালু হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। এর আগেই আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় কর্তৃপক্ষ খুলে দেবেন আবাসিক হল ও ডাইনিংয়ের তালা।

আজ শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ৪টায় বরিশাল সার্কিট হাউসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রশাসন, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদ্যতাগ দাবিতে যে আন্দোলন করে আসছে তা সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। বর্তমানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক ছুটিতে আছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার আর অল্প কিছুদিন মেয়াদ আছে। তাই ওই সময় পর্যন্ত তিনি আর যেন বরিশালে আসতে না পারেন সেজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিতভাবে জানাবো। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

তিনি আরো বলেন, আজ শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের তালা ও ডাইনিং খুলে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যথারীতি শুরু হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও রোববার থেকে নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম শুরু করবে বলে আমরা আশাবাদী।

প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা ২২ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। তাদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি পর্যায়ক্রমে দাবিগুলো বাস্তবায়নের কাজ করবেন। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ববির সিন্ডিকেট কমিটিতে বরিশালের একজন স্থানীয় ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে রাখা হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিফাত সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রী, মেয়র ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আমাদের দাবিগুলোর যথাযথ সমাধান পেয়েছি। তারা আমাদের কথা শুনেছেন এবং আমাদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। যা আমরা পূর্বে কখনো পাইনি। আমরা আমাদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তবে যেহেতু পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে ভিসি আর বরিশালে আসবেন না। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান বলেন, আজ শনিবার সন্ধ্যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ডাইনিং চালু করে দেয়া হবে। একইসঙ্গে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের তালাও খুলে দেয়া হবে। তা ছাড়া রোববার সকাল থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ও লিখিতভাবে নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট নিরসনে সমঝোতা বৈঠক চলাকালে সকাল থেকে নগরীর সার্কিট হাউস চত্ত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস পেয়ে সার্কিট হাউসে আঙুল দিয়ে ‘ভি’ প্রতীক দেখিয়ে আনন্দ-উল্লাস করে। পরে তারা সার্কিট হাউস চত্ত্বর থেকে এক আনন্দ মিছিল বের করে।

এর আগে সার্কিট হাউসের সভা কক্ষে বেলা ১১টায় থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার সমঝোতা বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপি, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোশারফ হোসেন, বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এসএম ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করায় আন্দোলন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এসএম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেন। এর প্রতিবাদে জোরদার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা।

২৬ মার্চ থেকে তাদের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ডিসি অফিস ঘেরাও, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ, নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে লিখে ভিসির পদত্যাগ দাবি, ভিসির কুশপুতুল দাহ ও মশাল মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের দুদিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়। সবশেষ রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১২ দিনের মাথায় আন্দোলন থেকে সড়ে দাঁড়াল শিক্ষার্থীরা।

এফসি