• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১, ২০২১, ১০:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১, ২০২১, ১১:০৬ এএম

সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া

বাড়াচ্ছে করোনার ভারতীয় ধরন

বাড়াচ্ছে করোনার ভারতীয় ধরন

সীমান্তবর্তী মানুষের আসা-যাওয়ায় রংপুরসহ পুরো বিভাগের ৮ জেলায় বেড়ে চলেছে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা।

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরসহ পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, দিনাজপুরের হিলি ও রাধিকাপুর এবং কুড়িগ্রামের রৌমারীর তুরারোড সীমান্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন চিকিৎসা ও জীবিকার প্রয়োজনে চলাফেরা করছে সহস্রাধিক মানুষ। উত্তরের বিভাগীয় নগরী রংপুরেও আসছেন অনেকে।

এর মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনটাই আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিভাগের। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন রংপুরবাসীরাও। এই বিষয়ে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে দেশে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও সীমান্তবর্তী মানুষগুলো তাদের সংস্পর্শে থাকছেন। এছাড়া আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে অবৈধ পথে চোরাকারবারিরা যাতায়াত শুরু হবে। তাদের মাধ্যমেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো রংপুরও করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। রংপুর বিভাগে পাঁচটি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মানুষের যাতায়াত রয়েছে। এসব সীমান্ত দিয়ে বৈধ পথে কিছু লোক এলেও তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। তবে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় তাদের আত্মীয়স্বজনেরাও তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। এতে তারা কতটুকু নিরাপদ থাকছেন। এ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ২৮২ জনের দেহের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৮৯১ জনের। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯২। করোনা শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুড়িমারী-পাটগ্রাম থেকে প্রতিদিন যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস রংপুরে আসে অন্তত ৫০টি। দিন শেষে ওই মাইক্রোগুলো যাত্রীদের নিয়ে ফিরে যায়। প্রতি মাইক্রোতে ১০ জন করে হলেও শুধু বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকা থেকে প্রতিদিন ৫০০ মানুষ রংপুরে আসা-যাওয়া করে। 

পাটগ্রাম থেকে সোমবার (৩১ মে) রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসা জিয়াউর রহমান মিলন নামের এক ব্যক্তি জানান, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই চিকিৎসাসহ কোনো না কোনো কাজে রংপুরে আসেন। মাইক্রোবাসে যাত্রী আনা-নেওয়া করায় রংপুরের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটা সহজ হয়েছে।আসা-যাওয়া জনপ্রতি ভাড়া দিতে হয় ৬০০ টাকা।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী ও সালেক মিয়া মাইক্রোবাসে রংপুরে আসেন কাপড়ের দোকানের মালামাল কেনার জন্য। তিনি জানান, বুড়িমারী থেকে বাসে লালমনিরহাট হয়ে অন্তত ৫০ কিলোমিটার বেশি ঘুরে রংপুরে যেতে হয়। রাস্তাও খারাপ, এতে কাজ শেষ করে ফিরে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সে কারণে নিয়মিত মাইক্রোতে তিস্তা ব্যারাজ হয়ে রংপুরে আসেন। তবে করোনাকালে সীমান্ত এলাকা থেকে এভাবে আসা-যাওয়ায় ঝুঁকি বাড়ে, এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

এদিকে পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন ও বুড়িমারী ইমিগ্রেশন পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, প্রথম দফায় ২৬ এপ্রিল থেকে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয় ১৪ দিনের জন্য। গত ৮ মে দ্বিতীয় দফা আরও ১৪ দিন বাড়ানো হয়।

ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুমতি নিয়ে ২৮ এপ্রিল প্রথম দিন ৬ ব্যক্তি দেশে ফেরত আসেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ৩২৮ জন দেশে ফিরেছেন। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চারজন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন মোট ৯২ জন।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদ ১৫ দিনের কম থাকা যাত্রীরা দেশে ফিরতে পারবেন। ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশি উপহাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে এনওসিসহ করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে এ অভিবাসন কেন্দ্র দিয়ে বাংলাদেশ ও একইভাবে ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আহাদ আলী বলেন, “ভারত থেকে যারা আসছেন, তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। কিন্তু তাদের আত্মীয়স্বজনরা দেখা করছেন। এতে ভারতীয় ধরন সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।”

এছাড়া অবৈধপথে যাওয়া-আসা করা মানুষদের দ্বারাও করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।