• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম

পঞ্চগড়ে শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন 

পঞ্চগড়ে শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন 
নিম্ন আয়ের মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ছবি- জাগরণ

 

সপ্তাহখানেক ধরে টানা শৈত্যপ্রবাহে পঞ্চগড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কনকনে শীত আর হিমালয় থেকে নেমে আসা হিমেল হাওয়ার কারণে যেন থেমে গেছে জীবন। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষেরা কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন অতিবাহিত করছে। শীত নিবারণের পর্যাপ্ত বস্ত্র না থাকায় দরিদ্র, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষেরা একটু গরম কাপড়ের জন্য তাকিয়ে আছেন বিত্তবানদের দিকে। কম দামে গরম কাপড় কিনতে কেউ কেউ ছুটছে শহরের ফুটপাতে। 

সরকারি ভাবে জেলা প্রশাসন গরম কাপড় নিয়ে গরীব, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ালেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। এভাবে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে জেলার অর্থনীতির চাকাও থেমে যাবে বলে ধারনা করছেন অনেকে।
 
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে পঞ্চগড় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। হিমালয় থেকে নেমে আসা শীতল আবহাওয়ার কারণে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা দিন দিন কমছে। গত ৫/৬ দিন ধরে এই জেলায় পাঁচ হতে ছয় ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। শুক্রবার (০৪ জানুয়ারি) তাপমাত্রা একটু বৃদ্ধি পেলেও বর্তমানে আগের অবস্থায় রয়েছে। বুধবার (০২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় ৪ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে। রোববার (০৬ জানুয়ারি) এই অঞ্চলে তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বিরাজ করছে। আগামী ১০ তারিখের পর এই অঞ্চলে আবারও শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে।
    
সরেজমিনে দেখা যায়, দিনের বেলা একটু রোদ থাকলেও বিকেলের পর থেকে রোদের তাপ একেবারেই থাকে না। সন্ধ্যা হতে না হতেই ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে মানুষজন জড়োসড়ো হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর থেকে লোকজনদের আগুন পোহাতে দেখা যায়। এদিকে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। শিশুদের ডায়রিয়া, শীতজনিত নিউমোনিয়া, শাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। ফলে জেলার হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

                     বীজতলা রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছেন কৃষকরা। ছবি- জাগরণ

অপরদিকে তীব্র শীতের কারণে বোরো ধানের বীজতলাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শীতের হাত থেকে বীজতলা রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রেখেছেন কৃষকরা। 

শহরের রামের ডাঙ্গা এলাকার পান দোকানদার শাহাবুর আলম জানান, শহরের মেইন পয়েন্টে দোকান করি। বর্তমানে বেচা-বিক্রি নাই। সকাল বেলা ঠাণ্ডার কারণে দোকানেই আসতে পারি না, আবার ঠাণ্ডার কারণে সন্ধ্যার পর দোকানে বসে থাকা যায় না। আমরা গরীব মানুষ। অভাবের তারনায় দোকোনে ছুটে আসলেও বিকেল হতে হতে কাস্টমার শুন্য হয়ে যায়। আবার এনজিওর কিস্তি আছে। কী করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।

শহরের নতুনবস্তি এলাকার আজিমা বেগম, তুলার ডাঙ্গা এলাকার আরজিনা বেগম, শহিদা বেগম, রহিমা বেগম, অলিমা বেওয়া, নিমনগড় খালপাড়া এলাকার আছিয়া বেগম, বুলু মিঞা, বাবুল মিঞা জানান, এই শীতে আর জীবন বাঁচে না। এখন পর্যন্ত একখানা গরম কম্বল পাই নাই। হামরা গরীব মানুষ। গরম কাপড় কেনার হামার সাধ্য নাই। সরকারও হামার দিকে দ্যাখে না। তোমরা যদি পান তাহলে হামাক একখান করে গরম কম্বল দেন।

পঞ্চগড় পৌর সভার মেয়র তৌহিদুল ইসলাম জানান, এবারের শীত অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। তীব্র শীতের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরম কাপড়ের অভাবে হতদরিদ্র মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমার পৌর সভায় ২০ হাজারেরও বেশি অসহায়, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ বসবাস করেন। এবারের শীতে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ছয়শ কম্বল পেয়েছি। তা ইতোমধ্যে বিতরণ করে দিয়েছি। এখনও প্রতিদিন শত শত লোক পৌরসভায় ভিড় করছে কম্বলের জন্য। কিন্তু আমি এতো কম্বল পাবো কোথায়? 

                     ফুটপাত থেকে গরম কাপড় কিনছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। ছবি- জাগরণ

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এবারের শীতে ২৫ হাজার শীতবস্ত্র পেয়েছি। সহকারি কমিশনারসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমগুলো বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত হয়ে জেলার পাঁচ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন। আরও শীতবস্ত্র চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

এনএ