• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০১৯, ০৭:৩৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৭, ২০১৯, ০১:৫৭ এএম

‘আমাদের গৌরব’: বিপদগ্রস্ত মানুষের বন্ধু

‘আমাদের গৌরব’: বিপদগ্রস্ত মানুষের বন্ধু

 আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষ আছে। মানুষের সম্পদ লোপাট করার  লোক যেমন আছে, আবার নিজের টাকায় মানুষের উপকারের যথাসাধ্য চেষ্টা করে, মানুষের কল্যান নিবেদিত এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয় । মানুষের সেবায় নিয়োজিত এমনি একটি সংগঠনের নাম ‘আমাদের গৌরব।’ একটি  স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ।

”আমাদের গৌরবের“ প্রতিষ্ঠাতা সাইদুল ইসলাম খন্দকারসহ অন্যান্য সহকর্মীরা

মানুষের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাওয়া এ সংগঠনটির উদ্যোগ বহুমাত্রিক ও প্রশংসনীয়। অসহায়- অসুস্থ মানুষের আস্থার প্রতীক -এ সংগঠনটির ক লক্ষনীয়। স্বেচ্ছায় এবং নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে সংগঠনটি তৎপর। রাত্রিকালে পরিবহনহীন অসুস্থ রোগীকে বিপদগ্রস্ত অবস্থায়  দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারাটাই "আমাদেরগৌরব"  সংগঠনটির প্রধান কাজ। অসুস্থ, মানুষকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর সুব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে সংগঠনটি মানুষের সেবা দিতে শুরু করেছে গত ২ বছর ধরে। এ কাজের সাথে যারা যুক্ত তারা কেউ কেউ শ্রম দিয়ে, কেউ প্রিয় গাড়িটি দিয়ে অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার জন্য নিয়োজিত থাকে ।এলাকার প্রত্যেক বাড়ির দুয়ারে তাকালে চোখ পড়বে একটি স্টিকারের দিকে। এ স্টিকারে লেখা ‘আমাদের গৌরবের’  ফোন নং এবং সেবা দেয়ার নেয়ার নিয়মাবলী সংক্রান্ত স্টিকার । বড়বাগ এলাকার সব বাড়ি,বস্তি সবখানে ঝুলছে এ স্টিকার। স্টিকারে রয়েছে ফোন নম্বর (০১৯৭০৭১৭৮৭৩,০১৯৭০৭১৭৮৭২)। এই ফোনে  টেলিফোন করলেই সাথে সাথে সেবার নিশ্চয়তা মিলবে। এটাই আমাদের গৌরবের মুল কাজ।

যেভাবে শুরু  
আমাদের গৌরবের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সাইদুল ইসলাম খন্দকার। সম্প্রতি দৈনিক জাগরণ অফিসে আসেন। ‘আমাদের গৌরব’এর আদ্যোপান্ত নিয়ে কথা হয় তার সাথে। এ ধরনের সংগঠন করার চিন্তা কীভাবে এলো জিজ্ঞেস করলেই তিনি শোনান তার স্বপ্নও স্বপ্ন পূরনের গল্প। তার বাসা এয়াপোর্ট সংলগ্ন এলাকা উত্তর খানের বড়বাগ এলাকায়। ৩৫০০ লোক বাস করে এ এলাকায়। তিনি দেশের বাইরে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামে দেখেছেন রাত একটু বাড়লেই রোগীদের হাসপাতালে নেয়া কত কষ্টকর।

নিজের এলাকায়ও একই চিত্র দেখতে পান, এবং ভাবতে থাকেন এ চিত্র বদলানো যায় কিভাবে। সারাদেশতো একবারে করা সম্ভব নয়্ তাই প্রথমে নিজের আশপাশের মানুষদের
টার্গেট করেন ।  রাত ১১ টার পরে রোগীদের হাসপাতালে নেয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার। যানবাহন খুঁজতে খুঁজতেই চলে যায় কয়েক ঘন্টা । এই পরিবহন সংকটে হাসপাতালে নিতে নিতে অনেক রোগী মারা যায় বা দুরস্থার শিকার হয়। সব সংকট চোখের উপর দেখে সাইদুল ইসলাম খন্দকার ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে  এলাকার ৩০/৪০ জন তরুনকে নিয়ে গড়ে তোলেন সংগঠন ‘আমাদের গৌরব’। তাদের প্রথম কাজ হয় স্টিকার ছাপানো। স্টিকারে লেখা থাকে ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন নিয়মাবলী।

প্রথমে তাদের ২টা প্রাইভেট কার ছিলো । পরে রেন্ট-একারেরও সাহায্য নেন। রাত ১১ টা থেকে ভোর ৪টা পর‌্যন্ত চলে এ কার্যক্রম। এ এলাকার তরুনদের জীবনে আমুল বদল এসেছে আমাদের গৌরবের সাথে যুক্ত হয়ে। সবার মধ্যে একটা পরমত সহিষ্ণুতা, বিনয়ীভাব এবং সেবামূলক মানসিকতা ফিরে এসেছে।  সাইদুল ইসলাম বলেন, রাতে পরিবহন চালানোতে নিরাপত্তার একটা বিষয় থাকে। সেখানে পুলিশ বাহিনীর সহায়তা উল্লেখ করার মতো। এ ব্যাপারে ডিএমপি উপকমিশনার( উত্তর বিভাগ) নাবিদ কামাল শৈবাল ও উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল থেকেতাদের রাতের কাজে নিরাপত্তার জন্য খুব সাহায্য করেন বলে জানান সাইদুল ইসলাম খন্দকার।

তাদের এই সেবামূলক কাজের অর্থের উৎসের কথা জানতেচাইলে তিনি বলেন, তাদের অর্থের একমাত্র উৎস গৌরবের ফান্ড, এটা এমনও হয় নিজের পকেটের টাকায় চলে। মাসে সব মিলিয়ে খরচপড়ে ১৫/৩৫ হাজার । তারা কোন এনজিওর সাহায্য বা কোন ডোনেশন এখনো নেননি। তবেক কার‌্যয্ক্রমটা ছড়িয়ে দিতে চান জন থেকে জনে, সারা দেশে।তাদের রাতের এ কার্যক্রমে সহয়তা দেন একইভাবে তারা কাজ শুরুর সব প্রক্রিয়া শুরু করেছে পিরোজপুর জেলার গুয়ারেখায়। সেখানে রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার মাধ্যম মাত্র দুটি। ট্রলার ও ইজিবাইক সেসব জায়গায় গিয়ে ইতিমধ্যে টিম থেকে শুরু করে কাজের সব ঠিক ঠাক করা হয়েছে। দ্রুত শুরু হবে কার‌্যক্রম।


 এছাড়াও
আমাদের গৌরবের উদ্যোগে সব জাতীয় দিবস পালন করা থেকে শুরু করে  শরীরচর্চা, বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন করা হয় মাঝে মধ্যেই । এরা সড়ক দুর্ঘটনারোধে আন্দোলন করে। পুরানো ভাঙা খেলনা মেরামত করে , তা গরীব শিশুদের মধ্যে বিতরন করেন। এখানের সদস্যরা সমাজকল্যানমুখী বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের গৌরবের সঙ্গে যুক্ত সদস্যরা খুবই স্বপ্নবান তরুন। আর এদের এই স্বপ্ন দেখানোর মানুষটি সাইদুল ইসলাম খন্দকার নামের এক তরুন। যিনি সারাদেশটাকে তার কাজের আওতায় আনতে চান। এই স্বপ্নবান তরুনের স্বপ্ন আকাশ স্পর্শ করুক এ প্রত্যাশা সবার।