• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৯, ০৮:৩৫ এএম

বাঁশের সাঁকোই ১০ হাজার মানুষের ভরসা

বাঁশের সাঁকোই ১০ হাজার মানুষের ভরসা

 

মঙ্গলবার (হাটবার) পুরো সপ্তাহের খরচ মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে পিলাক খাল পার হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ষাটোর্ধ্ব আদিবাসী রমনী মোহন ত্রিপুরা। খাগড়াছড়ি’র গুইমারা উপজেলার প্রত্যন্ত নাক্রাই পাড়ার বয়স্ক এ বৃদ্ধের জীবদ্দশায় এভাবে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঘরে ফেরা নৈমিত্তিক ব্যাপার বলে জানান তিনি।

শুধু রমনী ত্রিপুরাই নয় সাইংগুলিপাড়া, কুকিছড়া, নাক্রাই, বড়ইতলী, তৈকর্মা, সিন্দুকছড়ি ও সিন্দুকছড়ি মুখপাড়াসহ ছোট বড় ৭ গ্রামের প্রায় ১০ সহস্রাধিক মানুষের একই দশা। উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে এ ৭টি গ্রামকে আলাদা করে দিয়েছে পিলাক নামের খালটি। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের গুইমারা উপজেলার সেনা রিজিয়ন সন্নিকটে আমতলীপাড়া কাঁচা রাস্তাটি এসব গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র পথ।

স্বাধীনতার এত বছর পরও গড়ে উঠেনি গুইমারা উপজেলার সাইংগুলিপাড়া পিলাক খালের উপর সংযোগ সেতু। শুষ্ক মৌসুমে খালের উপর চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টি বা খালের পানি বৃদ্ধি পেলে সপ্তাহেরও বেশি সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয় এ গ্রামের মানুষদের।

উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের বড়পিলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ সংলগ সাইংগুলিপাড়া খালে ব্রিজের অভাবে যুগ যুগ ধরে দুটি ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হয়। এছাড়া দুই ওয়ার্ডের বন্ধোবস্তি প্রাপ্ত ৮২০টি বাঙালি পরিবার হারাচ্ছে ভূমির দখল ও বসতভিটা। খালটি অপরদিকে যানবাহন চলাচলের বাধা হওয়ায় ঐ এলাকাটি গড়ে উঠেছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। অসুস্থ রোগী এবং গর্ভবতীদের দুর্ভোগ চরমে।

স্থানীয় বাসিন্দা কংচাই মারমা, রমনি ত্রিপুরা ও অনিল চাকমা জানান, পিলাক খালের ওপারে বড়ইতলী, কুকিছড়া, নাকরাই, তৈকর্মাপাড়া, সিন্ধুকছড়িসহ গ্রামের হাজার হাজার মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরা বাঙালি জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবে আজও এগিয়ে আসেনি কোন জনপ্রতিনিধি।

সাইংগুলিপাড়া রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিত মোহন সেন ত্রিপুরা জানান, একদিকে দুর্গম ও কাঁচা রাস্তা অন্যদিকে নদীর উপর নেই কোন সেতু। ফলে গাড়ি চলাচলের উপযোগী না হওয়ার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো পায়ে হেঁটে কিংবা ঝুঁকি নিয়ে মটর সাইকেলই চলাচলেই একমাত্র ভরসা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দরিদ্র কৃষিজীবী আদিবাসীদের উৎপাদিত কৃষিজাত সামগ্রী পরিবহনের সমস্যায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। আদিবাসী শিশু-কিশোরদের গুইমারা সদরে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে খালের পানিতে নেমে কাঁদা মাটি পেরিয়ে। অসুস্থ বা বৃদ্ধ মানুষের কষ্টের সীমা নেই এলাকার মানুষগুলোর।

স্থানীয় হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী জানান, সাংইগুলিপাড়া সংলগ্ন পিলাক খালের উপর সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। অবহেলিত এ জনপদে সেতু ও সড়ক নির্মাণ হলে বদলে যাবে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান। তবে ১৯৯৭ সালে কল্প রঞ্জন চাকমা খাগড়াছড়ি’র সাংসদ থাকা অবস্থায় এখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে একটি সেতু বরাদ্দ হলেও অদৃশ্য কারণে তা বাতিল হয়ে যায় বলে তিনি জানান। এ খালের উপর দ্রুত সেতু নির্মাণের জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এবিষয়ে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। উপজেলা প্রশাসনের স্বল্প বরাদ্দে পিলাক খালের উপর সেতু নির্মাণ সম্ভব নয় বিধায় এলাকাটি পরিদর্শন করে পিলাক নদীর উপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ আশ্বাস দেন তিনি।  

খ.তা/