• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০১৯, ০১:২৭ পিএম

অটোরিকশা ও মিশুকের দখলে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর

অটোরিকশা ও মিশুকের দখলে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর

 

মুন্সীগঞ্জ জেলার শহর ও শহরতলির সর্বত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকসহ ইঞ্জিন চালিত নসিমন-করিমন নামের যানবাহন। 

জেলা শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো লাইসেন্স ছাড়া কাউকেই তোয়াক্কা না করে দিব্বি জেলা শহরগুলোকে দখল করে রেখেছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক।
 
জেলা শহরের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে গড়ে উঠেছে ইঞ্জিন চালিত নসিমন, করিমন ও ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান ও মিশুক। শুধুমাত্র মুন্সীগঞ্জ ও মীরকাদিম পৌরসভাতেই এসব অবৈধ যানবাহন তৈরির প্রায় ৫ শতাধিক উপরে অবৈধ কারখানা, অটোগাড়ি রাখা ও ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার গ্যারেজ রয়েছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে এই সমস্ত অবৈধ গ্যারেজ-কারখানায় নসিমন, করিমন, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকের রমরমা ব্যবসা। মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এসকল কারখানার মালিক হয়ে রাতারাতি বিপুল অর্থের মালিক বনে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু শহরেই নয় মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলাসহ ৬টি উপজেলায় শহস্রাধিক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক বেপোরোয়াভাবে চলাচল করছে। আর এভাবে চলাচলের কারণে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা রাস্তা পাড় হতে গিয়ে প্রতিদিন নানা ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। 

জেলার সচেতন মহল ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবি, এসব কারখানাগুলোকে চিহিৃত করে জেলা প্রশাসনের তদারকিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করাসহ কারখানা মালিকদের জেল জরিমানা ব্যবস্থা করা উচিৎ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় শহরের উত্তর ইসলামপুরে রয়েছে অর্ধশতাধিক গ্যারেজ, দক্ষিণ ইসলামপুরেও তাই। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে প্রকাশ্যে রয়েছে ২০টি অটো তৈরি কারখানা।
মীরকাদিম পৌরসভার সিপাহিপাড়া, গোয়ালঘুন্নিসহ গোটা জেলার এলাকায় রয়েছে প্রায় শহস্রাধিক অটোরিকশা, মিশুকের ওয়ার্কসপসহ অনেক ছোট-বড় বেশ কয়েকটি অবৈধ স্যালো ইঞ্জিন চালিত কারখানা। এসকল কারখানায় সরকারি কোনো অনুমতি ছাড়াই দিনরাত চলেছে ইঞ্জিন ভ্যান তৈরির কাজ। 

এদিকে, প্রতিদিন রাতে চলে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুকের অবৈধভাবে বিদ্যুতের চার্জ।

মূলত জেলা শহরের পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ও পল্লী বিদ্যুতের হেড অফিসের স্থানীয় এলাকার প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। 
এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ পল্লি বিদ্যুতের সদর জোনাল অফিসের ডিজিএম শফিউল আলম বিদ্যুতের এসব অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা একটি চৌকস সার্চ কমিটির মাধ্যমে এর তদারকি করছি। আশা করি অচিরেই বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগকারিদের হাতে নাতে ধরে আইনের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে।

মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোহাম্মদ মোবরক উল্লাহ জানান, জেলার শহস্রাধিক ব্যাটারি চালিত অটোগাড়ি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চার্জ করছে তা আমি ব্যক্তিগতভাবে অবগত। এবং এতে আমাদের বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি মাসোয়ারা নিয়ে লাখোপতি বনে যাচ্ছে সে বিষয়ে সেসব অসাধু গ্যারেজ মালিক ও বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের তাদের হাতে নাতে ধরতে আমরা সিভিলে লোক নিয়োগ করেছি। এ ব্যাপারে কেউ রক্ষা পাবে না।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব জানান, ব্যটারি চালিত এসব অটোগাড়ি ও মিশুকের কারণে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরসহ সাধারণ মানুষ এখন রাস্তায় বের হতে ভয় পায়। কারণ প্রতিদিনই এসব অটোগাড়ি দিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন তারা। আমি পৌর মেয়র হয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ও জেলা পুলিশ সুপারসহ গণ্যমান্য সুশীল সমাজের মানুষকে নিয়ে দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। 

এ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার ভূমি মুনতাসির জাহান বলেন, মুন্সীগঞ্জের সর্বত্র এখন ব্যটারি চালিত অটোরিকশা, ইঞ্জিন চালিত থ্রি-হুইলার কোন যানবাহন মহাসড়কে চলার কোন অনুমতি নেই। এগুলো এভাবে তৈরি করার কোন নিয়ম নেই। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ এর বিরুদ্ধে অবশ্যই মোবাইল কোর্ট মাধ্যমে আমাদের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

কেএসটি