এক সময়ের খরস্রোতা কাজলা এখন মৃত। ভূমিখেকোদের আগ্রাসনে অনেক আগেই হারিয়ে গেছে কাজলা নদীর সৌন্দর্য্য। দীর্ঘদিন ধরেই হয়নি পুনর্খনন । ফলে নাব্যতা সংকটে স্থানীয়দের কপালে আর্শিবাদের পরিবর্তে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক কাজলা নদী।
কাজলার উৎপত্তিস্থল থেকে ভৈরব নদের সংযোগ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দখল আর দখল। ভূমিখেকোরা পাড় কেটে সমতল জমি তৈরি করেছেন। দখল করে খণ্ডে খণ্ডে ধানের বীজতলা করা হয়েছে। কিছুদিন পরেই চারা রোপণ করা হবে। শুধু ধান আবাদই নয় অনেক জায়গায় পুকুর খনন করা হয়েছে। আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসলের। নদীর যে অংশে সামান্য পানি রয়েছে তাতে কপুরিপানায় ভরা। এসব কারণে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে গেছে। মাটি কেটে নদীর পাড় সমতল এবং আবাদি জমিতে রূপান্তরিত করায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে।
পাড় দখল করে খণ্ডে খণ্ডে ধানের বীজতলা করা হয়েছে। ছবি : জাগরণ
ভাটপাড়া নীলকুঠিতে ডিসি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা হওয়ায় কাজলা নদী নিয়ে নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন স্থানীয়রা। ইকোপার্কের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে নদীর অংশ পুনর্খনন করার ফলে সারাবছরই পানি থাকে। ছোট ছোট নৌকায় পুনর্খননকৃত অংশে চলাচল করেন দর্শনার্থীরা। এমনভাবে নদীর পুরো অংশ পুনর্খনন করা গেলে কৃষি ও মৎস্য সম্পদের জন্য বিরাট আর্শিবাদ হবে কাজলা এমনটা জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, কাজলা নদী একটি ঐতিহাসিক নদী। একটা সময় এখান দিয়ে কলকাতার সঙ্গে নৌপথের যোগাযোগ ছিল। ইংরেজ বণিকরা এই নদী দিয়ে এদেশে যাতায়াত করতেন। কাজলা নদীর তীরেই ভাটপাড়া নীল-কুঠি প্রতিষ্ঠিত হয়। এক সময় এই নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। মাছ পাওয়া যেতো প্রচুর পরিমাণে। এখন সেগুলো আজ শুধুই ইতিহাস।
পুনর্খনন না হওয়ায় নদীটি মৃতপ্রায়। ছবি : জাগরণ
গাংনী উপজেলার বড় নদী হচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদী। এই মাথাভাঙ্গা নদীর কাজিপুর ইউনিয়নের অংশ থেকে কাজলা নদীর উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থল থেকে এ নদী হিন্দা মাঠ, নওয়াপাড়া, ভাটপাড়া, গাড়াডোব এবং সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রাম হয়ে ভৈরব নদে মিশেছে। মাথাভাঙ্গা নদীটি গঙ্গার শাখা নদী ভারতের জলঙ্গীর সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে কাজলা। কিন্তু নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় বর্ষাকালে নদীর দুই পাড়ের বেশির ভাগ আবাদি জমি পানিতে ডুবে যায়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় সেচের পানির সংকট।
কাজলা নদী রক্ষার বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, পুনর্খনন না হওয়ায় নদীটি মৃতপ্রায়। নদীর প্রাণ ফিরিয়ে এলাকার মানুষের আর্শিবাদে পরিণত করতে পুনর্খনন জরুরি। পুনর্খননের চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুনর্খনন করে কাজলা নদীর আগের রূপ ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
এসএমএম