• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০১৯, ০৭:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৪, ২০১৯, ০৭:৪৫ পিএম

পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীদের মন ভালো নেই

পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীদের মন ভালো নেই
দরপতনের কারণে মন ভালো নেই সংশ্লিষ্টদের-ছবি : সংগৃহীত

সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি- নগরবাসীর মনে শান্তি আনলেও মাথায় হাত পড়েছে চামড়া ব্যবসায়ীদের। 

বুধবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীয় পোস্তায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁচা চামড়া আসতে দেখা যায় নি। ফলে ছিল না কাঁচা চামড়া বেচাকেনা, আড়তদার ও কর্মচারীদের কর্মচাঞ্চল্যমুখর দৃশ্য।কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে আসলে শত চেষ্টা করেও বিক্রি করতে পারে নি। ফলে কোরবানির ঈদের পর অন্য বছর যে কর্মব্যস্ততা দেখা যায় এ বছর সে রকম কোনও চিত্র দেখা যায়নি।

দু’একটি চামড়া এলেও তা দাম না থাকায় রাস্তায় ফেলে চলে যাচ্ছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। বিক্রি না হওয়া চামড়া রাস্তার পাশেই স্তূপ আকারে পড়ে আছে। এ কারণে পোস্তার রাস্তা, অলি-গলিতে পড়ে থাকা চামড়া পচে গন্ধে দম নেয়া দায়। তবে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী এ সব পচা চামড়া সরাতে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের একজন হরিস বর্মন বলেন, ছোটকাল থেকে এ কাজ করে আসছি। প্রতি বছরই ঈদের পর এখান থেকে বর্জ্য পরিষ্কার করি। কিন্তু এ বছর বর্জ্যের পাশাপাশি আস্ত পচা চামড়াও সরাতে হচ্ছে। আজ তো কম, গত রাতে আরও বেশি ছিল।

পোস্তার ব্যবসায়ীরা জানান, এখনও কোনও কোনও আড়তে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ দেয়ার কাজ চলছে। আড়তে চামড়া লবণজাত অবস্থায় থাকবে ২০ থেকে ২৫ দিন। এরপর এখান থেকে চামড়া নেবেন ট্যানারি মালিকরা।

পুঁজি না থাকায় পোস্তা এলাকার অধিকাংশ আড়তদার চামড়া কেনা বাদ দিয়ে অবসর সময় পার করছেন। তবে দরপতনের এ পরিস্থিতির জন্য ট্যানারি ও আড়তদাররা একে অপরকে দোষারোপ করছেন।

হতাশা হয়ে কয়েকজন মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে চামড়ার ব্যবসা করি। দীর্ঘদিন ব্যবসার সঙ্গে আছি কিন্তু এত বাজে ব্যবসা আর কখনও দেখিনি। ঈদের পর যে পোস্তায় কাচা চামড়া কেনা-বেচা, প্রক্রিয়াজতকরণে শ্রমিকরা থাকতো ব্যস্ত, এবার তারা অতীতের দিনগুলোর মনে করে দিন কাটাতে হচ্ছে। আসলে ভালো চামড়ার দাম কমেনি। কমেছে নষ্ট চামড়ার দাম। এ কারণে নষ্ট চামড়া কম দামে কিনে মাথায় হাত দিচ্ছে।

একাধিক চামড়া শ্রমিক জানান, গত ১০-১২ বছর ধরে এখানে কাজ করে আসছি। এ বছরের মতো অবস্থা কোনোদিনও দেখিনি। আজ রাস্তায় যে চামড়া পড়ে থাকতে দেখছেন, দাম থাকলে রাস্তায় রাস্তায় থাকতো না। ছেঁড়া-ফাটা সবই তখন বিক্রি হয়ে যেত।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া বেচা-কেনা নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের নেয়া এ সিদ্ধান্তে এ শিল্প খাতের কোনও উপকার হবে না বলে মনে করেন আড়তদাররা।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, চামড়ার বাজারে কোনও সিন্ডিকেট হয় না। প্রতিবছর ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেটের কথা বলেন, কিন্তু এটি সঠিক নয়। সমস্যা হয় তাদের কাছে পাওনা টাকা যখন আমরা পাই না তখনই। তারা প্রচুর টাকা বকেয়া রেখেছেন। তাদের কাছে ৩৫০ কোটি টাকার মতো পাওনা রয়েছেন আমাদের আড়তদাররা। একেবারেই চামড়া কিনছি না বিষয়টি তেমন নয়, কিন্তু আমরা যে পরিমাণ কিনতে চাচ্ছি তা পুঁজির অভাবে পারছি না। সবার কাছে টাকা থাকলে বাজারে প্রতিযোগিতা থাকতো, ফলে চামড়ার দামও বাড়তো।

তিনি বলেন, আমরা প্রথম দিন চামড়া কিনেছি। কারণ সে দিনের চামড়াটা ভালো ছিল। এখন যে চামড়াটা আসছে সেটা ৬ ঘণ্টা পর নষ্ট হয়ে যায়৷ আমরাতো জেনে-শুনে লোকসান দিতে পারবো না। ফলে নষ্ট চামড়াগুলো ফেলে দিতে হয়েছে। এ জন্য আমরা বারবার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বলেছি চামড়া কেনার ৬ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে রাখতে। যদি তারা এটা করতো তাহলে এতো চামড়া নষ্ট হতো না। অনেকে বলেছে দাম পরে দিয়েন চামড়া রেখে দেন। কিন্তু আমরা জেনে-শুনে নষ্ট চামড়া রাখতে পারি না।

আড়তদার ছমির উদ্দিন বলেন, কোরবানির কমপক্ষে ৩৬ ঘণ্টা পর সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তের কথা জানালো। অথচ ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার সেটা হয়েই গেছে। কমপক্ষে ৪/৫ মাস আগে থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচারণা চালালে ব্যবসায়ীরা লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যেত।

কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ( বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ। তিনি বলেন, ২০ আগস্ট থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করবো। সে সময় চামড়ার বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আশা কির এ সময়ের মধ্যে সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দিলে শতভাগ দেশীয় এ শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। চামড়া শিল্পনগরীতে ৭ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। সাভারের আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী প্রয়োজনীয় কাঁচা চামড়ার অভাবে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়বে। এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত জনগোষ্ঠী বেকার হয়ে পড়বে, ফলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেবে। সিন্ডিকেট করে একটি চক্র চামড়ার দাম কমিয়ে দিচ্ছে।

বর্তমানে চামড়ার এই অবস্থার জন্য ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন জড়িত কি- না এমন প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনের সভাপতি বলেন, কখনও কাঁচা চামড়া কিনি না। পাঁচ থেকে ছয়জনের হাতবদল হয়ে তারপর আমাদের কাছে চামড়া আসে। সুতরাং কাঁচা চামড়ার এই দরপতনের সঙ্গে কোনোভাবেই বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন জড়িত নয়। সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া দাম অনুযায়ী ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতিটি ২০ থেকে ৩৫ বর্গফুটের চামড়া লবণ দেয়ার পরে ৯০০ থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন। রাজধানীর বাইরে চামড়া বেচা-কেনা হচ্ছে আরও কম দামে।

টিএইচ/এসএমএম

আরও পড়ুন