• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০১৯, ০৮:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৬, ২০১৯, ০৮:৪৩ পিএম

মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করছেন সাত শতাধিক চরমপন্থী 

মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করছেন সাত শতাধিক চরমপন্থী 

‘পরিবার আর স্ত্রী-সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দিন-রাত পালিয়ে বেড়ানো, খাওয়া-ঘুম ঠিক নেই, পেছনে পুলিশ আর সামনে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী। এমন জীবন কেইবা চান। তারপরও সন্ত্রাসী জীবনে জড়িয়ে এমন জীবনই এতদিন কাটিয়েছেন চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সন্ত্রাসীরা। তাই সবকিছু ছেড়ে এবার সুস্থ জীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এতদিন যারা ছিলেন অন্ধকার জীবনের বাসিন্দা।’

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ঘোষণা দিয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ১৫ জেলার প্রায় সাত শতাধিক চরমপন্থী সদস্য। আগামী ৯ এপ্রিল পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। 

এদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান চরমপন্থী দলের সদস্যরা।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গত মাসে বিভিন্ন চরমপন্থী দলের ৬১৪ জন সদস্য আত্মসমর্পণের জন্য তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। প্রতিদিনই আরও বিভিন্ন দলের সদস্যরা আত্মসমর্পণে আগ্রহী হচ্ছে। আশা করছি আত্মসমর্পণকারীদের সংখ্যা সাতশ ছাড়িয়ে যাবে।

যারা আত্মসমর্পণ করছেন 
জেলা পুলিশ জানায়, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, রাজবাড়ী, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলায় সক্রিয় বিভিন্ন চরমপন্থী দলের সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পণ করবেন।

এসব দলের মধ্যে রয়েছে পূর্ববাংলার সর্বহারা, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও কাদামাটি। আত্মসমর্পণকারীদের অনেকের বিরুদ্ধেই হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। তারা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। আত্মসমর্পণ করলেও তাদের নিয়মিত মামলা চলবে।

আত্মসমর্পণের কারণ 
পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থী দলগুলো নির্মূল না হলেও নেতৃত্বশূন্য ও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এছাড়া, পরিবার বিচ্ছিন্ন ও অন্ধকার জগতের অপরাধীর জীবন থেকে তারা সমাজে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছে। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে’।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আত্মসমর্পণের পর যেন তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সরকারিভাবে আর্থিক প্রণোদনাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আবারও তারা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে নজরদারি থাকবে।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ৮ এপ্রিল আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী সদস্যদের স্ব-স্ব জেলা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে পাবনায় নিয়ে আসা হবে। এজন্য পাবনায় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫শ সদস্য মোতায়েন থাকবে।

পাবনা জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত চরমপন্থী দলগুলো অন্তঃকোন্দল ও পুলিশি অভিযানে মারা গেছে ১৯৭ জন। আগামী ৯ এপ্রিল পাবনায় বাবলু প্রামাণিকের নেতৃত্বে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) এবং ইউসুফ ফকিরের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার সর্বহারা দলের ১৬০ জন চরমপন্থী সদস্যের অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের কথা রয়েছে। এর বাইরেও অনেক সন্ত্রাসী আত্মসমর্পণ করবে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামের পাবনাসহ উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি। তারা ধনীর সম্পদ গরিবের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার কথা বলে এসব এলাকায় হত্যা, ডাকাতি ও লুণ্ঠনের রাজত্ব কায়েম করে।

আশির দশক থেকে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে এসব এলাকার দুর্গম চরাঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। বর্তমানে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে চরমপন্থীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে।

২০ বছর আগে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার চার শতাধিক চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করেছিল। সেই সময় তাদের আনসার বাহিনীতে বিশেষ আনসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পুনর্বাসিত করা হয়।


কেএসটি