দৈনিক জাগরণে বীরাঙ্গনা জয়ন্তীবালা দেবীকে নিয়ে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ নিউজ হয়েছিল ‘৪৮ বছরেও মেলেনি স্বীকৃতি, হারিয়েছেন স্বামী ভাই ও নিজের সম্ভ্রম’। দৈনিক জাগরণে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে প্রশাসন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের।
বহু যাচাই-বাছাই শেষে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬২তম সভায় ৪৬ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি তাদের স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।
স্বীকৃতি পাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বীরাঙ্গনা জয়ন্তীবালা দেবীর নামও রয়েছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়ে খুশিতে গুমরে কেঁদে উঠলেন জয়ন্তী। চোখের জল গড়িয়ে পড়া পানি ঝিলিক দিয়েছিল তার মুখে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ বলেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা অসহায় মুখ ইতিহাস খুঁজে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামে বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাওয়া জয়ন্তীবালা দেবীর বাড়িতে গেলে খুশিতে জাপটে ধরেন এ প্রতিবেদককে। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি। কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করেন সহযোগিতাকারীদের। ভাইয়ের সংসারে ৪৮ বছর ধরে বিধবা হিসেবে বসবাস করছেন জয়ন্তীবালা দেবী।
পেছনের গল্প
পার্শ্ববর্তী ভালুকা উপজেলার গোয়ারী গ্রামের উনেস চন্দ্র দেবনাথের ছেলে নিতাই চন্দ্র দেবনাথের সাথে ১৯৬৬ সালে জয়ন্তীবালা দেবীর বিয়ে হয়। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় ১৯৭১ সালের গোয়ালিয়াবাজুর এলাকায় সম্মুখসমরে তার স্বামী নিতাই চন্দ্র শহীদ হন। পরে জয়ন্তীবালা দেবীকে আছিম রাজাকার ক্যাম্পে দুই মাস আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদজায়া জয়ন্তীবালাকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। সে সময় তাকে দেয়া হয়েছিল ২ হাজার টাকাও। ওই চিঠিটা আঁকড়ে ধরে ছিলেন ৪৮ বছর।
মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তিনি। ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবি সিদ্দিক জানান, জয়ন্তীবালা দেবী একজন বীরাঙ্গনা। যুদ্ধে তার স্বামীও শহীদ হয়েছেন। নিজের ভাই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের বেয়নেটের আঘাতে নিহত হয়েছিলেন।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লীরা তরফদার জানান, জয়ন্তীবালা দেবীর বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পত্রিকায় দেখেছেন হয়তো দু-এক দিনের মধ্যে চিঠি আমরা পেয়ে যাব।
এনআই