বিরল রোগ ‘ট্রি ম্যান’ সিনড্রোমে আক্রান্ত আবুল বাজনাদার আবার ফিরে এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।
যিনি গত বছরের ২৭ মে এ হাসপাতাল ছেড়ে যান কাউকে কিছু না জানিয়েই।ঢামেক কর্তৃপক্ষ আবুলের কাগজপত্রে তাকে ফেরারি হিসেবে দেখায়।
রোববার (২০ জানুয়ারি) সকালে খুলনা থেকে আবুল ঢামেকে আসেন। এসময় তিনি চিকিৎসকদের কাছে ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন দৈনিক জাগরণকে জানান, আবুলকে রিসিভ করা হয়েছে, ভর্তি করা হয়েছে। তার বিষয়ে খুব যত্নসহ কাজ করা হবে।
ঢামেক থেকে চলে যাবার পর তার হাত-পাসহ দেহের বিভিন্নস্থানে শেকড় সদৃশ বস্তু বড় হতে থাকে। অসহ্য জ্বালাপোড়া, স্বাভাবিক জীবন যাপনে তীব্র বাধার সঙ্গে ভয়-হতাশা-আফসোসে দিন যাচ্ছিলো তার।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অবস্থান করে প্রায় আড়াই বছর একটানা চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন আবুল। তখন ভূমিহীন ২৮ বছর বয়সী আবুলকে পাইকগাছায় কিছু জায়গা কিনে দান করেন প্রখ্যাত চর্মবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। সেই জায়গায় নির্মাণ করা বাড়িতে মা-বাবা, স্ত্রী-একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে বাস করেন আবুল।
২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢামেকে ভর্তির পর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, আবুল ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত। রোগটি ‘ট্রি-ম্যান’ (বৃক্ষমানব) সিনড্রম নামে অধিক পরিচিত।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর ছোট-বড় ২৩টিরও বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে আবুলের দুই হাত ও দুই পায়ে। সর্বশেষ অস্ত্রোপচার হয় গত বছরের ২৭ জুলাই।
চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী- ট্রি-ম্যান সিনড্রোমের কোনো চিকিৎসা নেই। এটা জিনঘটিত রোগ। আবুলের আগে পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত মাত্র তিনজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৭ সালের মার্চে রোমানিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় কৃষক আয়ন তোয়াদের। পৃথিবীতে সন্ধান পাওয়া প্রথম বৃক্ষ মানব তিনি। রেডিয়েশন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৩ সালের শেষ দিকে তার দেহে অস্ত্রপচার করা হয়। ধারণা করা হয়,পরে ক্যান্সার সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন আয়ন। তিনি জীবিত নেই।
২০০৭ সালের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় সন্ধান পাওয়া যায় ৩৪ বছরের দেদে কসওয়ারার। ২০০৮ সালে অস্ত্রপচারের পর তার দেহ থেকে অপসারণ করা হয় ছয় কেজি ওজনের আঁচিল। বিরল সেই অস্ত্রোপচার নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে ডিসকভারি চ্যানেল। পরে অবশ্য দেদের শরীরে ফিরে আসতে থাকে রোগের লক্ষণগুলো। চিকিৎসকরা তাকে বছরে দুইবার করে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি সেই চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনিও জীবিত নেই।
২০০৯ সালে ডিসকভারি চ্যানেল ‘ট্রিম্যান মিটস ট্রিম্যান’ শিরোনামে আরেক অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার আরেক ব্যক্তিকে হাজির করে। দেদে কসওয়ারার এলাকায় সন্ধান পাওয়া ওই ব্যক্তি চিকিৎসার পর এখন অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে।
আরএম/বিএস