• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০১৯, ০৫:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৮, ২০১৯, ০৫:৩৪ পিএম

গাইবান্ধায় কমেছে বন্যার পানি, বেড়েছে দুর্ভোগ

গাইবান্ধায় কমেছে বন্যার পানি, বেড়েছে দুর্ভোগ
পানি কমলেও এখনো অনেকেই রয়ে গেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে  -  ছবি : জাগরণ

গাইবান্ধার ঘাঘট নদীর পানি কমতে শুরু করলেও জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

রোববার (২৮ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে ঘাঘট নদীর পানি। আর ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘদিন বন্যার পানি স্থায়ী হওয়ায় নানা ধরনের ভোগান্তির কবলে পড়েছে গাইবান্ধা অঞ্চলের মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকার রাস্তাঘাট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনগণকে। বসতবাড়ি থেকে এখনো পানি সরে না যাওয়ায় গাইবান্ধা পৌর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসকারী বানভাসি মানুষ ঘরে ফিরতে পারছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা থেকে উত্তরের বামে সুন্দরগঞ্জ থানা ও ডানের সড়ক দিয়ে যেতে হয় ঐতিহাসিক দাড়িয়াপুর হাট, ফকিরের বাজার, কাবলির বাজার, মাঠের হাট, ধর্মপুর, মজুমদার, সীচা, পাঁচপীরসহ বিভিন্ন স্থানে। এসব  গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ব্যবসা–বাণিজ্য থমকে গেছে গাইবান্ধা শহরতলির কদমতলী ব্রিজটি চলতি বন্যার প্রবল পানির স্রোতে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায়। আবার কিছু জায়গায় ভেঙে দেবেও গেছে। সে সময় তড়িঘড়ি করে ফায়ার সার্ভিসকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসন একাধিক বালিভর্তি বস্তা ফেলে ডাম্পিং করে ব্রিজের ভাঙন কোনো রকম ঠেকিয়ে রেখেছে। ব্রিজের অবকাঠামো নড়বড়ে হওয়ায় এই ব্যস্ততম সড়কপথে গত ১০ দিন থেকে সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ জনগণ।

দীর্ঘদিন ধরে এই বানভাসিরা গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানববেতর জীবনযাপন করছে। জেলার অধিকাংশ এলাকা দীর্ঘদিন যাবৎ বন্যাকবলিত হয়ে থাকায় শ্রমজীবী মানুষ অর্থ সংকটে পড়েছে। কর্ম না থাকায় নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো অধিকাংশই ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব পানিবাহিত রোগের মধ্যে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এতে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ জানান, সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ১০৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে এসব মেডিকেল টিমের মাধ্যমে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪২৪টি গ্রাম ও ২টি পৌরসভার ৫ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৭০টি পরিবারের। প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাসহ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৯৭টি।

ভুক্তভোগী বন্যার্ত মানুষের বেশির ভাগই বন্যার পানি দ্রুত না কমার কারণে নিজ আশ্রয়ে ফিরতে পারছে না। আবার কিছু জায়গায় পানি কমলেও চারদিকে নোংরা ও বিষাক্ত আবর্জনাযুক্ত কাদার কারণে নতুন করে এখনো নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বা ভাড়া বাড়িতে এসে উঠছে অনেকেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বন্যায় ১৪ হাজার ২১ হেক্টর আউশ ধান, আমন বীজতলা, সদ্য রোপণ করা আমন, পাট ও শাকসবজির ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। পানি না কমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই মৌসুমের সকল আবাদ।

জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতির কারণে সাত উপজেলার ৩৬৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ২৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চারটি কলেজ রয়েছে।

এনআই

আরও পড়ুন