• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ০৭:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১২, ২০১৯, ০২:০১ এএম

আবুল হোসেন: ফুটপাতে ২৫ বছর

আবুল হোসেন: ফুটপাতে ২৫ বছর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর। একটু  সামনে এগিয়ে রাস্তাটা পার হলেই সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ঢোকার গেট। চটপটি বিক্রেতা বাপ্রান্তিক ব্যবসায়িরা তাদের ভ্যানগাড়িগুলোকে এখানে তালাবদ্ধ করে রেখে চলে যায়। একটু চোখ খুলে তাকালেই দেখা যাবে সারি সারিঅনেকগুলো ভ্যানগাড়ি এখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। দুপুর ১২টা-১টা দিকে এগুলো সক্রিয় হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রী বা বহিরাগতরাএসব দোকানে চটপটি খায়, আড্ডা জমায়। এসব দোকানি রাত ৮ বাজলে দোকান বন্ধ করে। ভ্যান তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে সারি বেধে।  
এসব ভ্যান রাত বেশী হলেই ভাসমান মানুষদের বাসগৃহের আকার না হোক ঘুমানোর খাটের আকার ধারন করে। রাজধানীর অল্প আয়েরমানুষ যারা গৃহহীন তারা এসব ভ্যানে ঘুমায়। ভ্যান মালিকরা তাতে রাগ করেন না। কারন এতে ভ্যানের পাহাড়ার কাজটা হয়। আবুলহোসেনের সাথে কথা হয় এখানে। চাঁদপুরের আবুল হোসেন। বাড়ি শাহরাস্তি— থানায়। একসময় এলাকায় রিক্সা চালাতেন। হঠাৎ একটামামলায় জড়িয়ে যান। দোষ না করে এই মামলায় জড়ানোতে খুব মনোকষ্টে ভুগতেন। একসময় পুলিশের ভয়ে পালাতে হয়। চলে আসেন
ঢাকায়। তারপরে আর এলাকায় থাকেন নি। এলাকা ছেড়েছেন প্রায় ২৬ বছর। প্রথম কিছুদিন আত্মীয়-স্বজনের কাছে থেকেছেন। কতদিনআর এভাবে থাকা যায়। পরে রিক্সা চালিয়েছেন বহুদিন। এর মধ্যে বিয়ে করেছেন,বাচ্চা হয়েছে। ফলে খরচ বেড়েছে। রিক্সা চালাতে ভালোলাগেনি এক সময় । পরে কাজ নিয়েছেন একটা চায়ের দোকানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে, নীলক্ষেতে চায়ের দোকান। সেখানে চাকরি করেন।


যে টাকা পান তাতে বাসা ভাড়া করলে বাড়িতে টাকা পাঠানো সম্ভব হয় না। চায়ের দোকানে চাকরি করেন, রাতে চটপটির দোকানে ঘুমান।  করগুনে বললেন , ফুটপাতেই আছি ২৫ বছর। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রতিনিয়ত মানুষ আসে। কি করবে? গ্রামে কাজের জায়গাগুলো বন্ধ হয়েযাচ্ছে। মানুষ যাবে কোথায়? অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভালো রোজগারে আশায় এ শহরে কত হাজার মানুষ আসে। কিন্তু কাজ পেলেও স্বপ্ন পূরন হয়না। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়তে অনেক মানুষ থাকে। ফুটপাতে বা ঢাকার শরীরের ছড়ানো ছিটানো পাথরের মতো অজস্র মানুষ শুয়ে থাকে।সে খবর রাজপথ ছাড়া  কেউ রাখেনা। আমি জিজ্ঞেস করি , এখানে ভ্যানে কত মানুষ থাকে।তিনি বলেন কমপক্ষে ৫০ জন। অন্য সবাই কিকরেন, তিনি উত্তর দেন সবাই আমার মতো। ছোট খাট কাজ করে। রাতে ভয় করে না? জিজ্ঞাসা করতেই হেসে ওঠেন পঞ্চাশোর্ধ আবুলহোসেন। বলেন ভয় করবে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রী ছাউনি থেকে লাইব্রেরি হয়ে সবখানে কত শত মানুষ ঘুমায়।

শহীদ মিনার থেকে চানখাঁর পুল সব খানে মানুষ।  তাছাড়া পুলিশতো টহলে থাকেই। যাদের টাকা আছে তারা বর্ডিং থাকে। যাদের টাকা নেই তারা আমাদের মতোযেখানে সেখানে ঘুমায়ে থাকে। মশায় কামড়ায় না? বলেন, সব সহ্য হয়ে গেছে। তাছাড়া কাঁথা গায়ে দিলে সমস্যা হয় না। আসলে এতোএকটা যুদ্ধ। এখানে কষ্ট করতে করতে সহ্য হয়ে গেছে। পিজির ভেতরে গিয়া দেখেন আপনাদের মতো জামা জুতা পরা সব শিক্ষিত মানুষেরাঘুমাইয়া আছে । ঢাকায় কত গৃহহীনরা থাকে ,যাদের পথই হলো ঘর। সে খবর কে জানবে? মিছিল হয় ,মিটিং হয় , ভোট হয় কিন্তু কোন কিছুবদলায় না। সব আগের মতোই থাকে। বৃষ্টি -ঝড়ে কি করেন? বেশী ঝড় হলে টিএসসিতে গিয়ে বসে থাকি। আর খালি বৃষ্টি হলে কাথার
উপরে পলিথিন দিয়ে ঘুমাই। বাড়িতে যেতে বা থাকতে ইচ্ছে করে না? করে কিন্তু গ্রামের অবস্থা আগের মতো নেই। জিনিসপত্রের দাম ঢাকারমতোই। তারপরও অনেক ঝামেলা।

ওসব থেকে এতকাল দূরে যে আর ভালো লাগে না। বাড়ি যাই আবার চলে আসি। বউ বাচ্চার কথা মনেপড়ে না? এতক্ষনে লড়ে বসে আবুল হোসেন। মেয়েটার কথা খালি মনে পড়ে। ঘুমাতে কষ্ট হয়। একা একা কেঁদে ফেলি। কিন্তু গিয়েখাওয়াবো কি? এখন রিক্সা চালানোর শক্তি নাই। যতদিন না মরবো, এভাবেই থাকতে হবে। অনেক কথার ভেতরে রাত্রি বাড়ছিলো। এটাছবি তুলতে চাই।ছবি তুলতে মোটেই রাজী হচ্ছিলেন না আবুল হোসেন। পত্রিকায় উঠলে তার আত্মীয় -স্বজন দেখলে ইজ্জত থাকবে না। আমি তবুও ছবি তুলেবিদায় নেই। বলি কেউ জানবে না।