• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০৯:২৯ এএম

দেখভালের অভাব

গলাইদড়িঘাট সেতু ঝুঁকিপূর্ণ, বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা

গলাইদড়িঘাট সেতু ঝুঁকিপূর্ণ, বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা
যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে -ছবি : জাগরণ

 

দেখভালের অভাবে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর নির্মিত গলাইদড়িঘাট সেতুটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সেতুটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি কয়েকবার মেরামত করা হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি বরং অবনতি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে ছোট-বড় শত শত যানবাহন ছাড়াও হাজারো মানুষ পারপার হচ্ছেন এ সেতু দিয়ে। ভারী যানবাহনের ভারে জরাজীর্ণ সেতুটি যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানা যায়, ১৯৯৫ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা-মুজিবনগর সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর গলাইদড়িঘাটে ভবিষ্যতে প্রশস্ত করার ব্যবস্থা রেখে বেইলি সেতু নির্মাণ করে। ১৯৯৫ সালের ২ আগস্ট তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী অলি আহম্মদ সেতুটির উদ্বোধন করেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মিত সেতুটির মোট প্রশস্ত ১৩ ফুট। তার মধ্যে দুই পাশে রেলিংয়ের ২ ফুট বাদ দিয়ে চলাচলের জায়গা মাত্র ১১ ফুট। যে কোন দিক থেকে এই সেতুটির ওপর একটি বাস বা ট্রাক উঠলে পাশে আর জায়গা থাকে না। ফলে দু’দিকে থেকে যাতায়াতকারী বাস, ট্রাক বা অন্য কোনো যানবাহন সেতু পার হওয়ার সময় যে কোনো একদিকের যানবাহন সেতুর সামনের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। 

সেতুর উভয় পাশে অবৈধভাবে রাস্তার জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে দোকানপাট।

সেখানকার উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ রাস্তার ফাঁকা জায়গার পাশ থেকে মাটি সরে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হওয়ার কারণে পারাপারের অপেক্ষায় মালবাহী গাড়িগুলোকে একপাশে কাত হয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এর ফলে একই সময়ে দুইদিক থেকে আসা যানবাহনগুলোকে সেতু পারাপার হতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। 

সেতুটির লোহার বিমের বিভিন্ন স্থানে ফাঁটল ধরেছে। তা ছাড়া পাটাতনের বিভিন্ন স্থানে জং ধরে গেছে। ঢিলা হয়ে গেছে নাট-বল্টু। অনেক স্থানের নাট-বল্টু ভেঙে নষ্ট হয়ে পাটাতন আলগা হয়ে গেছে। ফলে ভারী যানবাহন সেতুর ওপরে উঠলে ওই স্থান দেবে যায় এবং বিকট শব্দ হয়।

ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে ভারী যানবাহন -ছবি : জাগরণ

যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে সেতুটি পারাপার হন। সেতুর দুপাশের রেলিংয়ের অনেকাংশের পাইপ চুরি হয়ে গেছে। ফলে ওই স্থান ফাঁকা হয়ে থাকায় সেতু পারাপারের সময় পথচারী বা যানবাহন সেতুর নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীর পশ্চিম পাশে সেতুর নিচ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে সেতুর শেষ প্রান্তের পিলারটিও হুমকির মুখে পড়েছে। পশ্চিম পাশে সেতুর নিচে নদীর জায়গা দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন অনেকে। সেতুর উভয় পাশের ডান-বামে নদীর নাম, সেতুর নাম, নির্মাণের সন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ইত্যাদি লেখাসংবলিত দুটি করে সাইনবোর্ড থাকলেও বর্তমানে সেগুলো দখল করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। 

সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন মুজিবনগর থেকে ছেড়ে আসা ৫-৬টি পরিবহন সংস্থার প্রায় অর্ধশতাধিক বাস, আঞ্চলিক রুটের বাস, পণ্যবহী ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ শত শত যানবাহন ও পথচারীরা চলাচল করে থাকে। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে মুজিবনগরে বনভোজন ও শিক্ষা-সফর করার জন্য প্রতিদিন কয়েক শত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে চড়ে হাজারো শিক্ষার্থী যাতায়াত করে থাকে। এ অবস্থা চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। আবার এ সময়ের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে আখবোঝাই শত শত পাওয়ার ট্রলি, ট্রাক্টর ইত্যাদি যাতায়াত করে। দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের ধারে অবস্থিত ডজনখানেক হাট-বাজার থেকে কৃষিপণ্যসহ নানা রকম মালামালভর্তি ট্রাক এ সেতুর ওপর দিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।

স্থানীয়রা জানান,  চার বছর আগে সেতুর পাটাতনের নিচের গার্ডারের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরার ফলে কয়েক স্থানে পাটাতন দেবে যায়। অভিযোগ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত এক বছরে বেশ কয়েকবার জোড়াতালি দিয়ে সে সব স্থান মেরামত করে। সেই সঙ্গে সেতুর দুপাশে ‘ধীরে চলুন, সামনে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু, ৫ টনের বেশি মালামাল বহন করা নিষেধ’ লেখাসংবলিত লাল রঙের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায়িত্ব শেষ করে। অতিরিক্ত পণ্য বহনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এ সেতু যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

কোনো দুর্ঘটনার ঘটার আগেই সেতুটি মেরামত করে যানবাহন ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে চুয়ডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানান, জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই মেরামত করা হবে।

এসএমএম