• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৮, ০৯:৩০ পিএম

রোগী বান্ধব নয় অ্যাম্বুলেন্স, চলছে খেয়াল খুশিতে

রোগী বান্ধব নয় অ্যাম্বুলেন্স, চলছে খেয়াল খুশিতে
মানহীন একটি অ্যাম্বুলেন্স; দৈনিক জাগরণ


রোগীর জন্য অ্যাম্বুলেন্সের সৃষ্টি হলেও সেই অ্যাম্বুলেন্সই রোগী বান্ধব নয়। এগুলোর উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ-মনিটরিংও নেই সরকারের। যে যার খেয়াল খুশি মতন সাধারণ মাইক্রোবাস কিংবা জিপে সাইরেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্টিকার, শয্যাযুক্ত করে বানিয়ে নিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স।

সাধারণ জ্বালানি চালিত গাড়ির মত করেই অ্যাম্বুলেন্সকে লাইসেন্স দিচ্ছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এর জন্য বিশেষ কোনো অনুমোদন নিতে হয় না। অথচ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এর সঙ্গে যুক্ত নয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা এর কোনো দপ্তর।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল জাগরণকে বলেন, এ ধরণের অ্যাম্বুলেন্স রোগীর উপকারে আসে না। খুব দ্রুত এসব অ্যাম্বুলেন্স ঠেকাতে সরকারের তৎপরতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে সব সময়-ই বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভিড় লেগেই থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকাসহ এসব অ্যাম্বুলেন্সের বেশিরভাগই মানসম্মত নয়। বেশিরভাগ চালক লাইসেন্সধারী নয় বা অবৈধ লাইসেন্সধারী। এসব অ্যাম্বুলেন্সে নেই লাইফ সাপোর্ট ব্যবস্থা, চিকিৎসকের উপস্থিতি, কার্ডিয়াক মনিটর ও অক্সিজেন সিলিন্ডার, উপযুক্ত শয্যা। এসব অ্যাম্বুলেন্স উল্টো রোগীর বিপদ ডেকে আনছে।

এত সব বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও অবশ্য ভাড়া হাঁকাতে ছাড় নেই। সিন্ডিকেট করে এসব অ্যাম্বুলেন্স মালিক-চালকরা রোগী ও রোগীর স্বজনদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ।

খোঁজ নিয়ে তথ্য মিলেছে- দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে ‌'অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নীতিমালা' এর খসড়া। এই সুযোগ-ই কাজে লাগাচ্ছে অসাধুরা। বিআরটিএ থেকে রুট পারমিট নিয়েই সাধারণ মাইক্রোবাস বা জিপকে রূপান্তর করছে 'অ্যাম্বুলেন্স' এ।

ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ২০০'র-ও বেশি প্রতিষ্ঠান, তাদের অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স তো আছেই।

সরেজমিনে এমনও দেখা গেছে, অধিক লাভের আশায়  রেন্ট-এ কার ব্যবসার জন্য কেনা বা ভাড়া নেয়া সাধারণ গাড়িতে সাইরেন, শয্যা, অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগিয়ে সেই গাড়িকে বানিয়ে ফেলা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে। এ কাজ করতে গিয়ে কারও কাছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরণের অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা বাড়ছেই।

এমনকি একটি মাইক্রোবাস যখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় তখন জোড়াতালি দিয়ে সেগুলোকেই অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেগুলোর না আছে ফিটনেস সার্টিফিকেট, না আছে রুট পারমিট স্টিকার। আইনের হাত থেকে সহজে রক্ষা পেতে এসব অনুপযোগী গাড়িকে অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ জানান, অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নীতিমালার একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি আলোচনা হয়েছে। এসবের সংখ্যা, প্রতিষ্ঠানের নাম ও গাড়ির নম্বর জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে এ বছরের শুরুতেই একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজারেরও বেশি অ্যাম্বুলেন্সের তালিকা জমা পড়েছে। অতি পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা সম্পন্ন করার পর ব্যক্তি মালিকানায় চালিত অ্যাম্বুলেন্সগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকার বাইরে এবং মানহীন অ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না।

আরআই