• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৫:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৫:৩৮ পিএম

জিআরপি থানায় তিন সন্তানের মাকে ধর্ষণ

তদন্ত কমিটি গঠন, ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন

তদন্ত কমিটি গঠন, ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন

খুলনার জিআরপি (রেলওয়ে থানা) থানায় তিন সন্তানের মাকে (৩০) দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ওই ধর্ষিতা নারী নিজেই আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। আদালতের নির্দেশে ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ওই নারীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
 
ধর্ষণের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন- কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদ। অপর ২ সদস্য হলেন- কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ.ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম। 

পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, খুলনা রেলওয়ে থানা হাজতে রেখে ৬/৭ জন পুলিশ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও মারপিট করে- মর্মে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ৭ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, সোমবার ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের গাইনি চিকিৎসকরা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। তার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তবে, রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২ আগস্ট ঘটনার রাতে খুলনা রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠান, এসআই গৌতম কুমার পাল, এসআই নাজমুল হাসান, কনস্টেবল মিজান, হারুন, মফিজ, আব্দুল কুদ্দুস, আলাউদ্দিন, কাজলসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তবে, ওই নারী ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ ও মারপিটের অভিযোগ করেছেন। 

ওই নারীর দুলাভাই শাহাবুদ্দিন মাতুব্বর জানান, গত ২ আগস্ট শুক্রবার তার স্ত্রীর ছোট বোন (শ্যালিকা) যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসেন। ট্রেন থেকে নামার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা রেলস্টেশনে কর্তব্যরত জিআরপি পুলিশের সদস্যরা তাকে সন্দেহজনকভাবে ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাতে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠান প্রথমে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর আরও ৪ জন পুলিশ সদস্য পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরদিন শনিবার তাকে ৫ বোতল ফেন্সিডিলসহ একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয় বলে তার শ্যালিকা তাদের জানিয়েছেন। 

তিনি আরও জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেওয়ার পর তার শ্যালিকা জিআরপি থানায় তাকে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরেন। এরপর আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন। 

এদিকে, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ওসি ওসমান গনি দেড় লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু সমঝোতায় রাজি না হওয়ায় তিনি হুমকি দিচ্ছেন বলেও ওই নারীর বড় বোন হোসনে আরা বেগম অভিযোগ করেন। 

খুলনা জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই মহিলাকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ গত ২ আগস্ট আটক করা হয়। সেই মামলায় তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আদালতে গিয়ে সে ধর্ষণের অভিযোগ করেছে। থানায় রাতে তিনজন নারী পুলিশসহ ৮ জন পুলিশ পাহারায় থাকে। সেখানে তাকে ধর্ষণের কোনো সুযোগ নেই। মূলত ফেনসিডিলের মামলা থেকে রক্ষা পেতে ওই নারী এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

কেএসটি

আরও পড়ুন