• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০১৯, ০৯:৩৫ এএম

স্বাস্থ্য ঝুঁকি

জাবি’র রেস্তোরাঁগুলোতে পঁচা-বাসি খাবার

জাবি’র রেস্তোরাঁগুলোতে পঁচা-বাসি খাবার

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে পঁচা ও বাসি খাবার। যা খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময় এসব হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের জরিমানা করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না অনিয়ম।

এদিকে ক্যাম্পাসের বটতলা এলাকায় গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ। যেগুলোতে প্রতিদিন খাবার খাচ্ছেন হাজারো শিক্ষার্থী। কিন্তু তারা কি খাচ্ছেন তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

সরেজমিনে দেখা যায়, উঁচু বটতলা থেকে শুরু করে নিচু বটতলা পর্যন্ত রেস্তোরাঁগুলোর অপরিস্কার রান্নাঘরে চলছে রান্না-বান্না। ময়লা পানিতে পরিস্কার করা হচ্ছে খাবারের প্লেট ও গ্লাস। তার উপর রান্না করা খাবারের ওপর বসছে মাছি। পড়ছে ধুলাবালি ও ময়লা-আর্বজনা। এদিকে দিনের পর দিন রান্না করা অবিক্রিত খাবার ফ্রিজে রেখে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করছে দোকানদাররা। জমিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকদিনের রান্না করা পুরানো মাছ-মাংস। যেগুলো প্রায় পঁচে গেছে। এসব মাছ-মাংস শুকিয়ে পরবর্তীতে বিক্রি করা হচ্ছে ভর্তা হিসেবে। রান্নার জন্য যে তেল ব্যবহার করা হচ্ছে তাতেও রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। মাছ, ডিম, পিয়াজু ভাজা হচ্ছে অনেক দিনের পোড়া তেলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহ গোলাম কিবরিয়া পলাশ জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কয়েকদিনের পঁচা ও বাসি খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। যার কোনো মান নেই। এতে করে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মমিনুর রহমান লাজু জানান, রেস্তোরাঁগুলোতে অপরিস্কার জায়গায় রান্না করা হয়। বটতলায় খোলা ও পোড়া তেলের রান্না খাওয়ায় গ্যাসের সমস্যায় ভুগছি। তাছাড়া প্রায় পেট ও বুক ব্যথা করে। যেসব খাবার খাই তার কোনো মান নেই। এদিকে বাংলার স্বাদ অ্যান্ড রেঁস্তোরা, উঁচু বটতলার সালামের দোকান, রাজ্জাকের দোকান, নানার দোকান এবং নিচু বটতলার শান্তসহ আরো কয়েকটি দোকানের বিরুদ্ধে পঁচা খাবারের পাশাপাশি বাসি গ্রিল বিক্রির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বটতলায় যে কয়েকটি দোকানে গ্রিল বিক্রি হয় তার মধ্যে নূরজাহান রেস্টুরেন্ট অন্যতম।

নূরজাহান রেস্টুরেন্টের দোকানদার ফরমান আলী জানান, দোকানে পঁচা ও বাসি খাবার রাখি না। যা বিক্রি হয় করি। বিক্রি না হলে খাবার ফেলে দেই। কিন্তু ওই দোকানে পঁচা-বাসি গ্রিল ও মাছ-মাংস ভর্তা বিক্রির প্রমাণ রয়েছে। যা দোকারদার ফরমান আলীকে দেখানো হলে তিনি অস্বীকার করেন। একই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলার স্বাদ অ্যান্ড রেঁস্তোরা, সালামের দোকান ও শান্তর দোকান মালিক বিষয়টি অস্বাকীর করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত এসব খাবার খেলে ভয়াবহ ক্রনিক রোগ হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেল্থ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহমান জানান, তেল জাতীয় খাবার খেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বমি, মাথাব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ক্যান্সার, আলসার, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা রোগ হতে পারে। অপরিস্কার পঁচা-বাসি ও চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

রেস্তোরাঁগুলোর তদারকির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আ.ফ.ম কামাল উদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ ফিরোজ উল হাসান, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. নাজমুল হাসান তালুকদার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ফরিদ আহমেদ জানান, অতিদ্রুত সব হোটেল-রেস্তোরাঁকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনাসহ পুরো বটতলা এলাকার হোটেলের খাবারের মান নিয়ে কাজ শুরু হবে। আমরা হোটেলের খাবারের মান ও পরিবেশ নিয়ে তৎপর রয়েছি। তবে এসব হোটেলে পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার পরিবেশন করা হয় না।

এসসি/