ক্যান্সার  

চিকিৎসক দরকার ১৬০০, আছেন ১৫০

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৯, ০৯:৫৮ পিএম চিকিৎসক দরকার ১৬০০, আছেন ১৫০

বি শে ষ প্র তি বে দ ন

.......................

● প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্ত ১ লাখ ২২ হাজার মানুষ

● নাজুক পর্যায়ে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা

● চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি

জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশে কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০ ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ থাকা প্রয়োজন। সেখানে আছেন প্রায় দেড়শতাধিক। বিশেষজ্ঞ স্বল্পতা এবং সীমিত চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই থেকে যান সেবার বাইরে।

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) হিসাবমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ২২ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৯১ হাজার। আরেক জরিপ বলছে, অনুমিত ক্যান্সার রোগীদের এক-তৃতীয়াংশের মতো দেশের স্বীকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থার আওতায় আসে। বাকিদের একটা অংশ বিদেশে চিকিৎসা নেয় কিংবা নানা অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থার আশ্রয় নিয়ে থাকে। তবে বিপুলসংখ্যক রোগী ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসাসেবার বাইরে থেকে যায়। 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্সার নির্ণয়ের এক বছরের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ রোগী হয় মারা যায় কিংবা ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। 

বাংলাদেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য- দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অনেক নাজুক পর্যায়ে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য কমপক্ষে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল বা ক্যান্সার ইউনিট থাকা প্রয়োজন। সেই হিসাবে দেশে ১৬০টি ক্যান্সার হাসপাতাল বা ইউনিট থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আছে মাত্র ১৮টি। এ সব ইউনিটে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বেশিরভাগ সময় অকার্যকরই থাকে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে নেই রেডিওথেরাপি মেশিন, নেই সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দু-একটিতে অত্যাধুনিক কিছু যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী জানান, একটি ক্যান্সার ইউনিট চালাতে অন্তত ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন। সেই হিসাবে দেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন ১ হাজার ৬০০ জন। কিন্তু বর্তমানে আছেন মাত্র ১৫০’র কিছু বেশি।

ঢাকার মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫০ থেকে ৩০০-তে উন্নীত করা হয়েছে। রেডিওথেরাপির আধুনিক যন্ত্রপাতিও আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিওথেরাপির সর্বাধুনিক লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন সংযুক্ত হয়েছে। তবে দেশের বড় ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সবগুলোতে আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠে নি। অন্যদিকে বেসরকারিখাতে কয়েকটি বড় হাসপাতালে রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সার চিকিৎসা চালু হলেও তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

একমাত্র জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কোনও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে নি। এখন পর্যন্ত ক্যান্সার চিকিৎসা রাজধানীকেন্দ্রিক। তাই সরকারি খাতে চিকিৎসার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। সামর্থ্য না থাকলেও বাধ্য হয়ে বিদেশে কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি। অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা সুবিধা অতি কেন্দ্রীভূত হওয়ায় রোগ ধরা পড়ে দেরিতে। অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় সবার পক্ষে চিকিৎসা নেয়াও সম্ভব হয় না।

দেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এমিনেন্স’র তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১ কোটি ২ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। যার মধ্যে ৭৮ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও এ রোগের ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। ২০১০ সালের এক সমীক্ষা অনুসারে, বছরে প্রতি ৫ জন বাংলাদেশি নারীর মধ্যে একজন ক্যান্সারে মারা যায়। দেশে এই রোগের প্রকোপ নিরূপণে যথেষ্ট গবেষণা না থাকলেও সাধারণ হিসেবে প্রতি ২৫ জনের মধ্যে একজন যে কোনও ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়।

আরএম/এসএমএম

আরও সংবাদ