• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০১৯, ০৫:৪৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৯, ২০১৯, ০৫:৪৭ পিএম

সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি 

ভিসা প্রসেসিং নিয়ে বায়রার দুপক্ষ মুখোমুখি 

ভিসা প্রসেসিং নিয়ে বায়রার দুপক্ষ মুখোমুখি 
বায়রা ভবন প্রাঙ্গণে সৌদি শ্রমবাজার রক্ষা পরিষদের মানববন্ধন - ছবি জাগরণ

দেশের প্রধান বৈদেশিক শ্রমবাজার সৌদিআরবে জনশক্তি রপ্তানিতে এ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে শুরু হয়েছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। একটি পক্ষ সৌদি সরকারের বেঁধে দেয়া শর্তসাপেক্ষে জনশক্তি রপ্তানিতে একমত হয়েছেন। পাশাপাশি আরেকপক্ষ এর বিরোধিতায় উঠেপড়ে লেগেছেন। দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে শেষমেষ এই বাজার ফের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

আজ শনিবার (২৯ জুন) বিবদমান দুপক্ষই রাজধানীতে পৃথক পৃথক স্থানে সমাবেশ করেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ‘ড্রপবক্স সিন্ডিকেট নির্মূল কমিটি’র ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট একটি পক্ষ। কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল আলীম বলেন, সৌদি সরকার তাদের ভিসা প্রসেসিং এর কাজ সরাসরি বায়রাকে দেয়া যেতে পারে। তবে কোনো চার্জ বা ফি ধরা যাবে না। কারণ একজন বিদেশগামী বিদেশ যাওয়ার আগেই ১০০ টাকা করে বায়রার কল্যাণ তহবিলে জমা করে যায়। এসময় আরো বক্তৃতা করেন কমিটির সদস্য সচিব কে এম মোবারক উল্ল্যাহ শিমুল, সমন্বয়ক ফজলুল মতিন তৌহিদ প্রমুখ।

অন্যদিকে রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশর অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের সামনে সৌদি শ্রমবাজার রক্ষা পরিষদ এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালার বিরোধিতাকারীদের দেশের শত্রু আখ্যায়িত করে আয়োজকরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের প্রতিহতের ঘোষণা দেন। পরিষদের আহ্বায়ক ও সান ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী এবিএম শামসুল আলম কাজল বলেন, একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য এই বৃহৎ শ্রম বাজারটি বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সৌদি বাজারটি আবারও উন্মুক্ত হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে এই পর্যন্ত এই দেশটিতে প্রায় ৩৮ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে যার মধ্যে গত দুই বছরে অন্তত ৩ লাখ ৮১ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক একটি চক্রের নজর এখন এই বাজার ওপর। কোনোভাবে এই শ্রম বাজারটি হাতছাড়া করাতে পারলেই সরকারকে অর্থনৈতিক চাপ ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা এদের মূল লক্ষ্য। 
 
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি দূতাবাস গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে তারা সৌদি ভিসা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। বিস্ময়কর হলো, নিয়োগকারী দেশের এই পদক্ষেপকে তারা ‘সিন্ডিকেট’ বলে প্রচার দিচ্ছে। আপনারা জানেন, সৌদি দূতাবাস তাদের নবনির্মিত মূল কার্যালয় বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায়  স্থানান্তর করতে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্য দেশের মতো ওই দেশের সরকার নিরাপত্তা ইস্যুকে সর্বাধিক  গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে। তাই বর্তমানে যুক্তরাজ্য, কাতার, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তাদের ভিসা সার্ভিসটি আউট সোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে প্রদান করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি দূতাবাস বর্তমান পদ্ধতিতে চলমান ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম তাদের নতুন কার্যালয়ে পরিচালনার বিষয়টি পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অভিবাসী কর্মীদের ভিসার কার্যক্রম ‘সৌদি ভিসা সেন্টার’ এর মাধ্যমে আউট সোর্সিং কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই ভিসা সেন্টারের মূল কাজ হলো শুধু অভিবাসী কর্মীদের ভিসা স্টিকার সৌদি দূতাবাস থেকে প্রসেস করা। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হলো, সৌদি দূতাবাসের ঐ ভিসা সেন্টারকে উল্লেখিত চিহ্নিত কূচক্রী মহলটি সিন্ডিকেট হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। 

বক্তারা আরো বলেন, গত ২২ জুন বায়রার তত্ত্বাবধানে ‘সৌদি ভিসা সেন্টার’ বিষয়ক একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে সৌদি দূতাবাসের কন্স্যুলার ইবধাহীম আলি আল হুমাইধির সঙ্গে সৌদি ভিসা সেন্টারের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এসময় তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, নিরাপত্তা বিষয়টিকে মাথায় রেখেই সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবেচনায় বাংলাদেশে তার সরকার দুটি ভিসা সেন্টারের অনুমোদন দিয়েছে। এর মাধ্যমে ভিসা স্টিকার প্রাপ্তির জন্য চলমান পদ্ধতিতে দৈনিক ৩০টি পাসপোর্ট জমা দেয়ার বদলে যেকোনো সংখ্যক পাসপোর্ট স্টিকার স্ট্যাম্পিং করার জন্য জমা দিতে পারবেন দুদিনের পরিবর্তে সব কর্মদিবসে।  

সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সৌদি শ্রমবাজার রক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম রবিন বলেন, ভিসা সেন্টার চালু হলে সৌদি দূতাবাসে অনিবন্ধিত প্রায় চার শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সিকে নতুন করে নিবন্ধিত করার আশ্বাস পাওয়া গেছে।  শুধু তাই নয়, ভিসা স্টিকারের আবেদনের সময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংযোজন পদ্ধতি থাকছে না। 

তিনি বলেন, এনজাজ, মুসানেদ সিস্টেমসহ সকল ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড আগের মতোই পরিচালিত হবে। শুধু ভিসা স্টিকারের প্রসেসটি ‘সৌদি ভিসা সেন্টার’এর মাধ্যমে প্রক্রিয়া করা হবে এবং দূতাবাসের অনুরোধে সৌদি ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব বায়রার সভাপতিকে দেয়া হয়েছে।

টিএইচ/ এফসি

আরও পড়ুন