• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯, ০৩:২৩ পিএম

বরিশালে ডানা মেলছে না অতিথি পাখি

বরিশালে ডানা মেলছে না অতিথি পাখি
বরিশালের দুর্গাসাগরের পরিবেশ অনেক মনোরম –ছবি : জাগরণ

 

শীত তার বিদায় ডানা মেলার অপেক্ষায়। কিন্তু এখনো ডানা মেলেনি অতিথি পাখি। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে অতিথি পাখির আসা যেন প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু গত এক যুগের ব্যবধানে বরিশালে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে অতিথি পাখির আগমন। চলতি মৌসুমে অতিথি পাখি আসেনি বললেই চলে।

এর কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যের অভাব, শব্দ দূষণ এবং পাখি শিকারকেই দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, নিরাপদ আশ্রয়স্থল না থাকার কারণেই অতিথি পাখিদের আগমন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালীন ঋতুতে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ বরফে ঢাকা পড়ে। তাই অতিথি পাখিগুলো বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশেও বালুহাঁস, বিদেশি পানকৌড়ি, গাঙ্গচিল, টিয়া, বক, শালিকসহ বিভিন্ন অতিথি পাখি শীত মৌসুমেই এসে থাকে।

যেসব অঞ্চলে হাওর-বাওর, বিল-ঝিল, দীঘি, বড় পুকুর, সমুদ্র সৈকত থাকে সেসব অঞ্চল অতিথি পাখি তাদের আবাসস্থল হিসেবে বেছে নেয়। তবে বরিশালে পরিবেশের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে এবার অতিথি পাখিদের তেমন দেখা মিলছে না।

বরিশালে অতিথি পাখির আবাসস্থল হিসেবে রয়েছে দুর্গাসাগর, সারসী দীঘি, তালতলী, পদ্মা দীঘি, দপদপিয়া, লহারহাটসহ বিভিন্ন স্থান। এসব স্থানে অতিথি পাখির অবাধ বিচরণের জন্য নেই কোনো সুব্যবস্থা। খাবারের (মাছ) সল্পতার কারণে এবার শীতে কিছু পাখি আসলেও তা আবার চলে গেছে।

বরিশালের অন্যতম পর্যটন এলাকা হচ্ছে দুর্গাসাগর। বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় অবস্থিত এই দুর্গাসাগর। মাধবপাশা ছিল চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের সর্বশেষ রাজধানী। ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের তৎকালীন রাজা শিব নারায়ণ তার স্ত্রী দুর্গা রাণীর নামে খনন করেন বিশাল এই জলাধার।

১৯৯৬ সালে প্রায় ৪৬ একরের এই দীঘিকে দুর্গাসাগর দীঘি উন্নয়ন ও পাখির অভয়ারণ্য প্রকল্পের আওতায় নিয়ে পরিণত করা হয় অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে। যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানান, মাত্র এক দশক আগেও পুরো শীত মৌসুম জুড়েই দুর্গাসাগর দীঘি মুখরিত থাকত হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে। কিন্তু ২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই দুর্গাসাগরে অতিথি পাখির আগমন কমে যায়।

তারা আরও জানান, জানুয়ারি মাসের প্রথম ২ কী ৩ তারিখে পাঁচ শতাধিক অতিথি পাখি ঝাঁক বেঁধে দুর্গাসাগরে নেমেছিল। কিন্তু মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টার পরই পাখিগুলো উড়ে চলে যায়। এর পর মাঝে মধ্যে ৪/৫টি করে পাখি আসলেও সেগুলো বেশিক্ষণ থাকছে না।

দীঘির পাড়ে ঘুরতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ঢাকা থেকে বরিশালে ঘুরতে এসেছি। শুনেছি বরিশালের দুর্গাসাগরের পরিবেশ অনেক মনোরম; আর শীতে এখানে অতিথি পাখিরা আসে। তাই সন্তানদের নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে অতিথি পাখি নেই বললেই চলে।
 
লুবনা আক্তার নামে অপর এক নারী পর্যটক বলেন, অনেক আগে একবার এসেছিলাম এখানে। তখন অতিথি পাখির সমারোহ ছিল। এখানের পরিবেশটাও ভালো। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে পুনরায় এসেছি দুর্গাসাগর ভ্রমণে। এখানে মনোরম পরিবেশ আছে ঠিকই কিন্তু নেই অতিথি পাখি।

অতিথি পাখি না আসা প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হাসিনুর রহমান বলেন, ‘এক দশক ধরেই দুর্গাসাগরসহ বরিশালের আশপাশে অতিথি পাখিদের আসা যাওয়া নেই। এর প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। সাইবেরিয়ান এই অতিথি পাখি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার পরিবেশ না পাওয়ায় হয়তো এসেও চলে যাচ্ছে। আবার শব্দদূষণ ও খাদ্য সংকটও পাখিদের না আসার কারণ হতে পারে।

অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মো. আব্দুল হালিমও অতিথি পাখির আগমন কমে যাওয়া এবং আসলেও না থাকার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণমুক্ত পরিবেশ না থাকাকেই দায়ী করেছেন। তবে তদন্ত করে এর সঠিক কারণ উদঘাটন করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

এনএ