• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৬, ২০১৯, ০২:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৬, ২০১৯, ০২:১৩ পিএম

চার মাসেও রাকসু নিয়ে কমিটির সংলাপ শেষ হয়নি!

চার মাসেও রাকসু নিয়ে কমিটির সংলাপ শেষ হয়নি!

দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে না হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন আলোর মুখ দেখতে থাকে এ বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে রাকসু সংলাপের জন্য আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে। যারা রাকসু নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করে নির্বাচন দেবে। তবে সংলাপ চলছে ঠিকই কিন্তু ধীরগতিতে। জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সংলাপের কার্যক্রম ৪ মাসেও শেষ করতে পারেনি সংলাপ কমিটি।

এখন পর্যন্ত মোট ১২টি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ও ৯টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ করেছে প্রশাসন। তবে আরও চারটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে রাকসু নিয়ে আলোচনা হবে। সংলাপ যদি এভাবেই চলতেই থাকে তাহলে রাকসু নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে।

রাকসু সংলাপ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানকে আহবায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই থেকে কমিটি গঠনের পর এ পর্যন্ত ১২টি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন এবং ৯টি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ করা হয়। এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, ১৭ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, ২৫ ফেব্রুয়ারি ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করে। 

অন্যদিকে ৪ মার্চ ছাত্র মুক্তিজোট ও জাতীয় ছাত্রসমাজ, ৫ মার্চ ছাত্র ইউনিয়ন, ১২ মার্চ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ২৪ মার্চ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে সংলাপ কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসে। এ ছাড়া ৪ এপ্রিল অরাজনৈতক সংগঠন স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন ও ক্যারিয়ার ক্লাব, ১৭ এপ্রিল হায়ার স্ট্যাডি ক্লাব, ওয়ার্ল্ড লিংকআপ, ২৫ এপ্রিল পাঠক ফোরাম ও আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, এ ছাড়াও ২৯ এপ্রিল স্বপ্ন মনোবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রথম আলো বন্ধুসভার সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। ফলে রাকসু নিয়ে শুধু সংলাপই শেষ করতে সময় লাগছে ৫ মাস। তাই এমন ধীর নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, এসব সংলাপে রাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সংলাপ কমিটির নিকট রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত, সর্বদলীয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে পরিবেশ পরিষদ গঠন, ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সর্বদলীয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী নির্বাচন কমিশন গঠন, একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রচার, নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রণয়ন, ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ বিচরণের সুযোগ, ভোট ও ফলাফল প্রকাশের সময় সকল সাংবাদিকদের সংবাদ প্রচারে কোনো প্রকার বাধা প্রদান না করা, কার্যকরী ছাত্র সংসদ গঠন করতে রাকসু সভাপতি ও কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন, সর্বদলীয় নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল গঠন করা এবং স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করার সুযোগ প্রদানসহ কোনো বিশেষ ছাত্র সংগঠনকে নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা প্রদান না করার বিষয়টি সংলাপে আলোচনা করেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকমীরা।
তবে রাকসু সংলাপ এমন ধীরগতির বিষয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ফিদেল মুনির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসু নিয়ে যেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেটা অনেক ধীরগতি। দ্রুত সংলাপ শেষ করে তফসিল ঘোষণা ও রাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানান। এছাড়াও ক্যাম্পাসের নিয়মিত ছাত্র যেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেটা খেয়াল রাখার দাবি জানান তিনি।
 
শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, রাকসু নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য সংলাপের নামে দেরি করা হচ্ছে। আর ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে দাবি নেওয়া হচ্ছে। এটা কতটুকু পূরণ করবে এটা দেখার বিষয়। ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করে রাকসু দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবি জানান তিনি।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমরাও চাই দ্রুত রাকসু নির্বাচন হোক। কেননা এখনই রাকসু নির্বাচনের সময়। তাই দ্রুত সংলাপ শেষ করে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান তিনি। 

এ বিষয়ে সংলাপ কমিটির আহবায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান জানান, আরও দুইটি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তাছাড়া কোন ছাত্র সংগঠনকে প্রয়োজনে আবারও ডাকা হতে পারে। তারপর সবকিছু পর্যালোচনা করে রাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

কেএসটি