• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০১৯, ০৪:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১১, ২০১৯, ০৪:৫২ পিএম

কুমিল্লার জামায়াত নেতা গোলাম কিবরিয়া শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র কারবারি

কুমিল্লার জামায়াত নেতা গোলাম কিবরিয়া শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র কারবারি
কুমিল্লা জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা, কাউন্সিলর ও অস্ত্র ব্যবসায়ী কাজী গোলাম কিবরিয়া - ছবি : জাগরণ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়া। কুমিল্লা জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও একজন তিনি। পর্দার আড়ালে এই জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতার রয়েছে আরেক পরিচয়, তিনি শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র কারবারি। দেশজুড়ে রয়েছে তার অস্ত্রের কারবার। ছোট-বড়, ভারী সব ধরনের অস্ত্রের চোরাচালানের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত।

সম্প্রতি একে-২২ অস্ত্র কিনতে ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তার ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। পরে ওই দুজন গোলাম কিবরিয়ার এই অন্ধকার জগতের সবকিছু ফাঁস করে দেন। গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় ওয়ারীর স্বামীবাগ এলাকায় রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে থেকে গোলাম কিবরিয়ার ঘনিষ্ঠ সাইদুল ইসলাম মজুমদার ওরফে রুবেল এবং কামাল হোসেনকে একে-২২ রাইফেল, ৩০ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে নানা ভয়ংকর তথ্য পায় সিটিটিসি। দুই সহযোগী ধরা পড়ার পর গা-ঢাকা দেন গোলাম কিবরিয়া।

জানা গেছে, সাত দিন ধরে গোলাম কিবরিয়া কাউকে দেখা দেননি। বৃষ্টিতে এলাকায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও তিনি নেই জনগণের পাশে। এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সালাম মিয়া জানান, কাজী গোলাম কিবরিয়ার সন্ধান পাওয়া মাত্র তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি জানান, গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় ১৫টি মামলা রয়েছে। এক বছর আগেও তিনি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বর্তমানে জামিনে থেকে অস্ত্রের ব্যবসা করছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াচক্রের সঙ্গে কাজী গোলাম কিবরিয়ার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হয়ে ঢাকায় যেসব অস্ত্রের চোরাচালান আসে, সেই চক্রের অন্যতম সদস্য তিনি। তার সহযোগী ছাত্রশিবিরের ক্যাডার আব্দুল হাই হাসিব ওরফে হাতকাটা হাসিব ওরফে বোমা হাসিব এবং জামায়াত নেতা বাবুল উদ্দিন ও সাদেক হোসেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণকারী জামায়াত নেতা গোলাম কিবরিয়া প্রকাশ্যে মানুষের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেন।

কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়া এবং হাসিব একসময় শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার ছিলেন। বোমা তৈরি করতে গিয়ে হাসিবের দুই হাতের আঙুল উড়ে গেলেও তিনি দমেননি। তারা চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশি অস্ত্র এনে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করছেন। নিজ দলের ক্যাডারদেরও তারা অস্ত্রের জোগান দিচ্ছেন। সিটিটিসির তদন্তে এসব তথ্যের পাশাপাশি আরো উঠে এসেছে রাজনৈতিক কারণে ব্যাকফুটে থাকা জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পনায় রয়েছে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে নাশকতার মাধ্যমে হত্যা করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই একে-২২ রাইফেল ঢাকায় নিয়ে আসা হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া রুবেল এবং কামাল স্বীকার করেছেন, তারা জামায়াত-শিবিরের কর্মী। তারা কুমিল্লার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়া ও অস্ত্র চোরাকারবারি হাসিবের ঘনিষ্ঠ এবং তাদের অস্ত্রের বাহক। রুবেল ট্রাকচালক আর হাসিবের ডানহাত হিসেবে কাজ করতেন কামাল। তাদের দুজনেরই বাড়ি কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার শুভপুরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বাবুল নামের একজন প্রথমে একে-২২ অস্ত্রটি কিনেছিলেন। পরে অস্ত্রটি হাসিবের কাছে বিক্রি করা হয়। হাসিব পরে অস্ত্রটি কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়ার কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। এই অস্ত্র কিনতেই ঢাকায় এসেছিলেন কিবরিয়া। অস্ত্রটি রাশিয়ায় তৈরি। একই মডেলের রাইফেল দিয়ে তিন বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল জঙ্গিরা।

এ ব্যাপারে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একে-২২ রাইফেল অনেক বড় অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে জামায়াত-শিবির নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। ওই চক্রের সদস্য কুমিল্লা ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়া পালিয়ে গেলেও তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এনআই

আরও পড়ুন