• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১, ২০১৯, ০৮:৫৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১, ২০১৯, ১০:০৯ এএম

অরক্ষিত মহাসড়কে ডাকাতি ও চাঁদাবাজি, সিদ্ধিরগঞ্জে আটক ১৩ 

অরক্ষিত মহাসড়কে ডাকাতি ও চাঁদাবাজি, সিদ্ধিরগঞ্জে আটক ১৩ 

ঈদকে ঘিরে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে দেশের মহাসড়কগুলো। চলছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও ডাকাতি। পাশাপাশি পরিবহন টার্মিনালগুলোতে চলছে দালালি। তাই অভিযোগের ভিত্তিতে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ রাখতে মহাসড়কে র‌্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার (১ জুন) বিকালে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ১৩ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে আটক করেছে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৪৯ হাজার টাকা ও ১৩টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। 

অপরদিকে সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় পুলিশের গাড়িতে ডাকাতদল হামলা করে ডাকাতির চেষ্টা চালায়। গত রোববার মধ্যরাতে উপজেলার কোরপাই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, রাতে মহাসড়কে একদল ডাকাত টহলরত দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশের প্রাইভেটকারকে লক্ষ্য করে রড ছুড়ে মেরে। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে ডাকাত দলের গুলি বিনিময় হয়। এতে শাহিন কাদির নামে পুলিশের এসআই আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে এক ডাকাতকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত হাবিবুল বাসার (২৮) কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মাসিকারা গ্রামের মৌলভী বাড়ির ধনু মিয়ার পুত্র।

স্থানীয় দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আবু ইউসুফ ফসিউজ্জামান জানান, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশের একাধিক দল কাজ করে যাচ্ছে। সেই কাজের অংশ হিসাবে রোববার রাতে দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোহাম্মদ শাহিন কাদির ফোর্সসহ প্রাইভেটকারে করে মহাসড়কে টহল দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত ২টার দিকে বুড়িচং উপজেলা মোকাম ইউনিয়নের আগাতা ফিড মিলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একদল ডাকাত কৌশলে পুলিশের গাড়ির পেছনে রড ছুড়ে মারে। এ সময় পুলিশের প্রাইভেটকারটিকে ৭/৮ জনের একটি ডাকাতদল ঘিরে ফেলে। গাড়িতে পুলিশ থাকায় তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে আহত অবস্থায় এক ডাকাতকে আটক করে পুলিশ। তবে ডাকাত দলের বাকি সদস্য ডাকাতদল পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ঘটনাস্থল থেকে ডাকাত দলের ফেলে যাওয়া বিপুল সংখ্যক দেশিয় অস্ত্র, লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ইন্সপেক্টর আবু ইউসুফ ফসিউজ্জামান।

বুড়িচং থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ানুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ ও ডাকাত সদস্যকে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বুড়িচং থানায় মামলা দায়ের  হয়েছে।

র‌্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলেপ উদ্দিন বলেন, মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিল একটি চক্র। এ খবরে মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড়ে অভিযান চালিয়ে ১৩ জন চাঁদাবাজকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি পরিবহন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

র‌্যাব বলেছে, মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড় থেকে তাদের আটক করে। আটককৃতরা হলেন- ঢাকার যাত্রাবাড়ী ২২নং শহীদ ফারুক রোড এলাকার মো. শরিফ (৩০), ঝালকাঠির রাজাপুর দক্ষিণ তারাবুনিয়া এলাকার সৈয়দ আহসান উদ্দিন ওরফে জুয়েল (৩৬), ময়মনসিংহ কাসাইরাচর এলাকার জলিল মিয়া (৪২), নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকার মো. মাসুদ (৩৬), বাগেরহাটের কুটিখালী এলাকার মো. সিদ্দিক (২০), বরিশালের আড়াইপাখি এলাকার ফারুক হোসেন (৬৩), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার হাটিপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম (৩০), পাবনার চকসেলন্দা এলাকার সোরাব হোসেন সর্দার (৭০), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাহমুদপুর এলাকার রিপন শিকদার (৩৫), কুমিল্লার নিমতলা ভূঁইয়া বাড়ির সাকিল ইসলাম ভূঁইয়া (২৪), সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার সোহেল (২৬), নোয়াখালীর ঘাটলা এলাকার
মাসুদ ওরফে হাবিব (৩২) ও ফতুল্লার পশ্চিম দেলপাড়া এলাকার মাহমুদুন নবী অপু (২৬)।

অপরদিকে ঈদকে ঘিরে রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই দালালরা সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী ও গুলিস্থান ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করছে। এই দালাল চক্রটি বাসের টিকিট কৌশলে কাউন্টার থেকে নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। অথচ কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, টিকেট শেষ হয়ে গেছে।

রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও পার্বত্য চট্টগামের প্রায় ২২টি অঞ্চলে বাস চলাচল করে থাকে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের জনপদ মোড় থেকে নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। এদিকে চাঁদপুরগামী বাসগুলো সায়েদাবাদ রেলগেইট এলাকার করাতিটোলা সি এম এস মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের গেইট থেকে মফস্বলের উদ্দেশে ছাড়ছে।

বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার আগে যাত্রীদের দালালের খপ্পরে পড়তে হয়। এই দালালদের মাধ্যমে যাত্রীদের অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কিনতে হয়। চাঁদপুরগামী পদ্মা সার্ভিসের একটি পরিবহনের যাত্রীদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

স্থানীয় পদ্মা বাসের কন্ডাকটর মফিজুল ইসলামের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে চাঁদপুর ২২০ টাকা। যারা ২৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছেন।  তারা বেশি টাকা দিয়ে দালালের কাছ থেকে টিকিট কিনেছেন। চাঁদপুর ও রামগঞ্জগামী যাত্রীরা সঠিক স্থান থেকে গাড়িতে না উঠায় ও কাউন্টার থেকে টিকিট না কেনায় এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট স্কুল গেইট থেকে চাঁদপুর ও রামগঞ্জগামী পদ্মা সার্ভিস, আল আরাফাহ ও তিশার সার্ভিস রয়েছে।

এছাড়া জনপদ এলাকা থেকে নোয়াখালী এক্সপ্রেস, কুমিল্লার রয়েল কোচসহ একাধিক পরিবহন সার্ভিস রয়েছে। বাস টার্মিনালে ঘুরে জানা গেছে, ঈদ আসলেই দালাল চক্র গাড়ির টিকিট নকল করে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে। এবার এখনো নকল টিকিট যাত্রীদের কাছে পাওয়া যায়নি। তবে দালালরা যাত্রীদের কাছ থেকে ২২০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা পর্যন্ত (দিগুণ ) আদায় করছে। 

বাস টার্মিনালের যাত্রীরা মনে করেন, ঈদকে সামনে রেখে টার্মিনালগুলোতে দালালের খপ্পর থেকে যাত্রীদের হয়রানি বন্ধ করতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। 

এ বিষয়ে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা ওসমান আলী বলেন, জনসাধারণ যাতে করে বাড়িগিয়ে নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপন করতে পারেন, সে ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া ও পরিবহন চাঁদাবাজদের বিষয়ে ওসমান আলী কোন মন্তব্য করেননি।

এইচ এম/একেএস