• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০১৯, ১১:৪৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২১, ২০১৯, ০৫:৪৭ পিএম

এ মাসেই চালু হবে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’

এ মাসেই চালু হবে ‘বনলতা এক্সপ্রেস’

রাজশাহী-ঢাকা রুটের একমাত্র বিরতিহীন ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ চালুর কথা ছিলো ১৪ এপ্রিল রোববার। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর কথা ছিলো ট্রেনটির। কিন্তু প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তবে যে কোনো দিন ট্রেনটি চালু হতে পারে। এরই মধ্যে ট্রেনের নামকরণ চুড়ান্ত হয়েছে। অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতাও শেষের পথে। এখন কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হওয়ার পালা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রাজশাহী-ঢাকা বিরতিহীন ওই ট্রেনটি নামকরণ করা হয়েছে 'বনলতা এক্সপ্রেস'। নববর্ষের দিন দুপুর ১টা ১৫মিনিটে ঢাকা থেকে এ ট্রেনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর কথা ছিলো। কিন্তু কিছু প্রস্তুতি বাকি থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। এর আগে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ১১ এপ্রিল সকাল থেকে এই ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির কথা ছিলো। সেটিও সম্ভব হয়নি। শেষ মুহুর্তে এসে প্রস্তুতির জন্য আরো কিছু সময় নেয়ায় তা চালু হওয়ায় দেরি হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষের দাবি ছিলো অন্ততঃ একজোড়া বিরতিহীন ট্রেন চালু করার। এর মধ্যে একটি ট্রেন চালুর খবরে কৌতূহল এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। ভ্রমণপিয়াসুরা নতুন লাল-সবুজ ট্রেনের বগির ভেতরের ছবিগুলো নিজ নিজ ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করছেন। কিন্তু তাদের অপেক্ষার প্রহর আর কাটছে না। ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে নতুন ট্রেনের বগির সিট ক্যাপাসিটি ও বায়োটয়লেটসহ অত্যাধুনিক বিভিন্ন সুবিধার দৃশ্য দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অত্যাধুনিক এই ট্রেনে যুক্ত হয়েছে নানান সুযোগ সুবিধা। এই প্রথম দেশের আন্তঃনগর কোনো ট্রেনে যুক্ত হয়েছে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট। এখন থেকে মলমূত্র আর রেললাইনের ওপরে পড়বে না। স্টেশনে দাঁড়ানো অবস্থায় টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন যাত্রী। প্রথমবারের মতো ট্রেনটিতে যুক্ত হয়েছে রিক্লেনার চেয়ার। যেখানে পা এবং হেলান দেয়ার আরামদায়ক সুবিধা থাকছে। এসি বাথের কেবিনে বেডরেস্ট সুবিধা থাকছে। যেখানে রাতে বিছিয়ে দিলেই ছোট খাটের মতো হয়ে যাবে। আর কেবিনে ওপরের সিটে ওঠার জন্য স্টিলের মইয়ের বাদলে থাকছে সিঁড়ি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সম্ভব্য নামের তালিকা থেকে 'বনলতা এক্সপ্রেস' নামটি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হতে চলেছে। এই নামটি ছিল সম্ভাব্য নামের তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে। খোদ প্রধানমন্ত্রী এই নাম ঠিক করে দিয়েছেন। এছাড়া অন্য নামগুলোর মধ্যে ছিলো ‘হিমসাগর এক্সপ্রেস’, 'গ্রিনসিটি এক্সপ্রেস' এবং ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস'।  ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক ১২টি বগি সংযুক্ত হচ্ছে ‘বনলতা এক্সপ্রেসে।

এর মধ্যে শোভন চেয়ার সাতটি, এসি দুটি, একটি পাওয়ার কার, দুটি গার্ডব্রেক ও একটি খাওয়ার বগি। গত ৭ই এপ্রিলে পার্বতীপুর থেকে টাঙ্গাইল (বঙ্গবন্ধু সেতু) পর্যন্ত ট্রায়াল দিয়েছে ট্রেনটি। এদিকে, ‘বনলতা এক্সপ্রেস এ আসন সংখ্যা থাকছে ৯২৮টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ারের ভাড়া হতে পারে ৩৭৫ টাকা। আর স্নিগ্ধার (এসি চেয়ার) ভাড়া হতে পারে ৭১৯ টাকা। তাছাড়া ৮৬৩ টাকায় পাওয়া যেতে পারে এসি কেবিন। আর এক হাজার ২৮৮ টাকায় মিলতে পারে এসি বাথ। বিরতিহীন চার্জ হিসেবে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে যাত্রীদের। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ে এ ভাড়া প্রস্তাব করেছে। যা অনুমোদন হতে পারে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার বাদে ট্রেনটি সপ্তাহে ছয়দিন চলবে। সিগন্যাল পাসিং দ্রুত শেষ হলেই ঢাকা-রাজশাহী বিরতিহীন ট্রেনটির ভ্রমণ সময় হবে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা। বিরতিহীন এ ট্রেন হবে দেশের সর্বাধুনিক হাইস্পিড কোচের ট্রেন। ঘণ্টায় এর গতি হবে ১৪০ কিলোমিটার। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে পাড়ি দেবে আড়াই কিলোমিটার পথ। বিদ্যমান ট্রেনগুলোতে এখন ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। এতে রাজশাহী-ঢাকা ট্রেন ভ্রমণে সময় বাঁচবে আড়াই ঘণ্টা।

প্রস্তাবিত সময়সূচি অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ট্রেনটি দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছবে সন্ধ্যা পৌনে ৬ টায়। রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১১টায়। বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল করছে আন্তঃনগর পদ্মা, ধূমকেতু ও সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস। শুরুতে সীমিত সংখ্যক স্টেশনে থামলেও এখন ১৪টি স্টপেজ রয়েছে দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর। ফলে অনেকটা লোকাল ট্রেনের মতই অবস্থা এই তিন ট্রেনের। মাঝে মধ্যেই লেগে থাকছে শিডিউল বিপর্যয়। এতে বাড়ছে যাত্রীদের ভোগান্তি। নতুন এই বিরতিহীন ট্রেনের জন্য উন্মুখ এখানকার মানুষ।

রেলওয়ে মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রতিটি বগি বর্তমান বগিগুলোর চেয়ে প্রশস্ত। ট্রেনের কারিগরি যন্ত্রাংশগুলো অনেক উন্নতমানের। এখন থেকে যে সব ইঞ্জিন রেলওয়ে বহরে যুক্ত হচ্ছে, তাও অত্যাধুনিক। তাই এটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হয়ে আসছে রেলযাত্রীদের জন্য।

এসসি/এসজেড