• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০১৯, ০৯:১৩ পিএম

জাবিতে ৩০বছর ধরে চাকরি করে বেতন ৮হাজার!

জাবিতে ৩০বছর ধরে চাকরি করে বেতন ৮হাজার!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় - ফাইল ছবি


 

আবুল খায়ের। ৩০বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আল বেরুনী হলের ডাইনিংয়ে কাজ করছেন। বেতন পান ৮হাজার ৪শত ৮০টাকা। তারপরও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কর্মচারী নন। বর্তমানে তার মতো ৯৭জন কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ডায়নিংয়ে কাজ করছেন। তাদের কারো চাকরিই স্থায়ী নয়।

বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনের এসব কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে হলের সিকবয় ও বাবুর্চিদের চাকরি স্থায়ী করে প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে ডাইনিং কর্মচারীদেরও স্থায়ী করা হবে বলে প্রশাসন আশ্বাস দেয়। প্রশাসনের কাছে বারবার চাপ দেওয়ার পরও সে আশ্বাস বাস্তবায়ন করেনি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার রাধুনী হিসেবে কাজ করেন রোকেয়া বেগম (৬০)। তিনি ৩৫ বছর ধরে সেখানে কাজ করেন। তার সাথে মোট ২১জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিলো সবার চাকরি স্থায়ী করা হবে। কিন্তু দায়িত্বরত শিক্ষকদের আস্থাভাজনদের বিভিন্ন সময়ে চাকরি স্থায়ী করা হলেও তার চাকরি এখনো স্থায়ী হয়নি।

রোকেয়া বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। কিন্তু যে বেতন দেয় তা দিয়ে সংসার চলে না। আর এখন চাকরি থেকে বিদায় নিলে কোন ভাতাও পাবো না। এসব বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

এছাড়া মেয়েদের হলের ডাইনিং কর্মাচরীরা অভিযোগ করে বলেন, চাকরি স্থায়ী করণের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় নিজেদের বাসার কাজে তাদেরকে ব্যবহার করেন। প্রতি সপ্তাহে তাদের বাসায় গিয়ে রান্নাসহ গৃহস্থালির কাজ করতে হয়।

এছাড়াও প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক কৌশিক সাহা, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ফারুক আহমেদ, ওয়ার্ডেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সোহায়েলসহ একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাসায় কাজ করানোর অভিযোগ তোলেন কর্মচারীরা।

আবুল কাশেম নামে এক ডাইনিং কর্মচারী বলেন, নতুন হল চালু হলে সেখানে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৮০শতাংশ অস্থায়ী কর্মচারীদের চাকরি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও সে নিয়ম মানা হচ্ছে না। সেই পদগুলোতে নতুন নিয়োগ দিচ্ছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হলগুলোতে ডাইনিং কর্মচারীদের মধ্য থেকে ৫-৭জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে সবাই কোন না কোন শিক্ষকের আস্থাভাজন এবং দীর্ঘদিন ধরে সেই শিক্ষকের বাসায় কাজ করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অস্থায়ী ডাইনিং হল কর্মচারী সমিতির সভাপতি মনির হোসেন বলেন, শ্রম আইনে উল্লেখ আছে, ছয় মাস কাজ করলে একজন কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী হয়। কিন্তু অনেক কর্মচারী প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। এখানে ৪৮০০ টাকা বেতনে অস্থায়ী ভাবে চাকরি করেন অনেকে। এই বেতন তামাশার নামমাত্র। এছাড়া ডাইনিংয়ে ভর্তুকি কম থাকায় খাবারের মান খারাপ হয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বাইরে খেতে বাধ্য হন। দিন দিন ডাইনিংগুলো অচল হয়ে যাচ্ছে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দুই দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। দাবি দুটি হলো- ডাইনিং হল কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ ও খাবারের মান বাড়াতে ভর্তুকি প্রদান। স্মারকলিপিতে তাদের স্থায়ীকারণের পক্ষে সাড়ে তিনহাজার শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষর যুক্ত করেন তারা। তাদের এ দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফ্রন্ট।

একাত্মতা পোষণ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, তাদের দাবি যৌক্তিক। তারা অধিক শ্রম দিয়ে কম বেতনে চাকরি করে মানবেতর জীবন-যাপন করেন। তাই তাদের দাবি মানতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, হলের ডাইনিং কর্মচারীরা একটা স্মারকলিপি দিয়েছে শুনেছি। কিন্তু এখনো হাতে পাইনি। একসাথে তাদের চাকুরি স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত কখনোই নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে স্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা শিথিল করে তাদেরকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়।’

এএ/টিএফ