• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০১৯, ০৪:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৪, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভাড়ায় বাইরে ছিল বিএসএমএমইউ’র বেলুন পাম্প মেশিন!

ভাড়ায় বাইরে ছিল বিএসএমএমইউ’র বেলুন পাম্প মেশিন!
বিএসএমএমইউ হাসপাতাল; ফাইল ফটো


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিভাগের সহজে বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভাড়ায় পাঠিয়ে অর্থ উপার্জনের কথাবার্তা শোনা গেছে এ বিভাগেরই কিছু প্রভাবশালী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। 

বিএসএমএমইউতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিকিৎসার একটি পর্যায়ে (গত রোববার দুপুরে) তার হৃৎপিণ্ডকে বেলুন পাম্প (intra-aortic balloon pump - IABP) সাপোর্ট দেয়ার প্রয়োজন হলে ঢাকার ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল থেকে আনা হয় মেশিনটি। বিএসএমএমইউতে এই মেশিন থাকা সত্ত্বেও বাইরের হাসপাতাল থেকে মেশিনটি আনা হয়।

এ বিষয় নিয়ে তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে সহজে বহনযোগ্য হৃদরোগ বিভাগের যন্ত্রপাতি ভাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ব্যবহারের কথা কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারে দৈনিক জাগরণ। বেলুন পাম্প মেশিনও সহজে বহনযোগ্য। এজন্য অতি অল্প সময়ে ল্যাব এইড থেকে বিএসএমএমইউতে মেশিনটি আনা সম্ভব হয়েছিল।

সহজে বহনযোগ্য মেশিন ভাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ব্যবহারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে জানতে চায় দৈনিক জাগরণ। তিনি বেশ বিস্মিত হন এই কথা শুনে। বুধবার (০৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি নিজ কার্যালয়ে বলেন, কী বলেন! আমি অবশ্যই অবশ্যই এ বিষয়ে খোঁজ নেব। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যে কোনো ধরণের অভিযোগ, দুর্নীতির তথ্য থাকলে আমাকে জানিয়ে সহযোগিতা করবেন। আমি অবশ্যই এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ওবায়দুল কাদেরের জন্য মেশিনটি যখন দরকার হয়, তখন হৃদরোগ বিভাগের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে উত্তর আসে- মেশিনটি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার উত্তর আসে মেশিনটি নষ্ট।

এ বিষয় নিয়ে ৫ মার্চ দৈনিক জাগরণে ‘কাদের যখন সংকটাপন্ন বেলুন পাম্প মেশিন খুঁজে পায়নি বিএসএমএমইউ’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের কোনো কোনো চিকিৎসকের সন্দেহ- কাজের সময় না পাওয়া সহজে বহনযোগ্য বেলুন পাম্প মেশিনটি কী তখন হাসপাতালের বাইরে কোনো বেসরকারি হাসপাতালে ভাড়া দেয়া ছিল?

তাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। মেশিনটি তো এত ছোট নয় যে, এটি দৃষ্টির বাইরে যাবে; ক্যাথল্যাব ইনচার্জ অধ্যাপক মোস্তফা জামানসহ হৃদরোগ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কেন দরকারের সময় মেশিনটি খুঁজে পাননি? তাহলে তারা কেমন ইনচার্জ, কেমন দায়িত্বশীল?


বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া, হৃদরোগ বিভাগের ক্যাথল্যাব ইনচার্জ অধ্যাপক মোস্তফা জামান ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক ভিসি অধ্যাপক কামরুল হাসান খান

হৃদরোগ বিভাগের ক্যাথল্যাব ইনচার্জ অধ্যাপক মোস্তফা জামানের দায়িত্বে ছিলো বেলুন পাম্প মেশিনটি। ‘কাদের যখন সংকটাপন্ন বেলুন পাম্প মেশিন খুঁজে পায়নি বিএসএমএমইউ’প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সময় মোস্তফা জামানের সাথে দৈনিক জাগরণ যোগাযোগ করে মোবাইল ফোনে। 

মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কল দিয়ে বেলুন পাম্প মেশিন সম্পর্কে জানতে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি বিভাগীয় একটি সম্মেলন নিয়ে মারাত্মক ব্যস্ততার কথা বলে অন্যদিন সাক্ষাতের অনুরোধ জানান। আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তার কক্ষে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

ঘটনার পর তার উপর হৃদরোগ বিভাগের কিছু সিনিয়র চিকিৎসকের বাঁকা দৃষ্টি পড়েছে বলে জানা যায়।

ক্যাথল্যাবে কাজ করেন এমন একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, প্রায় এক বছর আগে এই মেশিন কেনা হয়।

বিএসএমএমইউ’র হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী আহসান জানান, এসব মেশিনের একেকটির মূল্য আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা।

বিএসএমএমইউর পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেছিলেন, ৪ মার্চ সকাল ৮টার সময় তিনি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মেশিনটি খুঁজে বের করেন।

তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে- বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগে বিকল আরেকটি বেলুন পাম্প মেশিন আছে। যা বছরখানেক ধরে পড়ে আছে। এটি সচল করতে জানানো হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও।


                                                                       বেলুন পাম্প মেশিন 

ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, সেদিনই (যেদিন ওবায়দুল কাদেরকে বেলুন পাম্প সাপোর্ট দেয়া হয়) আমি এটা নিয়ে হৃদরোগ বিভাগের দায়িত্বশীলদের ধরেছিলাম। বলেছি- কেন আমাকে না জানিয়ে মূল্যবান মেশিন নষ্ট অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে?

সচল বেলুন পাম্প মেশিন কাজের সময় না পাওয়া এবং নষ্ট বেলুন পাম্প মেশিন ব্যবহার উপযোগী করতে আপনাকে না জানানোর বিষয়টিকে কোনো অপরাধ মনে করেন কি-না- এ প্রশ্ন করা হলে ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, অবশ্যই অন্যায় হয়েছে। আমি এটা খুব কঠোরভাবে দেখব। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি করব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক কামরুল হাসান খান সচল বেলুন পাম্প মেশিন কাজের সময় না পাওয়া এবং নষ্ট বেলুন পাম্প মেশিন উপযোগী করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে না জানানোর বিষয়টিকে ভারী অন্যায় বলে মনে করেন। 

তিনি বলেন, এ ঘটনার প্রথম দায় হৃদরোগ বিভাগের। প্রতিষ্ঠান প্রধানও এই দায় এড়াতে পারেন না। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি করে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

কামরুল হাসান খান বলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক যে, নিজের মেশিন থাকার পরও একটি বেসরকারি হাসপাতালের সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। এই ঘটনা অবশ্যই তদন্ত করা উচিৎ।

তিনি বলেন, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কার জন্য? সাধারণ মানুষের জন্য। এখন যন্ত্রপাতি রেখেও যদি বলা হয়, নেই, কোথায় জানি না। তাহলে এসব মেশিন এতো টাকা খরচ করে সরকার-বিশ্ববিদ্যালয় কেন ক্রয় করল? কাজেই ঘটনাটি ভালভাবে তদন্ত জরুরি।

গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে ল্যাব এইড থেকে আনা বেলুন পাম্প মেশিন দিয়ে ওবায়দুল কাদেরকে সাপোর্ট দেয়া হয় এবং এটিসহ তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয় বলে জানান বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান।

আরএম/আরআই