• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০৯:৫৮ এএম

জনবল সংকটে সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন

জনবল সংকটে সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন

 

নওগাঁ ও বগুড়া জেলার মুখে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন। ১৮৭৮ সালে নির্মিত স্টেশনটি লর্ড হার্ডিঞ্জের নেতৃত্বে ১৯০০ সালে জংশন স্টেশনে রূপান্তরিত হয়। সেই সময় থেকে এখনো এই স্টেশনে বিন্দুমাত্র আধুনিকতার ছোঁয়া স্পর্শ করেনি। তাছাড়া চরম জনবল সংকটের কারণে নাজুক অবস্থায় আছে স্টেশনটি।

জনবলের অভাবে উন্নত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই স্টেশন দিয়ে চলাচল করা হাজার হাজার মানুষ। বর্তমানে সড়ক পথের বেহাল দশার কারণে ট্রেনমুখী হচ্ছেন মানুষ। প্রতিদিন এই স্টেশন দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে যাত্রীবাহী ৩৪টি মিটারগেজ ও ব্রডগেজের ট্রেন। এছাড়া মালবাহী ট্রেনতো আছেই।

সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা, এই স্টেশনের প্রধান শাখা হচ্ছে পরিবহন শাখা। এই পরিবহন শাখায় দীর্ঘদিন যাবত চরম জনবল সংকট বিরাজ করছে। স্টেশন কাঠামো অনুসারে পরিবহন শাখায় ৫৯জন থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু আছেন ২৬ জন। শূন্য পদ ৩৩ টি।

স্টেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ন শাখা হচ্ছে বাণিজ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে মালামাল পরিবহনের সবচেয়ে সুবিধাজনক ও লাভজনক মাধ্যম বাণিজ্য শাখা। এই শাখায় ৫২জন থাকার কথা থাকলেও আছেন ১৭ জন, শূন্য পদ ৩৫টি।

একটি স্টেশনের হার্ট হচ্ছেন স্টেশন মাষ্টার। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই স্টেশনটির হার্ট নেই বললেই চলে। জোড়াতালি দেয়া দুর্বল হার্ট দিয়ে চলছে স্টেশনের কার্যক্রম। স্টেশনে মোট ১৭জন স্টেশন মাষ্টার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৭ জন। নেই ১০ জন স্টেশন মাষ্টার। যারা আছেন তাদেরকেই পরিবার-পরিজন ছেড়ে দিনরাত পাহারা দিতে হচ্ছে এতবড় একটি স্টেশনকে।

স্টেশনে বিভিন্ন শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য ওয়েটিং রুম রয়েছে ৩টি। প্রতিটি ওয়েটিং রুমে ২জন করে ৬ জন আয়া থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১জন। তাই স্টেশনের ওয়েটিং রুমগুলো অধিকাংশ সময়ই বন্ধ রাখা হয়। আর রুমগুলো বন্ধ থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রীদের চরম নিরাপত্তাহীনতায় স্টেশনে অপক্ষো করতে হয়।

স্টেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা টিকেট শাখা। যে শাখা থেকে সরকার প্রতিদিন আয় করছে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব। সেই টিকেট শাখায় ৮ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৫ জন। তাই অনেক সময় স্টেশন কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই ভাড়া লোক দিয়ে  টিকেট বিক্রয় করেন।

দেখা গেছে, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত জরাজীর্ণ ভবনে চলছে এই স্টেশনের সকল কার্যক্রম। এতে যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এমনটাই আশঙ্কা করছেন এই স্টেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাই সকলের দাবী এখানে একটি আধুনিক ও মানসম্মত রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ।

সম্প্রতি ঢাকাগামী দুটি ট্রেন পঞ্চগড় থেকে চলাচল শুরু করায় নতুন করে বেড়েছে আসন সংকট। এই স্টেশনের জন্য যে পরিমাণ আসন বরাদ্দ ছিলো তা থেকে কেটে নেয়া হয়েছে প্রায় অর্ধেক আসন।

এতে করে সান্তাহার স্টেশনের যাত্রীসহ স্টেশন কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিনই চরম বিড়ম্বনার পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই টিকেট ছাড়া ট্রেনে উঠে ট্রেনের কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সরকারকে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলাচল করছেন।

সান্তাহারের জনগণের দাবী রেলওয়ের অনেক জায়গা বেদখল হয়ে আছে সেগুলো উদ্ধার করে একটি আধুনিক ও মানসম্মত রেলওয়ে স্টেশন অতিদ্রুত নির্মাণ করা হোক। যাত্রীদের আরো উন্নত সেবা প্রদানে জনবল নিয়োগের দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে স্থানীয়রা বলেন, বর্তমান স্টেশন মাস্টারের তদারকিতে পরিবেশ অনেকটাই বদলে গেছে। আগে এই স্টেশন পকেটমার, চোরদের আস্তানা ছিলো। বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা ছিলো না। কিন্তু স্টেশন মাস্টারের নজরদারিতে মানসম্মত পরিবেশ অনেকটাই ফিরে এসেছে। সরকার প্রধানের কাছে তারা এই স্টেশনের বেহাল দশা দূর করতে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আবেদন জানান।

সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার মো: রেজাউল করিম (ডালিম) বলেন, সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে আমি স্টেশনে মানসম্মত সেবা প্রদান ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে আসছি। তবে স্টেশনের দুরাবস্থা দূর করার জন্য অতিদ্রুত জনবল নিয়োগ প্রয়োজন। আমি প্রতিনিয়ত রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এই স্টেশনের জনবল সংকট ও বেহাল দশার কথা লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়ে আসছি কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি।


সাইসে