• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮, ১২:০৯ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধানের বাজারে ধস

ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধানের বাজারে ধস
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঘনিমহেশপুর গ্রামের মাঠে ধান কাটছেন কয়েকজন কৃষক-কিষাণি

 

ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধানের দামে ধস নেমেছে। কৃষকেরা বাজারে ধান নিয়ে গেলেও বিক্রি করতে পারছে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ অভিযানের ঘোষণা দেয়। দাম ঘোষণার পর এক সপ্তাহের জন্য মণ প্রতি ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ধানের বাজার মূল্য আবার পূর্বের অবস্থায় পৌঁছেছে। ঘোষণার আগে ধানের বাজার মূল্য ছিল প্রতি মণ ৫৫০-৬০০ টাকা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঘনিমহেশপুর গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী জানান, সরকার আমন ধান কাটার শুরুতেই যদি সংগ্রহ অভিযানের ঘোষণা  দিত তাহলে কৃষকেরা লাভবান হত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ঘোষণা দেওয়ায় লাভ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁয়ে চলতি বছর আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৩৭ হাজার ১৪১ হেক্টরে। অর্জিত হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৯০ হেক্টর। 

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার ঠাকুরগাঁও জেলায় ২২ হাজার টন চাল সংগ্রহ করা হবে। কেজি প্রতি ৩৬ টাকা দরে চাল সংগ্রহ করবে সরকার। এজন্য চালকল মালিকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে খাদ্য বিভাগের। সরকারি ঘোষণার পর এক সপ্তাহ ধানের বাজার মূল্য বাড়লেও এখন আবার পূর্বের অবস্থায় পৌঁছেছে।

চালকল মালিক তোফাজ্জল হোসেন জানান, সরকার ঠাকুরগাঁও জেলায় যে পরিমাণ চাল কিনবে, তাতে করে ব্যবসায়ীরা মাথাপিছু সর্বোচ্চ ৬০০ বস্তা বরাদ্দ পেতে পারে। এতে দুইদিন মিল চালালে ওই চাল পাওয়া যাবে। ফলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী বরাদ্দের জন্য একদিনের জন্য ধান কিনেছেন। আর স্বাভাবিক নিয়মে বাজারে ধানের চাহিদা না থাকায় তার দাম কমেছে। গত বছরের এ সময় ৮০ কেজি ধান এক হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর তা বিক্রি  হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা দরে। হঠাৎ করে মণ প্রতি ১০০-২০০ টাকা বাড়ার পরে আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে গেছে।

সদর উপজেলার চাষি আলাউদ্দিন জানান, নতুন ধান কম দামে বাজারে বিক্রি করেছি। এবার ন্যায্য দাম পাইনি। এখন বাজারে ধান কেনাবেচা চললে লোকসান কিছুটা হলেও কমতো। তিনি আরো জানান, এবার এক একর জমিতে ধান উৎপাদিত হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ মণ।  বাজারে বিক্রি করে পেয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩২ থেকে ৩৩ হাজার টাকা। প্রথমে ধানের বাজার মূল্য বেশি না থাকায় কম দামে তা বিক্রি করতে হয়।

এদিকে কৃষকরা অভিযোগ করেন, তাদের কাছে যখন ধান থাকে তখন যদি সরকার সংগ্রহ অভিযানের ঘোষণা দেয় তাহলে বাজারে ধানের চাহিদা থাকত। তা বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হত।

জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু জানান, একটি মিলের বরাদ্দের বিপরীতে যে পরিমাণ ধান দরকার, মিল মালিকরা এর মধ্যে তা সংগ্রহ করে ফেলেছেন। সে কারণে বাজারে এখন ক্রেতা নেই।  চাষিরাও ধানের দাম পাচ্ছে না।

অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ধান কাটা ও মাড়াই করার পর তা বিক্রি না করে কিছু দিন নিজ বাড়িতে সংরক্ষণ করতে। পরে ধানের বাজার মূল্য বাড়লে তখন বিক্রি করলে তারা সহজে লাভবান হতে পারবেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেন জানান, এ বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ধানের আশাতীত ফলন হয়েছে। জেলায় যে পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে তাতে আমরা সব চাল সংগ্রহ করতে পারব না। আমরা সারা জেলায় চাল কিনবো মাত্র ২২ হাজার টন। ফলে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের উপর জেলার ধানের দামে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখছি না।

এসসি/আরআই