• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৪, ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম

সরেজমিন সোহরাওর্দী হাসপাতাল

‘৪-৫ দিনেই সুস্থ হচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা’

‘৪-৫ দিনেই সুস্থ হচ্ছেন ডেঙ্গু রোগীরা’
মশারীর ভেতরে বসে আছেন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ফাহিম - ছবি: জাগরণ

রাজধানী সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ। প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে অনেকগুলো খাটের ওপরে সাদা রঙের মশারির ভেতর তরুণ, নারী ও শিশু রোগীরা। নার্স তাসলিমা জানালেন, এরা সবাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এখানে বিশটির মতো বেড আছে, সবগুলোয়ই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী।

রাজধানীর বাসাবো থেকে আসা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহকারী শিরিন আক্তার জানান, গত ২৯ জুলাই তার জ্বর শুরু হয়। একশো চার থেকে একশো পাঁচ ডিগ্রি জ্বর। পরে স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। জ্বর কমে এলেও শরীরে দেখা যায় র‌্যাশ। এরপর রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে তার। আর প্রতিদিনই কমছে প্লাটিলেট। এমন পরিস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এসে ভর্তি হন তিনি। তার স্বামী আলেক চাঁন বলেন, ৩ আগস্ট হাসপাতালে এসেছি। দু’দিনেই রোগীর জ্বর চলে গেছে। আশা করছি, আর এক দু-দিনের মধ্যে আমরা রিলিজ পেয়ে যাবো।

রিলিজ স্লিপ হাতে নিয়ে রোগী ইতি আক্তারের স্বামী আল আমীন বলেন, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হলেই বেশি মঙ্গল। এই সময়ে কারো জ্বর হলে অবহেলা না করে হাসাপাতালে চলে আসা দরকার। যাতে চিকিৎসা নিয়ে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের রোগীরা প্রায় সবাই জানান প্রায় একই গল্প- কয়েকদিন জ্বর, গায়ে র‍্যাশ ওঠা, ব্যথা। পরীক্ষা করতে গিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া, এরপর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। কেউ চারদিন, কেউ পাঁচদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরপর সুস্থ হয়ে রিলিজ নিয়ে ফিরছেন ঘরে। রোগীর তালিকায় আছেন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও। আট বছরের শিশু সামিরার পাঁচদিন ধরে জ্বর। হাসপাতালে আসার পর তার ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার। সঙ্গে রয়েছেন তার মা, বাবা। সামিরা মশারি আবৃত বেড পেলেও তার বাবা-মাকে থাকতে হচ্ছে বিছানার পাশে মেঝেতে মাদুর পেতে। এতে খুশি তারা। বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগীর যে ঢল তাতে এই মাদুর পেতে থাকাটাও কম সৌভাগ্যের বিষয় নয়। আর প্রতিদিনই খেয়াল করছি, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে প্রায় সব রোগীই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছেন। সবমিলিয়ে আমাদের মনের আতঙ্ক অনেকখানি কেটেছে।

ধানমন্ডির ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ ইবনে ফাহাদ ফাঈম। বয়স ২০। থাকেন বোন দুলাভাইয়ের সঙ্গে ঢাকার কাজিপাড়ায়। ছয় তলা ভবনের চার তলায় থাকেন তারা। এক সপ্তাহ আগে বাড়িওয়ালার ৫ বছরের মেয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই ভয়ে ছিলেন তারা। ছিলেন সতর্ক। এডিস মশা থেকে বাঁচতে সম্ভব সব ব্যবস্থাই নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তারপরও ২৯ জুলাই দুপুরে জ্বর অনুভব করেন ফাঈম। দেরি না করে ওই রাতেই শেওড়াপাড়ার হেলথ ল্যাব ডায়াগনস্টিকে রক্ত পরীক্ষা করেন তিনি। পরীক্ষায় ফল আসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তিনি। কমে গেছে তার রক্তের প্লাটিলেট। বুধবারই ভর্তি হয়ে যান সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে।

রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুরে কথা হয় তার সঙ্গে, তখন ফাঈম খুশি। কারণ ৫ দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ায় চিকিৎসক তাকে রিলিজ দিয়েছেন।

ফাঈম বলেন, জ্বরে আক্রান্তের পর পরীক্ষায় যখন ডেঙ্গু ধরা পড়ে তখন খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে ৫ দিনের চিকিৎসায় পুরো সুস্থ হয়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু আতঙ্ক আমার অনেকটাই কমে গেছে। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে না ভুগে জ্বর হলেই টেস্টটা করে ফেলা ভালো। এতে শুরুতেই চিকিৎসা শুরু করা যায়। আর এতে প্রাণহানির আশঙ্কাও অনেকখানি কমে যায়। তিনি আরও বলেন, গত ৫ দিনে আমি কয়েক শ’ রোগীকে এই হাসাপাতালে আসতে দেখেছি। আবার চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে তাদের বেশির ভাগই রিলিজ নিয়ে চলে গেছেন। ফলে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

ফাঈমের মা বলেন, ছেলের জ্বর হয়েছে শুনেই রাজবাড়ি থেকে চলে এসেছি। তারপর থেকে গত ৫ দিন ধরে এই হাসপাতালেই রয়েছি। এখানেই থাকা-খাওয়া আর ছেলের পাশে মেঝেতে ঘুমানো। তারপরও ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় অত্যন্ত খুশি আমি।

হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, এখন কারো একদিন জ্বর হলেই সেও ডেঙ্গু আতঙ্কে হাসপাতালে চলে আসছে। এটা এক ধরনের সচেতনতার সিম্বল। তিনি বলেন, যারা হাসপাতালে আসছেন আমরা কাউকে ফেরাচ্ছি না। বিছানা না থাকলেও যেভাবেই হোক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসা দিচ্ছি।

চিকিৎসক সানজিদা আইরিন বলেন, এবার বর্ষা মৌসুমটা একটু আগে ভাগে শুরু হওয়ায় গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকেই আমরা ডেঙ্গু রোগী পেতে শুরু করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হবে।

এইচএস/বিএস 
 

আরও পড়ুন