• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯, ০১:৫৭ পিএম

ই-বুকের আধিপত্য বাড়লেও কমেনি ছাপা বইয়ের আবেদন 

ই-বুকের আধিপত্য বাড়লেও কমেনি ছাপা বইয়ের আবেদন 
ছবি: সংগৃহীত


ইন্টারনেটের নানা সুবিধার কল্যাণে অনেক কিছুই যখন হাতের মুঠোয়, তখন ইচ্ছে করলেই পড়ার কাজটিও সেরে নেয়া যায় সহজেই। হাতে থাকা স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কম্পিউটারে সাবলীলভাবে পড়া যায় ই-বুক। কিন্ডেলের মতো ই-বুক রিডার থাকলে তো আরও ভালো। আঙুলের ছোঁয়ায় উল্টানো যায় পৃষ্ঠা। শুধু পড়াই নয়, চাইলে নিজেও তৈরি করা যায় ইলেকট্রনিক বই (ই-বুক)। কাগজে ছাপা বইয়ের বিকল্প ই-বুক নামিয়ে (ডাউনলোড) পড়ার কাজটিও করেন অনেকেই। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ই-বুকও প্রকাশিত হচ্ছে এখন।
 
এমন বাস্তবতায় কাগজে ছাপা মোটা একটা বইয়ের কদর কি আছে?- গত কয়েক বছর ধরে এ প্রশ্নটি বারবার ফিরে ফিরে আসছে। সম্প্রতি ই-বুকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্নটির উত্তর পাওয়াও জরুরি হয়ে পড়েছে। উত্তরে জানা গেছে, মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু বইয়ের আবেদন এখনো ফুরায়নি। আর সেজন্যই অমর একুশে বইমেলায় সকলে ছুটে আসছেন প্রিয় বন্ধুর সান্নিধ্যে। 

এ বিষয়ে প্রকাশক ও মেলায় আগত পাঠক-দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বইয়ের আবেদন সব সময়ই অন্য রকম। যত কিছুই আবিষ্কার হোক না কেন, বইয়ের স্থান কেউ নিতে পারবে না। একই তারা জানান, বই শুধু পড়ার জন্যই শ্রেষ্ঠ নয়, উপহারের ক্ষেত্রেও সেরা।

ছাপা বই ও ই-বুক- এই বিতর্কের প্রসঙ্গে বিজয় প্রকাশের সত্ত্বাধিকারী তপন মাহমুদ বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশ অনেকাংশই পিছিয়ে থাকে। সেজন্য আমি মনে করি ই-বুক নিয়ে চিন্তিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘ছাপা বইয়ের কদর আলাদা। ছাপা বই খুললে যে সুভাষ পাওয়া যায়, তা কি ই-বুকে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আমি মনে করি, ই-বুক আমাদের প্রকাশনা শিল্পে কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না।’

অ্যার্ডন পাবলিকেশনের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসাইন বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির নতুন কোন প্রোডাক্ট যখন বাজারে আসে, তা ভীতিকর হিসেবেই খ্যাতি পায়। পরবর্তীতে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। সে হিসেবে বলতে পারি, ই-বুক এখনো কোনো প্রকার ভীতির সঞ্চার করতে পারেনি।’ ই-বুক কখনোই ছাপা বইয়ের স্থান নিতে পারবে না- উল্লেখ্ করে এই প্রকাশক আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যেই অনেক ই-বুক নির্মাতারা আমার সঙ্গে প্রকাশনীর বইগুলোর জন্য যোগাযোগ করেছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ই-বুক ছাপা বইয়ের বিকল্প হতে পারে না।’

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বিভাস’-এর সত্ত্বাধিকারী রামশংকর দেবনাথেরও একই মত। তিনি বলেন, ‘ছাপাই বইয়ের আকর্ষণ কমছে, এটা আমি মানি না। কারণ প্রতিনিয়ত পাঠক বাড়ছে। হয়তো জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় কম, কিন্তু বাড়ছে তো। সেখানে ই-বুকের স্থান অনেকাংশই কম।’ আগামী অর্ধশতা¦ন্ধীতেও ছাপা বইয়ের আর্কষন কমবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাপা বই আপনি শুয়ে-বসে যেভাবে খুশি পড়তে পারেন। কিন্তু, ই-বুকের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। আর কতজন পাঠকের কাছেই বা কম্পিউটার বা ই-বুক রিডার আছে?’।


এদিকে আজ শুক্রবার ছিল অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন। প্রথম দিনের মতো এদিনও অনেকেই ছুটে এসেছিলেন প্রিয় বন্ধু সান্নিধ্যে। মাঘের হালকা হিমেল আবহাওয়ায় পাঠকেরা ঘুরে ফিরেছেন এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। এদিন অনেকেই মেলায় এসেছিলেন পরিবার পরিজন নিয়ে। তাদের কেউবা বই কিনেছেন, আবার কেউ সংগ্রহ করে নিয়েছেন বুকলিস্ট। প্রথম দিনের মতো তৃতীয় দিনেও অনেকেই বিভিন্ন প্রকাশনীতে খুঁজে ফিরেছেন প্রিয় লেখকের নতুন বই। আর বিক্রিও খুব একটা খারাপ ছিল না। মেলায় প্রবেশের জন্য খুব একটা লম্বা লাইন না হলেও মেলায় প্রবেশের ভিড় ছিলো বেশ। এরপর সময় যত এগিয়েছে ভিড় ততই বেড়েছে। পুরো মেলা ঝুড়েই থাকবে বইপ্রেমীদের এমন প্রাণের উচ্ছাস- এমনটাই আশা করছেন প্রকাশক ও লেখকরা।

বিএস