• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২০, ১২:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৬, ২০২০, ১১:৫৮ পিএম

নবীনগর চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড

পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় জাহাঙ্গীরকে, দাবি পরিবারের

পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় জাহাঙ্গীরকে, দাবি পরিবারের
এভাবেই রাস্তার পাশে আবাদি জমির কাদা পানিতে জাহাঙ্গীরকে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা- দৈনিক জাগরণ।

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানাধীন বাড্ডা গ্রামের গ্রাম সর্দার, ব্যবসায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর মিয়া (৫০) হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

শুক্রবার (১৫ মে) সন্ধ্যার দিকে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারলো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তার পাশের একটি জমির কাদা পানিতে ফেলে রাখে। মুমূর্ষ অবস্থায় সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহাঙ্গীর মিয়াকে মৃত ঘোষণা করে।

এদিকে শনিবার (১৬ মে) সকালে নিহত জাহাঙ্গীর মিয়াের পরিবারের সদস্যরা দৈনিক জাগরণকে জানান, শুক্রবার মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর পরই নিহতের মোবাইলে একটি কল আসে। এরপরেই বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এর প্রায় আড়াই ঘন্টা পর অপরিচিত এক ব্যক্তি মুঠোফোনে জাহীঙ্গার হোসেনের পরিচিতজনদের ঘটনার ব্যাপারে অবগত করলে ঘটনাস্থল কাদের-কুড়িলাল পৌঁছান তার পরিবারের সদস্যরা।

পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য মতে, মুঠোফোনে যোগাযোগকারী ঐ ব্যক্তি বলেন, 'জাহাঙ্গীররে মাইরা চকে ফালায় রাখছে। লাশ দেখার হইলে দেইখা যাও আর নেওয়ার হইলে নিয়া যাও।' তাদের সন্দেহ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিই ফোনে এমন ভাষায় বিষয়টি তাদের জানান।

এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, বাড্ডা গ্রাম থেকে আনুমানিক এক-দেড় কিলোমিটার দূরের কাদের-কুড়িলাল সড়কের পার্শ্ববর্তী একটি চায়ের দোকানে কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন জাহাঙ্গীর মিয়া। তারাই হঠাৎ তার ওপর চড়ায় হয়ে সঙ্গে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, বুক ও পেটে উপোর্যপুরি আঘাত করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার জিহ্বা ও নাক কেটে ফেলে এবং এক পর্যায়ে পেটে ছুরিকাঘাত করে রাস্তার ঢালের একটি কর্দমাক্ত জমিতে ফেলে পালিয়ে যায়।

পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় জাহাঙ্গীরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় প্রাপ্ত তথ্য হতেই অনুমান করা যায় যে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এর সঙ্গে নিহতের ঘনিষ্ট সহচরদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ঠিকই একই দাবি পরিবারের সদস্যদেরও। ঘটনাস্থলে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো একটি অস্ত্রও পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত রায় দৈনিক জাগরণকে জানান, প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর মাগরিবের নামাজ আদায় শেষে হাঁটতে বের হতেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িতে তার স্ত্রী তার জন্য চা বানাচ্ছিলেন কিন্তু চা না খেয়েই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এর প্রায় ঘণ্টা দুই পরে খবর পেয়ে জাহাঙ্গীর মিয়াের বাড়ি থেকে আনুমানিক এক-দেড় কিলোমিটার দূরের একটি আবাদি জমির মাঝ থেকে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহাঙ্গীর মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে খুব নির্মমভাবে আঘাত করা হয়। পুরো শরীর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। লাশের সুরাতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য উপজেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

রনজিত রায় বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এরইমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতের গ্রেফতারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযানও শুরু করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মকবুল হোসেন (নবীনগর সার্কেল) বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও তার পরিবারের লোকজন আহত অবস্থায় জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে নবীনগর হাসপাতালে নেয়। সেখানে তার অবস্থা অবনতি দেখে কুমিল্লায় স্থানাস্তর করার প্রস্তুতির সময় তিনি মারা যান।

এ হামলার বিষয়ে তদন্ত এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে ইতিমধ্যে পুলিশের কয়েকটি দল কাজ শুরু করেছে।

 

এসকে