• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০১৯, ০৮:৫৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৭, ২০১৯, ০৩:০২ পিএম

লালমনিরহাটে 

বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন, ঝুঁকিতে ৮ গ্রাম

বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন, ঝুঁকিতে ৮ গ্রাম
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবেই কালিগঞ্জ উপজেলায় বাঁশের খুঁটিতে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন -ছবি : জাগরণ

লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম এ সীমান্তবর্তী ৩ উপজেলার অন্তত ১৮ গ্রামে বিদ্যুৎ সঞ্চালন কাজ চলছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে। এরইমধ্যে  ঝুঁকিপূর্ণ এ সঞ্চালন ব্যবস্থা  কেড়ে নিয়েছে অনেক তাজা প্রাণ। গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন শিশু-বৃদ্ধ নারীসহ অনেকেই। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের ভয়াবহতা থেকে গবাদিপশু পর্যন্ত  রক্ষা পায়নি। হতাহতের এসব ঘটনায় স্থানীয় মানুষ বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন।
 
জানা গেছে, ২০১২ সালে কালিগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের নিথক, শিয়াল খোওয়া, বান্দেরকুড়া, দুহুলী ও পূর্ব চলবলা গ্রামসহ সহস্রাধিক পরিবারকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্রভাবে বাঁশের খুঁটি দিয়ে টানা হয় বিদ্যুতের লাইন। প্রায় ৬ বছর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছেন কালিগঞ্জ উপজেলার ৫ গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। সঞ্চালনের ভেঙে পড়া এই ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আখের গোছাচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বরত এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী। মূলত নামকাওয়াস্তে সঞ্চালন লাইন খুলে দিয়েছে বিদ্যুৎবিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভাগ্য। সামান্য ঝড়, বাতাস, বৃষ্টি হলেই বিদ্যুতের তারগুলো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ফলে এসব তারই মৃত ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় গ্রামবাসীদের।

সরেজমিনে  গিয়ে দেখা যায়, শিয়াল খোওয়া বাজার থেকে পূর্ব ও দক্ষিণমুখী হয়ে ৫টি গ্রামে টানা প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার লাইনের পুরোটাই বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি। অনেক স্থানে পুরনো বাঁশের খুঁটি ভেঙে তার ছঁড়িয়ে-ছিটিয়ে গ্রামের রাস্তার পাশে কিংবা ক্ষেতে খামারে পড়ে আছে। হেলেপড়া খুঁটির তার মানুষ ও গবাদিপশুর নাগালের ভিতরে রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে খুঁটির বদলে বিদ্যুৎ পরিবাহী গাছ দিয়ে সঞ্চালন খুঁটির কাজ সারা হয়েছে।
 
নাজুক এ সঞ্চালন ব্যবস্থায় দুর্ঘটনার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গ্রামবাসী। বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে তারা বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে অর্থের বিনিময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও প্রতিশ্রুতি ছিল বিদ্যুৎ বিভাগ বাঁশের খুঁটি দু’মাসের মধ্যে পরিবর্তন করে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করে দেবে। কিন্তু র্দীঘ ৬ বছর অতিবাহিত হলেও খুঁটির পরিবর্তন করা হয়নি। বাঁশের খুঁটি দিয়েই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সঞ্চালন। আর বিদ্যুতের এমন লো-ভোল্টেজ যে বাতিতো জ্বলা তো দূরের কথা, মোবাইল চার্জ দেয়াটাও কষ্টকর ব্যাপার।

কালিগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়ন পরিষষের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামীললীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজু বলেন, তার ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে ঝুকিপূর্ণভাবে বাঁশের খুটিতে চলছে বিদ্যুৎ সঞ্চালন, বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে বারবার অবগত করা হলেও তারা কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে তিনি জানান, স্থানীয় সাংসদ ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের উদ্যোগে খুব শিগগিরই বাঁশের খুঁটি পরিবর্তন করে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করা হবে।

অপরদিকে, হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি, নওদাবাস দৈখাওয়া, শিংঙ্গীমারী, সিন্ধুনা ও পাটগ্রাম উপজেলার ভেড়ভেড়ীরহাট, আউলিয়ার হাট, দহগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে একইভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস গ্রামের ফনি ভূষণ রায়, কফির উদ্দিন ও রস্তম আলীসহ অনেকেই কালবৈশাখী ছোবল থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত  বাঁশের খুঁটির পরিবর্তে বিদ্যুতের খুঁটির ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালন করার দাবি জানান তারা।

লালমনিরহাট বিদ্যুৎ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী হাসনাত জামান জানান, আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ সব সঞ্চালন লাইন পুননির্মার্ণের পরিকল্পনা নেই। তবে বিষয়টি  প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

একেএস