• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২১, ০৫:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৭, ২০২১, ০৫:০৩ পিএম

তাল পাখায় ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন তাদের

তাল পাখায় ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন তাদের

বাড়ির উঠোন কিংবা পুকুর পাড়, গাছের ছায়ায় বসে গল্প করতে করতে চলছে তালপাতার পাখা তৈরির কাজ। নেই কোনো প্রশিক্ষণ, নেই কোনো কর্মশালা, চোখে দেখেই বছরের পর বছর ধরে এভাবে সুই, সুতা আর তালপাতা দিয়ে পাখা তৈরি করছেন বগুড়ার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হাতে বানানো পাখার ব্যবহার অনেকটাই কমেছে। তবে বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের অড়োলা, আতালপাড়া, যোগীরভবন, কর্ণিপাড়া গ্রামের পাঁচশতাধিক পরিবার এখনো তালপাতার পাখা তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করে। এখানকার ১ হাজার নারী-পুরুষ দৃষ্টিনন্দন এই পাখা তৈরি করে নিজের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।

এখানকার বাসিন্দারা গত ৫০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। বাসিন্দারা পাখা তৈরির জন্য এই গ্রামগুলো এখন পাখার গ্রাম হিসেবেও পরিচিত। মূলত বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও চৈত্র মাসে যখন গরম বৃদ্ধি পায় তখন তাল পাখার চাহিদাও বাড়ে। আর এখানকার পাখা যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

পাখা তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তালপাতা দিয়ে মোট পাঁচ ধরনের পাখা তৈরি করেন তারা। এগুলো হলো ডাটা পাখা, হাতল পাখা, ঘুরকি পাখা, পকেট পাখা ও আমান পাখা। এর মধ্যে প্রতি পিস হাতল পাখা পাইকারি বিক্রি করা হয় ১৫ থেকে ১৬ টাকায় এবং পকেট পাখা বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৪ টাকায়।

স্বল্প সুদে ঋণ ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে এই শিল্পটি আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন এখানকার কারিগররা।

পাখা তৈরির বিষয়ে রেজাউল করিম নামের এক কারিগর জানান, বগুড়া ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পৌষ মাসের শুরুতে তালপাতা কিনে আনেন তারা। প্রতিটি পাতা ডাগুরসহ কিনতে খরচ পড়ে পাঁচ টাকা। এরপর সতর্কতার সঙ্গে এই ডাগরগুলোকে পাখার আকারে গোল করে কাটতে হয়। এরপর পানিতে ভিজিয়ে কয়েকদিন রোদে শুকাতে হয়। রোদে শুকানোর পর গুচ্ছ হয়ে থাকা পাতাগুলো বাঁশের কাঁটির মাধ্যমে প্রসারিত করা হয়। এরপর গোলাকার পাতাটি রঙ করে বাঁশের খিল দিয়ে দুপাশ আটকিয়ে সেলাই করা হয়।

রেজাউল করিম আরো জানান, সবমিলিয়ে প্রতিটি রঙিন পাখা তৈরি করতে তাদের আট টাকা খরচ হয়। এরপর প্রতি পিস পাখা ১৬ থেকে ১৮ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেন। দিনে একেকজন ১৫০টি পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারে।

আগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে এসে ব্যবসায়ীরা পাখা কিনে নিয়ে গেলেও করোনার কারণে এখন তা বন্ধ আছে বলে জানান কয়েকজন কারিগর। এতে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।

নারী কারিগররা জানান, পুরুষরা শুধু পাতা নিয়ে এসে পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে দেয়। এরপর সেগুলোকে রঙিন সুই-সুতা দিয়ে সেলাই করে পাখার সম্পূর্ণ রূপ তারাই দেন।

বর্তমানে কাঁচামাল সংকট ও মুনাফা কম হওয়ায় গ্রামের অনেকে এই পেশা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তবে এখনো সুইয়ের প্রতিটি ফোঁড়ে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনে এই অঞ্চলের অভাবগ্রস্ত মানুষরা।