• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০১৯, ০৯:২১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২০, ২০১৯, ০৯:২১ এএম

সেতু নির্মাণ করলেন ১০ যুবক, স্বস্তিতে ৩০ গ্রামের মানুষ

সেতু নির্মাণ করলেন ১০ যুবক, স্বস্তিতে ৩০ গ্রামের মানুষ

নদীটির ওপর দীর্ঘ দিন ধরে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ হচ্ছে না। এতে করে অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ বছর ব্যাপী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে এলাকার ১০ যুবক উদ্যোগী হয়ে ওই নদীটির ওপর কাঠের সেতু নির্মাণ করে দেয়ায় ত্রিশটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। 

নেত্রকোনার কলমাকান্দা সীমান্ত এলাকার গনেশ্বরী নদীতে প্রায় চার দশক ধরে পারাপারের সমস্যা থাকলেও কেউই উদ্যোগ নেয়নি সেতু নির্মাণের। ফলে বর্ষায় পারাপারের সমস্যা সৃষ্টি হতো শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের। বর্তমানে এই সেতু দিয়ে পার হতে পারলেও স্থায়ী ‍ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসী। 

জেলার কলমাকান্দার লেংগুরা, খারনৈ ও রংছাতি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা গনেশ্বরী নদীতে সেতু না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতো স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কেউই সেতু নির্মাণে উদ্যোগ না নেয়ায় ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসে মো. সাইদুর রহমান ভূইয়াসহ চৈতানগর গ্রামের গুঞ্জর আলীর ছেলে ফারুক মিয়া, মানিক মিয়া, দক্ষিণ রাণীগাঁও গ্রামের মৃত রজব আলীর ছেলে দুদু মিয়াসহ এলাকার ১০ যুবক। তারা কাঠের তৈরি সেতু বানিয়ে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছে। 

চৈতানগর গ্রামের মৃত সাত্তার মড়লের ছেলে আব্দুল কাদির, মৃত তাহের উদ্দীনের ছেলে আব্দুল হক বলেন, গ্রামে-গঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়ন হলেও আমাদের পাহাড় জনপদে মানুষ আজও অবহেলিত। নদীটিতে দীর্ঘ দিন ধরে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে  আসলেও স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও আমাদের কল্যাণে সরকার কোন উদ্যোগ না নেয়ায় আমাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের প্রশ্নে এলাকার ১০ যুবক উদ্যোগী হয়ে ওই নদীটির ওপর অস্থায়ীভাবে কাঠের সেতু নির্মাণ করে দিয়েছেন। 

সেতু নির্মাণ করায় আমরা উত্তর রানীগাঁও, দক্ষিণ রানীগাঁও, উত্তর গোরাগাঁও, দক্ষিণ গোরাগাঁও, চেংনী, চৈতা নগর, কাঠালবাড়ী, লেংগুরা, ফুলবাড়ী, কান্দাপাড়া, জিগাতলা, তারানগর, শিবপুর, মন্তলাসহ ত্রিশটি গ্রামের অন্তত ৩৫ হাজারের উপরে মানুষ নদী পারাপারের দুর্ভোগের কবল থেকে অনেকটা রক্ষা পেয়েছি। এর আগে গোদারা ঘাটের পাড়ে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে গোদারার নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়েছে। অনেক সময় ঘটেছে নৌকা ডুবির ঘটনাও। 

দক্ষিণ গোড়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই নদীতে একটি ব্রিজ না থাকায় আমরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। এলাকার কিছু যুবকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে দেয়ায় আমরা খুশি। সরকারের কাছে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। 

চেংনী গ্রামের আম্বরিছিল’র স্ত্রী সীমাহাগিদগ জনান, আমরা হাজং, গারো, কোচ, বানাই জাতের লোকেরা পেটের ভাত দেওয়ার জন্যই রাইত দিন বনজঙ্গলে মাথার ঘাম পায় পালাইয়া পাহাড়-জঙ্গল থেকে কাঠ-কড়ি আননিয়া প্রতিদিন লেংগুড়া বাজারে বিক্রি করে ডাইল, চাউল কিনন্যা দিন আইন্যা দিন খাই। গোদারার পাড়ে আইয়া বইয়া থাকতে থাকতে বেইল যায় গা, বাজার ধরতে পারিনাযে। দেরীতে বাজারে গেলে বেচা-কিনা করা যায় না। এমনিতেই কাঠ-কড়ির দাম কম। কড়ি বেচতে না হারলে পরিবারের মানুষ লইয়া উবাস থাহন লাগে হগল বেলা। আমরা চাই সেফ হাসিনার কাছে একটা পাকা বীচ কইরিয়া দেউক। 

লেঙ্গুড়া স্কুলের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কাসেমসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, এই ঘাটে পারাপার হতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে কতবার যে, কাপড়-চোপড় ও বইপত্র ভিজিয়ে বাড়িতে ‍ফিরে আসতে হয়েছে তার অন্ত নেই। এখন কাঠের সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় মানুষ কোনভাবে চলাচল করতে পারে, বিশেষ করে আমরা ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যেতে পারছি। স্থায়ী সেতু নির্মাণ হলে শুধু আমাদের নয়, কৃষকের কৃষিপণ্য আনা-নেয়া সুযোগ সৃষ্টি হবে, ফিরে আসবে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরনে এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি সবার। 

স্থানীয় লেঙ্গুরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়াকে নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় আট লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৬০ ফুট দৈর্ঘ্য কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। স্লুইস গেইটসহ স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। স্থায়ী সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলেও জানান এই জন প্রতিনিধি। এই নদীতে সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি সমীক্ষা কাজ চালানো হচ্ছে। কাজ সম্পন্ন করেই সরকারিভাবে সেতু নির্মাণ করা হবে বলে বলেছেন জেলা প্রশাসক মঈনুল ইসলাম। তিনি বলেন, এলাকাবাসীর নিজস্ব উদ্যোগে সেতু নির্মাণ জনসেবার পাশাপাশি এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

কেএসটি