রাজশাহীর পুঠিয়ায় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কুখ্যাত রাজাকার আব্দুস সামাদ ওরফে মুসার ফাঁসির রায় ঘোষণা করায় এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এই রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানিতে ছিলেন দুজন প্রসিকিউটর। তারা হচ্ছেন ঋষিকেষ সাহা ও জাহিম ঈমাম। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
রাজাকার মুসার হাতে নিহত এলাকার জটু সরেন, টুনু মার্ডি ও আব্দুস সামাদের পরিবারের লোকজন বলেন, সকালে আদালত মুসার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর থেকে এলাকাজুড়ে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে। তারা এই রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান। এলাকাবাসী তসলিম উদ্দীন বলেন, মুসা রাজাকারের ফাঁসির রায় ঘোষণার পর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আলী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার মুসার ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে এলাকা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুখ্যাত রাজাকার মুসা মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার পশ্চিমভাগ ও গোটিয়া গ্রামে আদিবাসী ও বাঙালিদের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। সে সময় তার নেতৃত্বে সেখানে চলে হত্যা, হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এ বিষয়ে গত প্রায় চার বছর আগে পশ্চিমভাগ গ্রামের শহীদ আব্দুস সামাদের স্ত্রী রাফিয়া বেগম মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদফা মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি তদন্তকারী দলের লোকজন উপজেলার বাঁশবাড়িয়া, পশ্চিম ভাগ, আটভাগ, ধোকড়াকুল ও গোটিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের বক্তব্য গ্রহণ করেন। ওই সময় তদন্তকারী দলের পরিদর্শক ফারুক হোসেন ভুক্তভোগীদের জানিয়েছেন, গত বছরের ২৭ জুলাই রাজশাহীর সার্কিট হাউসে মুসার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। এরপর বিস্তারিত খোঁজখবর জানতে দলটি ঘটনাস্থলে আসে। সে সময় ৭১ সালে মুসার হাতে নির্মমভাবে নিহত স্থানীয় ও আদিবাসীদের স্বজনরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
রাফিয়া বেগমের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ৭১ সালের ১৯ এপ্রিল এলাকায় মুক্তিবাহিনী আছে বলে মুসা রাজাকার পাক বাহিনীকে ডেকে আনে। এরপর দুর্গাপুর এলাকার নমিক ফকিরের ছেলে মফিজ উদ্দীন, গোটিয়া গ্রামের মানিক সর্দারের দুই ছেলে আদম আলী ও জাফর আলী এবং শুকদেবপুর গ্রামের মিরা হাজির ছেলে সিরাজ উদ্দীনকে চোখ বেঁধে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলির নির্দেশ দেয়। ওইদিন মুসা নিহতদের হাত ও পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তার নির্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয় আক্কেল আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তারকে। পরে পশ্চিমভাগ গ্রামের ধনাট্য আদিবাসী লাড়ে হেমব্রমের বাড়িতে গিয়ে তাকে হত্যা করে এবং আগ্নিসংযোগ করে লুটপাট চালায়। এছাড়া রাজাকার মুসা নিজেই এলাকার মংলা সরেনের ছেলে জটু সরেন, মুন্ডি মার্ডির ছেলে টুনু মার্ডি, ধোকড়াকুল এলাকার নেসু শাহর ছেলে রহমত শাহ্, বাঁশবাড়ি গ্রামের ইব্রাহিম সরকারের ছেলে ইসমাইল সরকার ও তার ছেলে আনেস সরকার, আব্দুল গফুরের ছেলে বদিউজ্জামান, বসিরের ছেলে কালা চানকে হত্যা করে।
এনআই