• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০, ১২:৫৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০, ১২:৫৭ এএম

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ২৬

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ২৬
সংগৃহীত ছবি

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ অবস্থায় আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে মারা যান শামীম হাসান। সকালে জুলহাস এবং আলী মাস্টার নামে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক (৬০) ও মুয়াজ্জিনসহ ২১ জন মারা গেছেন। সবমিলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৬ জনে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে বাকি ১৩ জন, যারা মৃত্যুর সাথে লড়ছেন তাদের সবার অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রত্যেকেরই শ্বাসনালি, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় তারা কেউ আশঙ্কামুক্ত নন। এদের মধ্যে ৩ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।

নিহত ২১ জনের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহ হস্তান্তরের পর গতরাতেই ১৪ জনকে দাফন করা হয় নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায়। বাকি দু’জনের দাফন হয়েছে তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়।

একসাথে ছয়টি এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- মোস্তফা কামাল (৩৪), নারায়ণগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রিফাত (১৮), গার্মেন্টকর্মী মো. রাসেদ (৩০), দুই সন্তানের জনক হুমায়ুন কবির (৭০), গার্মেন্টকর্মী ইব্রাহীম বিশ্বাস (৪৩), জুয়েল, সাব্বির (২১), মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও তার সন্তান জুনায়েদ (১৭), চাকরিজীবী মো. জামাল আবেদিন (৪০), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন (১২), জয়নাল (৫০), কাঞ্চন হাওলাদার, গার্মেন্টকর্মী নয়ন, ৭ বছরের শিশু জুবায়ের, ওয়ার্কশপ শ্রমিক রাসেল (৩৪) ও মো. বাহাউদ্দিন (৫৫), মো. মিজান (৪০), মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক নেসারি (৫৫), শামীম হাসান ও ফটো সাংবাদিক নাদিম হোসেন (৪৫)।

এসি বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে তিনি সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন এবং সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন।

দুর্ঘটনার পর মসজিদের ভেতরে মেলে বিস্ফোরণের সূত্রপাতের চিহ্ন। মসজিদ ভবনের নিচ দিয়ে গেছে তিতাস গ্যাসের লাইন। সেখানে থাকা ছিদ্র দিয়ে বেরুচ্ছে গ্যাস ও পানি। স্থানীয়রা জানালেন, বেশ কয়েকদিন ধরে নামাজ পড়ার সময় গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার ইমাম ও মসজিদ কমিটির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এর আগে শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌনে ৯টায় মসজিদের ভেতরে থাকা এসির বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা ৩০ থেকে ৪০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। তাদের অনেকেই দগ্ধ ও আহত ছিলেন।

রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) দগ্ধদের অবস্থার খোঁজখবর নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সে সময় আইসিইউতে থাকা ছয়জনসহ ১৩ জনের সবাইকে সারিয়ে তোলাই তাঁদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে বলে জানান মন্ত্রী। তার সঙ্গে ছিলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানও।

তিনি জানান, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার ও দগ্ধদের প্রত্যেকের পরিবারকে আপাতত ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। কারো চিকিৎসার জন্য যদি কোনো ওষুধ বা টাকা-পয়সার প্রয়োজন থাকে, তাহলে তাঁরা ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা নিতে পারবেন। 

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা আন্ত মন্ত্রণালয় সভা ডাকব। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে হতাহতদের পরিবারকে কী পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হবে। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেব।’ 

দগ্ধদের দেখতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে যান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

নারায়ণগঞ্জের মতো বড় শহরে ভালো চিকিৎসাসুবিধা না থাকায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট করছে। কিন্তু একটা কিছু হলেই এখনও ঢাকায় আসতে হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় বার্ন ইউনিট থাকতে হবে। এটা আইসিইউর চেয়েও বেশি দরকার। সব চিকিৎসককে পোড়া রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

জাগরণ/কেএপি

আরও পড়ুন