শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর। আর সেই সঙ্গে নিম্ন মধ্যবিত্তের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কেমন করে আর কিভাবে চালাবেন সংসার। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে কমবেশি পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। অতি প্রয়োজনীয় তেল, চিনির দাম বাড়ছে। অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়াতে রাজধানীর লাখো লাখো মানুষের আয় না বাড়লেও খরচের তালিকা ক্রমশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এছাড়া নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য দুশ্চিন্তার বছর হিসেবে রূপ নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রাজধানীর মগবজারের বাসিন্দা কামরুল হাসানের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, ঘুম থেকে উঠেই শুনি বাড়ীওয়ালা নোটিশ দিয়ে গেছে আগামী মাস থেকে বাড়ী ভাড়া বাড়ানো হবে। রোজগার না বাড়লেও প্রায় সব জিনিষের দাম বেড়ে গেছে। যে হারে খরচ বাড়ছে বর্তমানে জীবন-যাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। আর ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে আরো খরচ বাড়বে।
জানা গেছে, গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে পাস হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট। যেটি আজ সোমবার থেকেই কার্যকর শুরু হয়েছে। গত কয়েক বছর বাস্তবায়ন করতে না পারা ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইন এবারই বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ভ্যাট আইনে বেশকিছু নিত্যপণ্যে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। তারপরও এ আইন বাস্তবায়নে অনেক পণ্যে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হবে যা সাধারন জনগণকেই দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হবে নিম্ন আয়ের মানুষদের। যাদের ফিক্সড ইনকাম রয়েছে। এছাড়া আমাদের মতো পেনশনভোগীদেরও কষ্ট করে চলতে হবে। আর গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে কষ্টের মাত্রা বাড়বে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, এবারে বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। যা কোনো না কোনোভাবেই জনগণকেই দিতে হবে। আর শুধু ভ্যালু এডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) আদয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। যা ভোক্তাদের দিতে হবে। একজন ভোক্তা যা কিনবে তাতেই ভ্যাট দিতে হবে। আর ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে এর প্রভাব পড়বে বাজারে। কমবেশি প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে।
ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে কথা বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কম বেশি প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়বে। আর ব্যসায়ীরা ভ্যাট দিলেও এই টাকা তো সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই নিবে। তবে ভ্যাট আইনে বেশকিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। এছাড়া কিভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের কোনো গাইড লাইন নেই। যার কারণে হয়রানির মুখে পড়তেপারেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বড় কথা আইনের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো স্পষ্ট না করাতে ভ্যাট আদায়ে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা বলছেন, ভ্যাটের সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি। যেটিও আজ থেকেই কার্যকর হয়েছে। একটি গ্যাসের চুলার জন্য ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যও বেড়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে সব শ্রেণীর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সব নিত্যপণ্যের দাম, বিদ্যুৎ, পরিবহন, বাসা ভাড়া, কৃষিপণ্য এবং সেবার খরচ বাড়বে। সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। অর্থাৎ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন-যাপনে খরচের বাড়তি চাপ দিয়েই শুরু হলো নতুন অর্থবছর।
এআই/এসজেড