• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০১৯, ০৪:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১২, ২০১৯, ০৪:১১ পিএম

এইচএসসি দিচ্ছেন মানবকল্যাণ ট্রাস্টের ১১ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

এইচএসসি দিচ্ছেন মানবকল্যাণ ট্রাস্টের ১১ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
পাবনায় শ্রুতিলেখকের সহায়তায় পরীক্ষা দিচ্ছেন ১১ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

এবারের এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থাকা ১১ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তারা পাবনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন। এসব যুবকের চোখের আলো না থাকলেও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার জন্য তারা শ্রুতিলেখকের সহায়তায় পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ ও সেন্ট্রাল গার্লস স্কুল কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলার সুশেল চন্দ ধরের ছেলে চন্দন কুমার ধর, পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মোক্তার সরকারের ছেলে হারুনার রশিদ, পাবনা সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের ছেলে কাওসার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তৌরিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মতিন, তৈয়মুর রহমানের ছেলে আব্দুস সবুর, গোলাম মোস্তফার ছেলে আনারুল ইসলাম, ঢাকার গাজিপুর জেলার গোলজার হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান শাওন, নওগাঁ জেলার টিপু সুলতানের ছেলে মাহবুব জামান, সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার হাবিবুর রহমানের ছেলে আরিফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেলার বাচ্চু মিয়ার ছেলে নাদিম হোসেন এবং টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার শ্যামল চন্দ্রের ছেলে ভোলানাথ চন্দ্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  দরিদ্র এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জীবন সংগ্রামের সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক প্রতিকুলতা। সব বাধা ও প্রতিকুলতাকে জয় করে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন তারা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী কাওসার হোসেন, আরিফুল ইসলাম, হারুনার রশিদ জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকদেরকে, তাদের সন্মানী দিতে হয় আট থেকে দশ হাজার টাকা। অথচ শ্রুতি লেখকদের সম্মানী তো দুরের কথা, লেখাপড়ার করার নুন্যতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা আমাদের নেই। তাছাড়া শিক্ষাবোর্ড থেকে শ্রুতি লেখকদের অনুমোদন, রেজিস্ট্রেশন জটিলতা এবং বিভিন্ন বোর্ডের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালার কারণে তাদেরকে পদে পদে হয়রানীর শিকার হতে হয়। তারপরেও থেমে থাকছে না আমাদের শিক্ষা জীবন।  

এই ১১ জন পরীক্ষর্থীর মত আরো ৮০ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানব কল্যাণ ট্রাস্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ পথশিশু প্রাথমিক শিক্ষা ও দুজন এমএ সহ মোট ১৮৫ জন বিভিন্ন শ্রেণিতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাবনা মানব কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন জানান,  সংবাদপত্রে প্রচারের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে এই প্রতিষ্ঠানের কথা ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এ প্রতিষ্ঠানে সকল ধর্মের প্রতিবন্ধী ছাত্রদের আশ্রয় দিয়ে সম্পূর্ণ খরচমুক্তভাবে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামীতে ছাত্রদের আবাসন জনিত সংকটের কারণে নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা, একটিক ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন এবং অসহায় প্রবীণদের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন ১৯৯৪ সাল থেকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সময় ও শ্রম দিয়ে প্রতিবন্ধী গোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে আসছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনাবাসিকভাবে বিভিন্ন জেলার ১২ জনদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীকে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে সারা দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন পাবনার নাগরিক সমাজ।

এসসি/