• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৮:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৫, ২০১৯, ০৮:৩৮ এএম

ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন হাসপাতাল কর্মীরা

মুগদা হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়

মুগদা হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়
মুগদা হাসপাতালে বেড না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে আশ্রয় পেয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা; ছবি- দৈনিক জাগরণ


রাজধানীর খিলগাঁও শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা রেহানার ১১ মাসের শিশুকন্যা জিম। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি। সরেজমিনে গিয়ে এমন অনেক শিশুই দেখা গেল ওই হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উপচে পরা।

হাসপাতালে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক জানান, ওই হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সসহ অন্তত ২০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ৬ জন রোগী ডেঙ্গুতে অক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা দেরিতে আসছেন তারা খারাপের দিকে যাচ্ছেন, আর যারা দ্রুত আসছেন তারা ভালোর দিকে যাচ্ছেন। এমন তথ্যই জানাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কয়েকজন রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশী। রোগীর একটা বড় অংশ হাসপাতালের বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।       

রেহানা জানালেন, রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে ডাক্তাররা ভর্তিই করাইতে চায় না। উনারা বলে জায়গা নেই। কিন্তু অনেক কান্নাকাটি করে আমি আমার মেয়েটাকে ভর্তি করাইছি। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে রেহানা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা মশার ওষুধ দেয় না, এ জন্যই তো এই ডেঙ্গু হইছে। রেহানার শিশুটির ঠিক পাশে ভর্তি হয়েছে ৯ বছরের শিশু মিনহাজ। মিনহাজের বাবাও জানালেন, হাসপাতালে এত রোগী যে ভর্তিই করাইতে চায় না।    

রবিবার দুপুরে দায়িত্বরত মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, এখানে চিকিৎসা হচ্ছে, তবে ডাক্তার, নার্স টেকনিশিয়ারসহ সব দিক থেকেই লোকবলের অপ্রতুলতা রয়েছে। তারপরও স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় কিছু কিছু চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, কলেজে যারা ছিল ডাক্তার তারাও এখন এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এখনও আমাদের ডাক্তারের সংকট রয়েছে। নার্সরাও অনেকে অসুস্থ হয়েছেন ফলে তাদেরও পাওয়া যাচ্ছে না। এই হাসপাতালের অনেক স্টাফ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ডাক্তারদের মধ্যেও ৫ থেকে ৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাদের মধ্যে ৩ জন কনফার্ম ডেঙ্গু, বাকিদের রিপোর্ট এখনও আসে নি। তাদেরও ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভানা আছে। ক্লিনিক্যালি মনে হচ্ছে এটা ডেঙ্গু। ফলে লোকবলও কমে যাচ্ছে। এমনিতেই ক্রাইসিস তার উপরে স্টাফরা নিজেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। 

কতজন স্টাফ আক্রান্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদম নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না তবে ১০ থেকে ১৫ জন নার্স, ৫ জন ডাক্তার এখন পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রোগীদের সংখ্যা এখনও উপচে পড়া জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মেডিসিন বিভাগে রোগীর নির্দিষ্ট বেড হচ্ছে ৬০। তার মধ্যে গত কয়েক দিনে সব সময় ৩’শ এর অধিক ডেঙ্গু রোগী থাকছে। শনিবার রাতেই ৮৬জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৬ জন মারা গিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এদের (রোগীদের) বড় অংশই খারাপ অবস্থায় থাকার পর এখানে এসে ভর্তি হয়েছে। আমাদের ওয়ার্ডে থাকা অবস্থায় খারাপ হয়েছে ২ জন রোগী। এ ছাড়া আইসিইউ’তে ২ জন রোগীর খারাপ অবস্থা। আর ১জন রোগী এখানে ভর্তিই হয়েছে অনেক দেরি করে। 

মঞ্জুরুল হক জানান, যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেরিতে আসছে তাদের অবস্থাই বেশি খারাপ হচ্ছে, কিন্তু যারা আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত চলে আসছেন তারা ভাল হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমি বলবো লোকজন যেন আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে শুরুতেই জ্বর হলেই যেন ডেঙ্গু কিনা সেটা চেক করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়। সে ক্ষেত্রে বাসাতেও থাকা সম্ভব, কিন্তু কে বাসায় থাকবে, কে ভর্তি হবে এটা জানতে হবে। অনেকে জ্বর সেরে গেলে মনে করে আমি ভাল হয়ে গেছি কোন সমস্যা হবে না কিন্তু জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরেও ডেঙ্গুর সমস্যা থেকে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি হয়।  

তিনি আরও জানান, এখনও রোগীর সংখ্যা খুব একটা কমেনি, আগে যে হারে আসছিলো এখন সেই হারেই আসছে। বর্ষাকালের সময়টুকু এটা কমার সম্ভাবনা কম। বৃষ্টি হওয়া মানেই বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে পানি জমা। ফলে এডিস মশার লর্ভার সৃষ্টি হবে ও মশা তৈরি হবে।

মুগদা হাসপাতালে কর্তব্যরত একজন কর্মকর্তা জানালেন, রবিবার সকালে থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩৭ জন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত ৪৪৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে ৬ জন মারা গিয়েছে। হাসতালের অপর এক কর্মকর্তা জানান, পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে কর্তৃপক্ষ আর জায়গা দিতে পারছেন না। 

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে একটি বড় অংশ শিশুরা। কয়েকজন শিশুর মায়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জানা গেল, কিভাবে ডেঙ্গু হয়েছে তারা বলতে পারেন না। তবে তাদের অনেকেই মনে করেন স্কুলেই এই মশায় তারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাদের ধারণা। 
অধিকাংশ শিশুই মেঝেতে অবস্থান করছেন। তাদের বেশিভাগকেই মশারি দেওয়া নেই। কেন মশারি দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে কয়েকজন রোগীর সঙ্গে আসা স্বজন জানালেন, বেড না পেলে মশারি দিচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে অনেকেই নিজে থেকে মশারি কিনে এনেছেন বলেও জানালেন।  

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের একজন স্টাফ জানালেন, তার ভাগনি (বোনের মেয়ে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাকে ভর্তি করানো হয়েছে। তিনি আরও জানালেন, তার ভাগনি যে হোস্টেলে থাকে সেখানকার অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

এএইচএস/আরআই

 


   
 

আরও পড়ুন